Thursday, December 7, 2023

গ্রন্থ আলোচনা,"নরওয়েজিয়ান উড" / মোস্তফা অভি

 

মোস্তফা অভি

"নরওয়েজিয়ান উড" 

গ্রন্থ আলোচনা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওয়াতানাবে নানা ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তবে তার প্রথম প্রেমিকা নাওকোকে কিছুতেই ভুলতে পারেনা। ওদিকে নওকো ভালোবাসে কিজুকিকে যে কিনা আত্মহত্যা করেছে। হাসিখুশি নাওকো জীবনের কঠিন মুহূর্ত পার করতে গিয়ে এতটাই বিষণ্ন হয়ে পড়ে, সে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারিয়ে ভর্তি হয় মানসিক হাসপাতালে। গাছ-গাছালির ছায়াঘেরা এক পল্লী বলয়ে মানসিক হাসপাতাল। নওকোর বন্ধু তার মন ভালো করতে গিটারে বাজায় বিটলস এর গান- "নরওয়েজিয়ান উড" 

উপন্যাসটির মূল আকর্ষন লেখকের বাস্তবধর্মী বর্ণনা। যেন চরিত্র আর পরিবেশ বর্ণনার সাথে লেখক সবকিছু পাঠককে দেখিয়ে দিচ্ছেন।  যেখানে পার্থিব বাস্তবতার চেয়ে লেখক সৃষ্ট বাস্তবতাই যেন অধিক সত্য, বাস্তবের চেয়েও আরো বাস্তব। মুরাকামি তাঁর আখ্যান বর্ণনায় পাঠককে নিয়ে যায় অন্যরকম এক ঘোরের জগতে। যেখানে ধীরে ধীরে কল্পিত জগতের সঙ্গে পাঠক নিজেকে লীন করে ফেলে। ফলে খানিক সময়ের জন্য প্রভাবিতও হয় বটে।সম্ভবত, সেজন্যই মুরাকামি বিশ্বের অন্য সকল লেখক থেকে আলাদা জগত নির্মানের কারিগর।

ধরা যাক, উপন্যাসে বর্ণিত এক রেস্তোরাঁর কথা। লেখক দুই বন্ধুর কথোপকথনের ছলে সেখানকার খুটিনাটি সম্পর্কে পাঠককে যে ধারণা দিয়েছেন, সম্ভবত আমরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও সেসব দেখতে পেতাম না। বাস্তবকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে পাঠককে স্বপ্নের জগতে বিচরণ করানোই মুরাকামির ওস্তাদি কাজ। অনেকে এটাকে সুরিয়ালিজম অথবা ম্যাজিক রিয়ালিজম বলেও আখ্যায়িত করেন। তবে আমার মতে সেটা শুধুই "মুরাকালিয়াজম"।

পুরো উপন্যাসজুড়ে লাগামহীম যৌনতার শৈল্পিক বিচরণ।  বিষন্নতার চরম ঘোর থেকে বের হতে গিয়ে মানুষ যে সিনিয়র জুনিয়রের বাছবিচাহীন সম্পর্কের ভেতর দম নিতে শেখে, সেই নিদর্শন পাওয়া যায় ন্যারেটিভে। একজন যুবক তার চেয়ে বয়সী নারীর ভেতর খুঁজে পায় অদৃশ্য আনন্দের মেওয়া। বয়সের কারণে যতটা সাধারণ ভেবেছিল তাকে, তার চেয়ে বহুগুন আকর্ষনীয় তার যৌবনের সমস্ত কাঠামো। এ যেন শরীর নয়, মনের ভেতর মন ঢুকে শারীরবৃত্তীয় সমস্ত কলা বিনিময়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে নিরন্তর কান্না। সেই অদ্ভুত বর্ণনার উপলব্ধির কারণে মুগ্ধ পাঠক কল্পনায় ছুটে যায় অতীত জীবনের প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে।  

হারুকি মুরাকামির লেখা "নওরেজিয়ান উড" উপন্যাসটি বিশ্বের প্রায় পঞ্চাশটি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। প্রচলিত তথ্যমতে, জাপানের এমন কোনো শিক্ষিত মানুষ নেই যিনি এই উপন্যাসটি পড়েননি। এছাড়াও বইটি সারা বিশ্বে লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। আপনিও পড়ে দেখতে পারেন। হ্যাপি রিডিং!!

লেখা©®মোস্তফা অভি





No comments:

Post a Comment

Thank u very much