স্মরণে কুষ্টিয়া
ফারজানা রহমান শর্মী
আমার জন্ম কুমারখালী দাদা বাড়ীতে কিন্তু বেড়ে ওঠার পুরোটাই কুষ্টিয়াতে।স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ের পুরোটাই কেটেছে কুষ্টিয়াই।আমাদের শৈশবের কুষ্টিয়া যে কী সুন্দর ছিল!মিশন স্কুলে পড়ার সময়টাতে আমাদের এক রিক্সাওয়ালা দাদু ছিলেন তার রিক্সাতেই আমি আর আমার বড় আপু একসাথে স্কুলে যেতাম।পুরো সবুজে ঢাকা ছিল কুষ্টিয়া তখন।যে দিকেই তাকানো যেত শুধু সবুজ আর সবুজ।আমাদের বাড়ির ছাদটাতে দাঁড়ালে মনে হতো মাথা উঁচু করে থাকা নারকেল গাছগুলো একটা সবুজ বেষ্টনিতে ঘিরে রেখেছে পুরো শহরটাকে।
এতো নিরিবিলি ছিল সেই সময়টাতে কুষ্টিয়ার রাস্তাগুলো।সেই সময়ের কুষ্টিয়া যারা দেখেছে তারা জানে তখন কুষ্টিয়ার জনসংখ্যা ছিল খুব কম আর খোলা জায়গা ছিল অনেক বেশী,আর ছিল বিশাল বড়,বড় পুকুর।কুষ্টিয়ার আদি মিষ্টির দোকানগুলো সেই সময়েও খুব খ্যাতিমান ছিল।এতো মজার দৈ,মিষ্টি পাওয়া যেত!
পুজোর সময়টাতে হিন্দু বাড়িগুলোতে খুব আনন্দ হতে দেখেছি।ঈদ,শবে বরাতে মুসলিমদের ভেতরে দেখেছি শান্তিপূর্ণ আনন্দ আয়োজন।ছোট্ট শহর,লোক সংখ্যা কম কিন্তু সব কিছুতেই একটা ছিম,ছাম ভাব ছিল।আর আমের সীজনে আম খাওয়ার মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না।বাসায় এতো আম আনতো আব্বু।
আজকাল কুষ্টিয়া গেলে সেই শান্তি,শান্তি ব্যাপারটা আর চোখে পড়ে না।বিশাল বিশাল বড়,বড় দালানগুলো কুষ্টিয়ার মায়াভরা সবুজ বেষ্টিনীকে ঢেকে দিয়েছে অনেক আগেই।সকালে ঘুম থেকে উঠলে পাখীর কলকাকলীর শব্দও তেমন কানে আসে না।কুষ্টিয়ার বিখ্যাত কুলফি আর তিলের খাঁজার স্বাদটাও যেন ঠিক আর আগের মতো নেই।রবীন্দ্রনাথ,লালন আর মীর মোশারফ হোসেনের স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার প্রতি মনের টানটা অবশ্য সেই আগের মতোই আছে।শত মাইলের দূরত্বে থেকেও যে শহরটা মনের মাঝে জেগে থাকে সারাক্ষণ তার নাম”কুষ্টিয়া”।
No comments:
Post a Comment
Thank u very much