বান্দরবান জেলা ভ্রমণ
-------------------------✒️📝 কামরান চৌধুরী
পাহাড়, নদী ও ঝর্ণার মিলনে অপরূপ সুন্দর বান্দরবান জেলা। বান্দরবানের দক্ষিণ-পশ্চিমে কক্সবাজার, উত্তর-পশ্চিমে চট্রগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙামাটি ও পুর্বে মায়ানমার। ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আচার-আচরন, সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় উৎসব পাহাড়ি কন্যা বান্দরবানের কাছে মানুষকে টেনে নিয়ে যায় অবিরত।
বৌদ্ধ ধাতু জাদী (স্বর্ণ মন্দির)
চিম্বুক:
বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুকের পরিচিত অনেক পুরনো। পাহাড়ের এই দৃশ্যটি অতি চমৎকার। এ পাহাড় থেকৈ সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের দৃশ্য যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করে। জেলা শহর হতে ২৩ কি.মি. দূরে ও সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ২৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এখানে হেলিপ্যাড, রেস্টহাউস রয়েছে। চিম্বুক যাওয়ার পথে মিলনছড়ি ও শৈলপ্রপাত ঝর্ণা পড়ে। চিম্বুক থেকে নীলগিরি ২০ কি.মি।
মিলনছড়ি
শহর থেকে ৩ কি.মি. দূরে নয়নাভিরাম সবুজের কোলে মিলনছড়ি অবস্থিত। সাঙ্গু নদীর মোহনায় সৌন্দর্য্ মোহনীয়।
নীলগিরি :
জেলা সদর থেকে প্রায় ৪৭ কিলোইমটার দক্ষিণ পূর্বে-থানছি সড়কে পাহাড় চূড়ায় নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ২২ শত ফুট। প্রকৃতির কারুকাজ মুগ্ধ করে ভ্রমণ পিয়াসীদের। পাহাড় মেঘের লুকোচুরি খেলা এখানে নিত্য চলে। এই রোদ, এই বৃষ্টি, আকাশে মেঘের গর্জন সেই সাথে রংধনুর হাসিমাখা আলোর রুশ্মি, বাতাসের সাথে ছন্দ আর তাল মিলিয়ে প্রকৃতির বৈবিত্র্যময় এই পরিবর্তনের এই পরিবর্তনের দৃশ্যগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এখানে রয়েছে আকর্ষীয় কটেজ, ক্যাফেটেরিয়া, হেলিপ্যাড। দিনের বেলায় খালি চোখে বঙ্গোপসাগর ও জাহাজ চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়। পাহাড়ের কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীর আকাবাকা দৃশ্য মনোরম। এই স্থানটি বাংলার দার্জিলিং নামে পরিচিত।
মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স-
শহর থেকে ৪.৫ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। এখানে একটি মনোরম কৃত্রিম হ্রদ, শিশু পার্ক, সাফারী পার্ক, পেডেল বোট, ঝুলন্ত ব্রিজ, চিড়িয়াখানা, পিকনিক স্পট ও সুন্দর একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে।
বগালেক :
প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট পাহাড়ের ওপরে একটি লেক। যার পানির স্তর শীত বষায় কখনোই পরিবতন হয়না। লেকটির আয়তন ১৫ একর, উচ্চতা সমুদ্র সমতল হতে প্রায় ১২০০ ফুট। রুমা উপজেলা থেকে ১৭ কি.মি. দূরে কেওক্রাডং পাহাড়ের কোল ঘেষে। শীতকালে এ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ খুব উপভোগ করে। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ও প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেকে উপভোগ করে।
নীলাচল-
নীলাচল পাহাড়ি এলাকাটি শহর থেকে ৫ কিমি দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠা হতে ২০০০ ফুট উচুতে টাইগার পাড়া এলাকায় অবস্থিত। অনেকেই একে স্বর্গভূমি বলেন। নীলাচল থেকে সমগ্র বান্দরবান শহর একনজরে দেখা যায়। পাহাড় ঘেরা সবুজের সমারোহ ও প্রাকৃতির রূপ পর্যটকেরা উপভোগ করে। নীলাচলে বর্ষা, শরৎ আর হেমন্তে হাতের কাছে মেঘ খেলা করে।
জীবননগর পাহাড়-
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাস্তাটি জীবননগর পাহাড়ের উপর দিয়ে থানছি উপজেলা সদর স্পর্শ করেছে। জীবননগর থেকে থানছির পথে ১০ কি. মি. দূরত্বের একটি ঢালু পাহাড় রয়েছে। এর ঢালে ভ্রমণ খুবই রোমাঞ্চকর।
তাজিংডং/ বিজয়:
বান্দরবান সদর হতে প্রায় ৭০ কি. মি. দূরে রুমা উপজেলায় অবস্থিত।
