মৌটুসীকে নিয়ে লেখা পত্রকাব্য- ২
*******************************
সৈয়দ রনো
প্রিয় মৌটুসী,
বন্ধ্যা সময়ে চুপসে যাওয়া হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা নিও। সময়ের নিজস্ব গণ্ডি পেরুতে পারিনি বলে তোমার তিক্ত ভাষা তির্যক মন্তব্য আমাকে ব্যথিত করেছে। তবে নিরাশার বালুচরে আশার যে ফলবান বৃক্ষ তা পঁচে যাওয়া উদ্ভিদে রূপান্তরিত হোক মোটেই চাই না। মরুর বুকে ফুটুক না ভালোবাসার বসরাই গোলাপ। ক্যাকটাস গাছটি তোমার আমার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাক না দাঁড়িয়ে। একবারের জন্যে হলেও সাহিত্যের পাতা উল্টে দেখো অন্ধ হোমার এখনো জীবন্ত। আমি অন্ধ হলেও ইতিহাস বেত্তা নই বলে কথার ছলে না হয় দু’একটি কথা বলছি। তবে তোমার খুব একটা বিরক্তের কারণ হতে চাই না আর।
মৌটুসী,
তুমি বলেছো বহমান মনের নদীতে পলি মাটির উর্বর আস্তর জমে জমে গড়ে উঠা প্রতিটি মোহনায় শ্যাওলা জমেছে। তিন যুগের জমানো শ্যাওলায় গজিয়ে উঠা গুল্মলতা হয়েই তো এখনো তোমাকে আগলে রেখেছি। ভালো থেকো অনেক ভালো, মাঝে মাঝেই কলাগাছ তার খোলস পাল্টিয়ে হয় যৌবনা, ঠিক তেমনি তুমি আমৃত্যু টলমলে দেহ শৈষ্ঠব ধরে রাখবে সেই প্রত্যাশা করছি।
এক ঝাঁক তেল চিট চিটে তেলাপোকার সাথে আমার রাত্রিযাপন। ঘুম ভেঙ্গে দেখি কয়েকটি নেংটি ইঁদুর ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে আমার ডুবন্ত অহমবোধ।
আর তুমি বিদেশের শক্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে অবশ্যই ভালো আছ? নরম কাঁদা মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া জীবনের বাস্তবতা কি তুমি একেবাইে ভুলে গেছ? তুমি কি ভুলে গেছ তোমার শাড়ির আঁচলে চুমো খেত এক গাদা কাশফুল। আবার কখনো কখনো শাড়ির আঁচল এফোঁড় ওফোঁড় করত ছেনালী মুকুল। তোমার পায়ের নখের ডগায় খেলা করতো শিশির বিন্দু। আচ্ছা সকালের দূর্বা ঘাসে ভিজিয়ে রাখা পা এখন কি পুরো শুকিয়েছে। গুগলে তোমার বাহারি রঙের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
মৌটুসী,
ভাইবার অ্যাপসে পাঠানো তোমার খুদে বার্তা আমি পাঠ করেছি। শক্ত নরম লেখনি পাঠে আমি বুঝে উঠতে পারিনি তোমার বর্তমান পারিপার্শ্বিকতা। ভাষা শৈলীর উৎকর্ষতা বিশ্লেষণে মনে হলো দাম্ভিকতার সাথে দিন অতিবাহিত করছো এখন।
আমার চোখের জলের প্রবাহে গা না ভাসিয়ে তুমি অবলীলায় খেলতে পার ডুব সাতারের খেলা এটাই পত্রের মূল প্রতিপাদ্য।
প্রিয় মৌটুসী,
করোনাভাইরাস আতঙ্কের বিকট শব্দ মাথার মধ্যে ঘুরে। লকডাউনের বদলে অপেক্ষমান শাটডাউন। চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা সার্বক্ষণিক মাথার মগজে গোল্লাছুট খেলে। হয়তো মৃত্যু অপেক্ষমান। আজ আর তোমাকে বলতে দ্বিধা নেই। আমার সামান্য ভুলে তুমি আজো গাল ফুলিয়ে বসে আছ। জানো তো অভিমান লিমিটেশন অতিক্রম করলেই ঘৃণার জন্ম নেয়। যা তোমার মনের প্রশস্ত জমিনে দিন, মাস, বছর বছর ধরে চাষাবাদ করে চলছো। মেনে নিলাম আমার কোন কাজেই স্বার্থকতা নেই, তাই বলে কি আমার স্বাদ আহ্লাদ ছিকায় তুলে রাখবো। বিত্ত বৈভব পতিপত্তি সম্পদ সবার কপালে জোটে না বলেই কি তারা ভালোলাগা ভালোবাসার অনুভূতিহীন হয়ে যায়? অর্থ সম্পদের প্রয়োজনীয়তা আছে আমি মানছি কিন্তু অর্থই কি যোগ্যতার একমাত্র পরিচায়ক? কি বলতে গিয়ে কি উল্টাপাল্টা বকছি। আসলে পারিপার্শ্বিক চাপে মাথাটা ইদানিং ঠিকঠাক কাজ করে না।
মৌটুসী,
তুমি বলেছিলে অতিমাত্রায় আবেগী হলে বাস্তবতা পালিয়ে যায়। যৌবনের প্রারম্ভে এ কথাটি পুরো বিশ্বাস না করলেও এখন দেহের ঘাম শ্রম দিয়ে উপলব্ধি করছি।
ভাববাদ আর বস্তুবাদের দ্বান্দ্বিকতায় আমার অন্তর আত্মা এখন সক্রেটিস এর হেমলোকের পেয়ালা। জীবনানন্দ দাশ যেমন জীবন দিয়ে বুঝিয়েছেন আধুনিক কবিতার ভাবার্থ। আমিও অর্থ অভাবে না হয় বুঝিয়ে দেব খোলা বাজার অর্থনীতিতে জীবনের কোন মূল্য নেই। মানুষের চেয়ে পণ্যের মূল্য তোমাদের মত ভোগবাদীদের কাছে অনেক অনেক বেশি। টাকার বদলে মানুষ খুন হয়, বেরিয়ে আসে ফিনকি দিয়ে রক্ত। কাজে কাজেই টাকার মূল্য মানুষের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।
মৌটুসী,
ভুল বুঝবার যে ধারাপাত তুমি সূচনা করেছো তা তোমাকেই শুধরাতে হবে। চাঁদের হাটে নৈরাশ্যের যে আত্ম চিৎকার মাটিও কিন্তু কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। সব কিছু ভুলে যেতে চাই। ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে না হয় ক্ষত হৃদয় নিংড়িয়ে বের করে আনবো নৈবেদ্যের ফুল। সেই ফুলে রুষ্ট দেবতাকে তুষ্ট করতে না হয় পায়ে অঞ্জলি দিবো। আসমান হতে মাটিতে খসে পড়া তারা ভুলে যায় তার অস্তিত্ব ঠিক তেমনি তুমিও ভুলে যেও ইতিহাস পরিক্রমা। দুখিনী হৃদয়ের আত্ম চিৎকারে তুমি আর অতিষ্ঠ হবে না নিশ্চিত জেনে রেখো।
No comments:
Post a Comment
Thank u very much