Sunday, December 12, 2021

মুক্তি যুদ্ধের রনাঙ্গনের অকুতোভয় নারী নেত্রী রওশন আরা বেগম নীলার সংগ্রামী জীবন ...!!

মুক্তি যুদ্ধের রনাঙ্গনের অকুতোভয় নারী নেত্রী রওশন আরা বেগম  নীলার সংগ্রামী জীবন.......

 ©®✒️✒️ফারহানা হৃদয়িনী







বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের প্রচুর অবদান রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। 

"শত শত্রুর প্রতিরোধ রুখতে পারে নি তাদের,করতে পারে নি যাদের চেতনার ক্ষয়।নিঃশ্বাসে বারুদের গন্ধ, বুকে প্রত্যয়।ছিল না যাদের কোন প্রাণ হারাবার ভয়।

তাদের চেতনায় শুধু লাল সবুজের পতাকা উড়েছে, তারা রক্তদিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র গড়েছে। তারা অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা,তারা আমাদের বিজয়, আমাদের স্বাধীনতা এনেছে।"


তেমনি একজন সংগ্রামী নারী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রওশন আরা বেগম নীলা। যিনি এমন একজন নারী যে দেশপ্রেমকে রক্তে প্রবাহিত করে এগিয়ে চলেছেন ১৯৬৮ সাল থেকে স্বাধীকার, স্বাধীনতা,অসহযোগ আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। আজ পর্যন্ত নারী মুক্তি, নারী কল্যান নারী সংগ্রাম,যৌতুক,বাল্যবিবাহ,ইভটিজিং প্রতিরোধ, ও নারীদের সার্বিক জীবনধারার উন্নয়ণে সংগ্রামী নারী রওশন আরা বেগম নীলা রাজপথের চির জাগ্রুক সৈনিক। 

 কুৃমারখালীর মত মফস্বল শহরে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে নারীরা যে ভূমিকা রেখেছিল তা অনেক জেলার নারীরা রাখেন নি। সেই সব সংগ্রামী নারী আজ অনেকেই হয়তো রাজপথ হতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু রওশন আরা বেগম  নীলা একনিষ্ঠ ভাবে কাজ  করে চলেছেন। 



তাঁর বাবার চাকরি সূত্রে বগুড়া জেলার শান্তাহারে অবস্থান কালীন সময়ে ১৯৫৪ সালের ৬ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন ।  ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে রওশন আরা নীলার রাজনীতি জীবনের শুরু। তিনি তখন কুমারখালী বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। সে সময় কুমারখালী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক রেজাউল করিম হান্নানের অনুপ্রেরণায় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে প্রায় প্রতিটি মিটিং-মিছিলে যোগ দিতেন। তখন বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কুমারখালীতে আন্দোলন সংগ্রাম চলছিল। প্রতিটি মিছিলে তিনি সামনে থেকে স্লোগান দিতেন। ‘জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিবকে আনব’, আপোস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো,জয় বাংলা’ প্রভৃতি স্লোগানে প্রতিদিন কুমারখালী শহর মুখরিত হতো।




১৯৭১ সালে সারাদেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিকামী মানুষদের সঙ্গে পাকহানাদার আর রাজাকারদের রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধ। সেই সময় তিনি মুক্তি যোদ্ধাদের কাছে গ্রেনেড  হামলা ও মেশিনগান পরিচালনার ট্রেনিঙ গ্রহণ করেন। সেই সময় বোরকা পরে পথে পথে ঘুরে যুদ্ধকালীন সময়ের খবর সংগ্রহ করে, মুক্তি যোদ্ধাদের কাছে চিরকূট ও চিঠি পাঠিয়ে রাজাকার ও পাক হানাদারদের অবস্থান সম্বন্ধে খবর পাঠাতেন। তাই যুদ্ধকালীন সময়ে রওশন আরা বেগম নীলা সব সময় রাজাকারদের হুমকি ধমকিতে থাকতেন। একদিন রাতে রাজাকাররা তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। এক রাজাকার রাইফেল তাক করে তার বুকে। সেই মুহুর্তে তার বাবা অনেক অনুনয় বিনয় করেন তাকে ছেড়ে দেবার জন্য। এর মধ্যে একজন রাজাকার তাঁর সহপাঠী হওয়ায় তাকে সেদিনের মতো মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দেন। 

 ১৩৭০ বঙ্গাব্দে (১৯৬৯) কুমারখালী জে এন হাই স্কুলে নির্মিত কুমারখালীর প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেরও অন্যতম রূপকারও তিনি।



সমাজিক উন্নয়নে  বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য মহীয়সী এ নারী সরকারীভাবে কুমারখালী উপজেলা ও কুষ্টিয়া জেলার শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে  বেগম রোকেয়া দিবসে "জয়িতা" পদকে ভূষিত হয়েছেন।




মহীয়সী এ নারী এখন নিরন্তর ছুটে চলেছেন সমাজের অসহায় পিছিয়ে পড়া, সুবিধা বঞ্চিত হতদরিদ্র নারীদের কল্যাণে। বাল্যবিয়ে বন্ধ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার এ নারী দিন নেই রাত নেই আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন পাশাপাশি সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতি-মুক্তিযুদ্ধের ওপর যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের নানাভাবে সহযোগিতা, পরামর্শ দান করে যাচ্ছেন। 







No comments:

Post a Comment

Thank u very much