কেওক্রাডং-
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পবতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৩১৯৬ ফুট। রুমা উপজেলা সদর হতে ৩০ কি. মি.। (বগালেক থেকে ১৫ কি. মি দূরত্ব)
আলী সুড়ঙ্গ- আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত এ সুড়ঙ্গ। গহীন অরণ্যে অবস্থিত হলেও এর রহস্য জয় করতে আসছে শতশত পযটক। উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ সুড়ঙ্গে যেতে একটি লোহার সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয়। সাথে টর্চলাইট থাকা ভাল। মাতামুহুরী- টোয়াইন খাল ঘেঁষে দুই পাহাড়ের চুঁড়ায় এই রহস্যময় গুহা। ভিতরে স্যাঁতস্যাঁতে গা ছমছমে পরিবেশ। গুহার ভিতরে অনেক বাদুর রয়েছে।
ক্যামলং জলাশয় : সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ভাঙামুড়া পাহাড় সন্নিকটে ২৫ একর ক্যামলং জলাশয় বা বিশালকৃতির লেক। এ লেকের পানি দিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় সেচ সুবিধা দেয়া হয়। শহর থেকে 10 কি. মি. দূরে অবস্থিত স্যুাটিং ও পিকনিক স্পট।
রাম জাদি : জেলা শহর থেকে ৫কি.মি. দূরে বান্দরবান রোয়াংছড়ি সড়কের কালাঘাটা এলাকায় রাম জাদি অবস্থিত । পাহাড় চূড়ায় এ মন্দির একটি তীথস্থান।
উপবন লেক : নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে অবস্থিত কৃত্রিম হ্রদ। এখানে মাছ ধরা ও নৌকা ভ্রমণের সুবিধা রয়েছে। বান্দরবান শহর থেকে 120 কিলোমিটর দূরে হলেও কক্সবাজার থেকে মাত্র 20 কিলোমিটারের মধ্যে হওয়াতে এ স্থানটি ইকো ট্যুর ও পিকনিক স্পট হিসাবে এর পরিচিত রয়েছে।
কানাপাড়া পাহাড়- বান্দরবান-কেরানি হাট সড়কের পাশে যৌথখামার এলাকায় অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত কানাপাড়াটি বম সম্প্রদায় অধ্যুষিত। শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে।
এখান হতে পায়ে হেঁটে সাঙ্গু নদীতে পৌঁছা যায়।
নাফাখুম- থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। সাঙ্গু নদী পথে রেমাক্রি হয়ে যেতে হয়।
শৈলপ্রপাত ঝর্ণা- শহর থেকে ৮ কি.মি দূরে থানচি যাবার পথে স্বচ্ছ ও ঠান্ডা পানির ঝর্ণা। পিকনিক করার আদর্শ স্থান। এখানে পাহাড়, ঝর্ণা ও গ্রামীণ জীবনের মিতালী দৃশ্যমান।
মারায়ন তং- ১৬৪০ ফুট উচ্চতার এই পাহাড় চূড়ায় বৌদ্ধ উপাসনালয় রয়েছে। খোলা প্রকৃতির মাঝে বুদ্ধের বিশাল মূর্তি স্থানকে গাম্ভীরময় করেছে। দিগন্তজোড়া পাহাড় ও নিচে মাতামুহুরী নদী ফসলের ক্ষেত সব মিলিয়ে অপূর্ব।
তিন্দু- তিন্দুকে ভূ-স্বর্গ বলা হয়। পাহাড়, মেঘ, ঝর্ণা, রহস্য ও রোমাঞ্চ সব মিলিয়ে এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষের আকর্ষন এখানে। শঙ্থ নদীর স্বচ্ছ পানির ঢল। স্থানীয় আদিবাসীদের সারল্য ও আতিথিয়তায় মুগ্ধ হবেন।
জাদিপাই ঝর্ণা- কেওক্রাডং থেকে দেড় কিমি দূরে জাদিপাই ঝর্ণা। কেওক্রাডং, জংছিয়া ও জাদিপাই ৩টি পাহাড়ি ঝিরির স্বচ্ছ পানির ধারা একত্রে ২০০ ফুট উপর থেকে কালো পাথরের গা বেয়ে জাদিপাই ঝর্ণা সাংগু নদীতে মিশেছে। শীতকালে পানি কম থাকে ট্রেকিং করা সুবিধা।
আমিয়াখুম- থানচি উপজেলার দুর্গম স্থানের একটি জলপ্রপাত। সাদা রঙের ফেনা ছড়িয়ে প্রবল বেগে শীতল পানি নিচে নেমে আসে। এখানে শব্দতরঙ্গের মূর্ছনায় মোহবিষ্ট হয় মানুষ। বর্ষায় এর প্রকৃত রূপ ফুটে ওঠে।
সাতভাই খুম- আমিয়াখুম জলপ্রপাত থেকে কিছুটা দূরে পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ জলধারা সাতভাইখুম। বাঁশের ভেলায় করে পাড়ি দিতে দিতে মুগ্ধতায় ভরে যাবে অন্তর।
ডিম পাহাড়- আলীকদম ও থানচি উপজেলার মাঝে ডিম পাহাড়ের অবস্থান। প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দয্য বৈচিত্রময় আদীবাসী জীবনধারায় পরিপূর্ণ স্থানটি।
দামতুয়া ঝর্ণা- আলীকদম উপজেলার দুর্গম স্থানে এই ঝর্ণা। এখানে যেতে ও আসতে প্রায় ১২ কি.মি পাহাড়ি পথ হাঁটতে হয়।
চিংড়ি ঝর্ণা- বান্দরবানের অসংখ্য ