Saturday, July 3, 2021

লাশ কাটা মোড়ের গল্প লিখেছেন হাসানুল হক সোহাগ

 


লাশ কাটা মোড়ের গল্প

  সোহাগ হক। 

লাশ কাটা মোড়। নাম শুনলেই কেমন ভয় ভয় লাগে। গায়ে শিহরন জাগে। আমাদের কুষ্টিয়ার সরকারী কলেজ এর পূর্বে লাশ কাটার মোড় অর্থাৎ পুরাতন কাটাই খানার মোড় অবস্থিত। এখানে ব্রিটিশ আমলের একটি পুরানো ভাঙা চোরা লাশ কাটা ঘর আছে। যেখানে আগে অপমৃত্যু হলে লাশ ময়নাতদন্ত করা হতো। এখন এই ঘরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এই ঘরটির পাশ দিয়ে যেতে এখনো অনেক মানুষ ভয় পায়।

কারন, এই লাশকাটা ঘরের একটা ভৌতিক গল্প প্রচলিত আছে। এই ঘটনাটি ব্রিটিশ আমলের দুজন ডোমের গল্প। তাদের নাম মদন লাল আর বাদল লাল। 

আমি প্রায় প্রতিদিনই ঐ ঘরের পাশ দিয়ে যায় আর ভাবি এই ঘরটির যে কাহিনী প্রচলিত আছে সেটা লিখবো। কিন্তু কখনোই সম্পুর্ন তথ্য না পাওয়ায় লেখা হয়নি। 

বর্ষার এক দিনে হঠাৎ বৃষ্টি আসলে আমি লাশ কাটা ঘরের বারান্দায় আশ্রয় নিলাম। তখন বিকাল আকাশে প্রচুর মেঘ অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমার একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। হঠাৎ দেখি একটা লোক চাদর গায়ে জড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। মুখটি ঢাঁকা বিড়ি খাচ্ছে। আমি বললাম আপনি কে?  জবাব এলো, হামি ডোম আছি বাবু, লাশ কাটি। শুনে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। এই অসময়ে লাশ কাটা ঘরের বারান্দায় আমি আর ডোম একসাথে দাঁড়িয়ে আছি। 

আমি তাকে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা আপনি মদন আর বাদল সম্পর্কে কিছু জানেন? সঙ্গে সঙ্গে সে বললো জানি বাবু।ওরা সেই ব্রিটিশ আমলে ডোম ছিলো বাবু। ওদের একজন এই ঘরে মরেছিলো, আর এক জনের ওকে মারার জন্য ফাঁসি হয়েছিলো। 

আমি তখন অতি উৎসাহী হয়ে তাকে বললাম, বলুনতো কি হয়েছিলো সেদিন। 

তখন তিনি বলতে থাকলেন, বললেন সে বাবু ব্রিটিশ আমল, এই ঘরের চারিদিকে শুধু বনজঙ্গল, এখানে বাঘ ভালুক ঘুরতো। 

এইখানে লাশ কাটতো মদন আর বাদল ।

দুজনের মধ্যে কঠিন ভাব ছিলো। লাশ কাটার আগে একসাথে মাল মানে মদ খেয়ে আসতো। একদিন একটা লাশ আসলো সন্ধ্যায়। তখন লাশকাটা ঘরে ওরা লাশটি ঢুকিয়ে রাখলো। লাশটির মাথা ছিলো না। বিভৎস লাগছিলো। মদন বললো, দেখেছিসরে বাদল কেমন লাশ আছে, হামার ভয় লাগে রে। বাদল বললো, এতে ভয়ের কি আছেরে এত লাশ কাটিলাম, আর এতো এক গলা কাটা লাশ আছে, বলে হা হা করে হাসিলো। তা দেখে মদন বললো তুর ভয় করে না। বাদল বললো না। তাহলে একটা জুয়া খেলবি। 

বাদল বললো কি বলছিস। মদন বললো তু যদি আজ রাতে এই লাশের দিলে পেরেক ঠুকে দিস তাহলে বুঝবো তু বীর আছিস। বাদল বললো এটা কুনো ব্যপার হলো, কি বাজি ধরবি বল? মদন বলিলো যদি তু কাজটি করতে পারিস তুকে হামি কালকে চার বোতল মাল খাওয়াবো। বাদল বললো হামি রাজি আছি। তারপর তারা ঘরে লাশ ঢুকিয়ে ডোমপট্টিতে চলে গেলো।

