"বকুল ফুল"
লেখাঃ নূর হেলেন
মাঝি,
আমার কথা মনে নাই তোমার?
সেই যে মাঘের চান্নিপশর রাইত?
মাথার খোঁপাখান খুইল্যা কইছিলা,
বউরে,
তোরে খোলা চুলে পরীর লাহান দেখায়।
যেন আসমান থাইক্যা অহনি নাইম্যা আইলি।
তয় অহন আমি আর পাট কইরা চুল বান্ধিনা।
চিরুনির দাঁতে ছাত্রা পইড়্যা রইছে।
সুগন্ধি তেল শ্যাষবার কবে মাখছি,
মনে নাই।
তোমার লাহান তো কেউ ডাইক্যা কয় না,
আয়, বকুল, তোর চুলে বিলি কাইট্যা দেই।
লাল ফিতা দিয়া পাঁকায়া দেই মালা বেণি।
পা দুইখান কোলের পরে রাইখ্যা কেউ তো কয়না,
আলতার শিশি শ্যাষ?
কাল হাটের থন ঠিক আইন্যা দিমু।
লোহার ছেকলের কালসিটে দাগ,
আমার আলতার নিশান ধুইয়া দিয়া গ্যাছে।
চিল শকুন আইসা আঁচড় কাঁটছে কোমরে ভাঁজে।
থুতনির সেই ছোট তিল,
যেইখানে ঠোঁট ছোঁয়াইয়া তুমি কইতা,
এইখানে আমার মন রাখছি কইলাম,
তুই সামলায়া রাহিস।
আমি, আমি তারে পারিনাই সামলাইতে।
কালা রক্তের ছোপে ডুইব্বা গ্যাছে তোমার মন।
তোমার বকুল এই উচ্ছিষ্ট শরীরডা লয়া দাঁড়ায়া এহনো।
ঘর নাই, গেরস্থি নাই, পাতে নাই এক নলা ভাত।
পথ চাইয়া থাকতে থাকতে দুই চউক্ষে ছানি পইড়া গেছে।
বয়স মুইছ্যা দিয়া গ্যাছে রূপের বহর!
যুদ্ধ শ্যাষে গবাদি লইয়া,
ঘরছাড়ারাও ঘরে ফিরছে।
নয়া সওদাগরেরা নোঙর ফালাইছে ঘাটে।
খালি আমার অন্তরের আগলখান টানা।
তুমি ছাড়া কাউরে দেইনাই সেই সোনার চাবি।
তুমি তো আর ফিইরা আইলানা মাঝি,
নাও ভীড়াইলানা এই উজানডাঙায়।
কলিজায় লাঙল টাইনা আবাদ করছি এই দ্যাশ,
আঁচল খোয়াইয়া পতাকা জরাইছি গতরে।
ওরা তাই নাম দিছে,
বীরাঙ্গনা!
কওতো কেমুন হইছে নামখান?
তবুও আমার মনের হাউস মেটেনা।
তোমার লাহান কেউ তো ডাকে না কাছে।
কেউ তো কয় না,
আয় বকুল তোর চুল বাইন্ধা দেই।
আয়, বকুল, আলতা দেই রাঙা দুইখান পায়।