Saturday, December 9, 2023

তূয়া নূরের কবিতা /কৃষক

 


কৃষক

তূয়া নূর

তুমি যখন কৃষিজীবী মানুষের কথা বলো

তাদের দুঃখ দৈন্যের কথা বলতে বলতে ক্ষুধাতুর মানুষের সামনে 

অথবা টিভির পর্দায় – ভেঙে পড়ো কপট কান্নায়

তখন আমার ঘৃণা হয়।


আমি এমন কৃষকের কথা জানি যার বুকে 

তপ্ত লাভার উৎস আছে 

সময়ে সময়ে কেঁপে ওঠে বিকট শব্দে ।

তার ঋজুময় বাহুতে খাঁজ খাঁজ মাংসপেশির শৈল্পিক কারুকাজ। 

তামাটে বর্ণের চামড়ার মায়াময় ভাঁজ। 

ভাঁজে ভাঁজে জমা হয়ে আছে ত্রিকালদর্শীর পলল প্রজ্ঞা

সে তার তন্তুময় পেশীতে ধারণ করে শক্তির আধান,

যেনো সামুদ্রিক বন্দরের আধুনিক প্রযুক্তির জেটি। 

বয়োবৃদ্ধ বৃক্ষের মতো দীর্ঘ তার বয়স 

তার চোখে ভাসে অশান্ত নীলিমার ঢেউ 

সোজা হয়ে দাঁড়ালে তার ন্যুব্জ দেহ,

বনানীর মুখে ফোটে স্পর্ধিত হাসি।

ভারী দু'টো পায়ের ছাপ লেপটে থাকে নরম শিলায়

কাঁপায় শুভ্র প্রান্তর, দীঘির নিটোল জল 

অথচ তার মুখটা কতো বেশী সৌম্য,কতবেশী যৌবনমন্ত 

সকালের শিশির ঝরা ঘাসের মতো সতেজ।


বিশাল পাতার মতো বিস্তৃত তার ভারী করতল,

কতো কিছু ধরে রাখে তার শক্তিমন্ত আঙ্গুল 

হাতের তালুতে রেখা গুলো শুকনো নদীর মতো ফুটে আছে যেনো এক পৃথিবীর ম্যাপ। 

পেশল করতল দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখে লাঙলের হাতল। 

চকচকে ধাতব ফলা ফড়ফড় করে বিদীর্ণ করে পাথরের বুক,

চৈত্র খরায় তেজোবান হয় তার দ্রোহ 

শরীরের নোনা স্বেদবিন্দুর উষ্ণতা আর কালো মেঘের ভালোবাসা পেয়ে 

সবুজে ভরে যায় আদিগন্ত ফসলের মাঠ 

কেঁপে ওঠে সোনালী সুখ মনোরম রেখায় তার তামাটে ঠোঁটে। 

তার বুকে জমা হয় মোহময় ভালোবাসা 

চোখের তারায় জমে ক্রোধের পলি।


কৃষকের প্রার্থনায় নত হয়ে রাতভর জ্যোৎস্না ঝরায় রেশমি

আলো 

ঘরে ফেরা পাখী ডানা ঝাপটায় 

ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বাচ্চার কাছে সে জমা করে রাখে ভালোবাসার অবিনাশী বীজ। 

গাভীর দুধের বোটায় জমা হয় সুখ ।


তার হাতে চিক্ মিক্ করে ধারালো পাথর—সে এক সোনালী মাধব যুবক


ঘন কুয়াশায় হেঁটে যায় সূর্যের কাছে 

ভারী দু'টো পা রেখে যায় ছাপ পাললিক শিলায়। 


আমি এমন কৃষকের কথা জানি

যে শক্ত কব্জিতে ধরে রাখে শানিত পাথর 

সে যেন আদিম চিত্রকলার পেশল পুরুষ—

যারা মাটিতে প্রথম রোপণ করেছিল সোনামুখী  শস্যের বীজ। 


রক্তবর্ণ শিলাখন্ডে লিখেছিলো জীবনের নাম

দেয়ালের গায়ে এঁকেছিলো সাহসের ছবি।

শিলার স্তর জমে জমে যেমন পৃথিবীর বুক অজানা রহস্যে ভরে ওঠে সহসা

এ বুকে তেমন বিদ্রোহ জমতে জমতে 

বিকট শব্দে চৌচির হয়ে যায় কোন এক সময় 

বিষাক্ত বাতাস নীল করে দেয় মোমের শরীর।


শিল্প-সত্ত্বায় কারুময় ভঙ্গিতে 

সে তার কাঠের লাঙলের নিরেট ধাতব ফলা 

আমূল বিদ্ধ করে উর্বরা জমিনে 

ঠোঁটে কাঁপে ভালোবাসার গান 

প্রাকৃতিক ভালোবাসায় গাঢ় হয়ে ওঠে তার উত্তরপুরুষ—

ঠিক অবিকল অবয়ব তার, একই রকম চোখ

সমান অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে চোয়ালে 

তেমনি দীর্ঘ গ্রীবা, পেশল বাহু, দৃপ্ত করতল—

রক্ত নদীতে একই স্রোতের জোয়ার ভাটার খেলা।


তুমি যখন কৃষিজীবী মানুষের কথা বলো তাদের 

দুঃখ-দৈন্যের কথা বল বলতে মেকী শব্দে কেঁদে ওঠো টিভির পর্দায়—

অথবা কোন জনসমাগমে—

তখন তোমার প্রতি আমার ঘৃণা হয় 

ভীষণ ঘৃণা হয়।




No comments:

Post a Comment

Thank u very much