মধ্যরাত চারিদিকে থমথমে। মাঝে মাঝে শেয়াল বাঘের ডাক। এর মধ্যে বাদল পট্টি থেকে বের হলো লাশকাটা ঘরের উদ্দেশ্যে। গায়ে একখানা চাদর জড়িয়ে হাঁটা শুরু করলো। তার ভয় লাগছিলো, কিন্তু চার বোতল মালের কথা মনে হতেই সাহস ফিরে পেলো। ঘরের তালা খুলতেই মানুষ পচা গন্ধ তার নাকে লাগলো। এখন তার মনে ভয় লাগলো, কারন সে একা। জঙ্গলের ভেতরে লাশ কাটা ঘরে সে একা। কোন রকমে কাঁপতে কাঁপতে সে লাশের কাছে পৌঁছালো, তারপরে হাতুড়ি আর একটা পেরেক বের করে লাশের বুকের উপরে পেরেক রেখে হাতুড়ি দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঠুকে দিলো। তারপরে তারাতারি বের হতে যেয়ে কে যেনো ওকে টেনে ধরলো। আবার যেতে গেলো আবার টেনে ধরলো। তখনি সে মেঝেতে পড়ে গেলো বাঁচাও বলে, আর উঠলো না। 

সকালে মদন লাশ কাটা ঘরের কাছে যেয়ে দেখলো দরজার তালা খোলা। সে ভেতরে ঢুকে বাদল বলে ডাকতেই নিচে তাকিয়ে চমকে উঠলো, দেখলো বাদলের নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে আছে আর লাশের গায়ে চাদর সহ পেরেক ঢোকানো।মদনের বুঝতে বাকি রইল না যে বাদল লাশের গায়ে পেরেক মারতে যেয়ে চাদর সহ ঠুকেছিলো। যখনি ও বের হতে গিয়েছে তখনি চাদরে টান অনুভব করেছে, সে মনে করেছে লাশ তাকে টেনে ধরেছে। আর এই ভয়েই সে হার্টফেল হয়ে মারা গেছে। 

সকালে ব্রিটিশ পুলিশ আসলো এসে লাশ দেখে মদন কে গ্রেফতার করলো। মদন বললো, হুজুর মাই বাপ হামি খুন করিনাই, খুন ঐ লাশ করিয়াছে। কিন্তু পুলিশ তার কথা শুনলো না, বাদলের খুনের দায়ে তাকে গ্রেফতার করে হাজতে দিলো। 

যথাসময়ে বিচার হলো বিচারে প্রমান হলো মদন বাদল কে রাগের বসে খুন করেছে। মদনের ফাঁসির অর্ডার হলো। মদন বার বার বললো মাই বাপ হামি খুন করি নাই, লাশ খুন করিয়াছে, কিন্তু তার কথা কেউ শুনলো না। যথাসময়ে মদনের ফাঁসি কার্যকর হলো। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মদন বললো হামি খুন করিনাই লাশ খুন করিয়াছে। কিন্তু তার ফাঁসি কার্যকর হলো। 

এখনো এখানে মাঝে মাঝে শোনা যায় আমি খুন করিনাই, লাশ খুন করিয়াছে। 

আমি মন দিয়ে লোকটির কথা শুনছিলাম। 

লোকটি বলল, বাবু বৃষ্টি কমিয়া গিয়াছে চলিয়া যান। আমি বললাম যাবো, কিন্তু আপনি বললেন আপনি ডোম, আপনার নাম কি? এবার লোকটি হা হা হা করে হেসে উঠলো, আমার গা ঠান্ডা হয়ে গেলো। লোকটি যেই আমার দিকে ঘুরে গায়ের চাদর সরালো দেখলাম একটা কংকাল বিড়ি টানছে। সে আমার সামনে এসে বললো, হামি মদন বাবু, হামি খুন করিনাই বাবু লাশ খুন করিয়াছে। 

এরপর আমি আবিষ্কার করলাম আমি হাসপাতালের বেডে। আমাকে সবাই বললো আমি অজ্ঞান হয়ে লাশ কাটা ঘরের বারান্দায় পড়ে ছিলাম। কয়েকজন লোক আমাকে দেখে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আমি ঘটনাটি সবাইকে বললাম। সবাই বললো আমার দৃষ্টি ভ্রম রোগ হয়েছে। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। কেবিন থেকে সবাই চলে গেলো। হঠাৎ দেখি দরজার বাইরে কে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম কে ওখানে? মুখ ভেতরে ঢুকিয়ে বললো হামি মদন আছি বাবু, হামি খুন করিনাই লাশ খুন করিয়াছে, বলেই চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে আমি আবার জ্ঞান হাঁরাইলাম।।

1 comment:

Thank u very much