ছবিওয়ালা রবি (শেখ রবিউল হক)
শিল্পী থেকে শিল্পপতি; শিল্পপতি থেকে শিল্পী।
✒️✒️রেফুল করিম
তখন চোখের কাছে দেখা সুন্দর একটা ভিন্ন মাত্রা পায়।বিষয়টি বোধহয় আরেকটু বিশ্লেষিত হওয়া দরকার। দুচোখ মেলে যা দেখা যায় তাকে চিত্রিত করা শিল্প নয়।অতিসংবেদিত শিল্পী মনে যে দূরের ইশারা আছে, তার কোনো সংকেত যুক্ত করতে হয় শিল্পে।দৃশ্য গ্রাহ্য একান্ত বাস্তবের মধ্যে একটা অধরা মায়া আছে। সেই মায়ার খোঁজে নিতে চান শিল্পী শেখ রবিউল হক। তিনি পেশায় শিল্পী নন; কিন্তু শিল্পী হয়ে বাঁচতে চান। নিজের অস্তিত্বে তিনি অনুভব করেন সেই অধরা সুন্দরের টান। তাকে মায়াচ্ছন্ন করে রেখেছে শিল্পের কুহক৷
শেখ রবিউল হকের শিল্পচর্চার সূচনা শৈশবে। দেশি পেন্সিল ও দেশি রং দিয়ে তখন কোন মঞ্চ সজ্জার কাজে দক্ষতা প্রমাণ করেন৷ তারপর বিষয় চিত্রিত করার সুখ তাকে শিল্পের নতুন নতুন দিগন্ত স্পর্শ করার প্রণোদনা দেয়৷ তাই তিনি জলরঙের ললিত ভাবটা বুঝে ছবি আঁকেন এবং তেল রঙের গাঢ় স্বভাবটা উপলব্ধি করে চিত্র রচনায় মনেনিবেশ করেন৷ কখনো বাস্তববাদী রীতি মেনে একাডেমির ব্যাকরণ অনুসরণ করে ছবি আঁকেন, কখনো বা ছবি ছবি তৈরি হয়েছে দ্বিমাত্রিক নকশাধর্মিতায় জোর দিয়ে৷
শেখ রবিউল হক শিল্পী থেকে শিল্পপতি, শিল্পপতি থেকে শিল্পী। তাঁর পেশা আবাসন শিল্প। বানিজ্যের লক্ষী বসত করে। লক্ষীর সঙ্গে স্বরস্বতীর যুগলবাসেই জীবন পূর্ণতা পায়- একথা পৌরাণিক কাল থেকে বহুবার সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বৈভবের কাছে এলে অনেক সময়ই মানবতাবোধ ও শিল্পবোধ জীবন থেকে লুপ্ত হয়ে যায়।শেখ রবিউল হকের সুন্দরের সুষমায় স্নিগ্ধজীবন প্রত্যাশা করেন এবং সে পথেই নিবিড় নিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে ও বিদেশে তিনি প্রচুর শিল্পীর সঙ্গে মেলামেশা করে চিত্র রচনায়র গূঢ় অর্থ বুঝাতে চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ছবি পাঠ করে বুঝতে চেয়েছেন সৃজনশীলতার মর্ম। ছবি আঁকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং এ আকাঙ্ক্ষাকে ফলবতী করার জন্য নিজের মতো করে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন এই শিল্পী। বানিজ্য সফল শেখ রবিউল হকের জীবন শিল্পের সুফলতা ও সফলতা অন্বেষণ করে চলেছে।
নিসর্গের গীতময় প্রকাশ আর মানুষের অনাবিল ও স্নিগ্ধ অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন এই স্বশিক্ষিত শিল্পী। অপেশাদার ও নিজস্ব অনুশীলনে যারা শিল্পী হয়ে ওঠেন তারা বিচিত্র বিষয় আঁকেন। তাছাড়া তাদের ভাষাও হয় বিচিত্র রকমের। যেখানে পেশাদার ও একাডেমি শিক্ষিত শিল্পী কতগুলো রীতিমাফিক পর্ব অতিক্রম করে নিজের বিষয় ও শিল্প ভাষায় স্হির হন, সেখানে স্বশিক্ষিত শিল্পী কখনোই একক কোনো ধারা অনুসরণ করতে চান না। একারণেই হয়তো শেখ রবিউল হকের ছবিতে একই সঙ্গে একাডেমিক রিয়ালিজম, ইস্প্রেশনইজম, অ্যাবাস্ট্র্যাকট ইত্যাদি শিল্প রীতি প্রকাশ দেখা যায়।
সুন্দরের প্রতি পক্ষপাত মানুষের স্বভাবের অন্তর্লীন বৈশিষ্ট্য। যদিও সংজ্ঞা সুন্দরের ব্যাখ্যা করতে গেলে সুন্দর কে আর সীমিত শর্তে সীমায়িত রাখা যাবেনা। তার অনেক সংজ্ঞা তৈরি হবে এবং ইতিমধ্যে অনেক সংজ্ঞাই তাত্বিকেরা নিরূপণ করেছে। তবুও তো প্রকৃতিতে সুন্দরের ধ্রুবক রয়ে গেছে। ফুল সুন্দর, শিশুমুখ সুন্দর অথবা ব্যাপ্ত করে যদি তবে বলতে হয় নিসর্গ, মানুষ ও প্রাণিকূল ইশ্বরের হিসেবে বা প্রকৃতির নিয়মের সুন্দরের প্রতিনিধি। এরকম ভাবন থেকে শেখ রবিউল হক ফুল এঁকেছেন, মানুষ, নিসর্গ দৃশ্য,নারী এবং ভাইবোনের সম্পর্কে গভীরে যে প্রীতি ও স্নেহ আছে, তা ও চিত্রায়িত করেছেন৷
শিল্পের একটা বড় বৈশিষ্ট্য উপরিতল দেখে বিষয়টির গভীরতাকে আবিস্কার করা।চোখের দেখা নয়, মনের অনুভবকে দৃশ্যায়িত করার মধ্য দিয়ে চিত্রকলা মাধ্যম প্রকাশের নতুন পথ খুঁজে পেয়েছে। ' অক্সিজেন কারখানা ', ' তিনি একজন ',' নিটোল বন্ধুত্ব' এসব নামের ছবিতে শেখ রবিউল হক বিষয় ছাপিয়ে রং ও গড়নকে স্বাধীনভাবে বিচরণ করিয়েছেন। এ ধরনের ছবিতে ফিগার থাকলেও তা রঙিন নিসর্গের চেয়ে বড় অবয়বে উপস্থাপিত হয়নি। রঙের বিমূর্ত এক চলাচল আছে। শেষে রং নিজের কথা বলবে। চিত্রকলা গভীরতর অর্থে রঙের সংলাপ বিনিময়, অনেক রঙের কাকলি,আলো- অন্ধকারের বুনট মাত্র। এই সত্য যে শেখ রবিউল হকের মর্ম ছুঁয়েছে, তা তার চিত্রকলার দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
No comments:
Post a Comment
Thank u very much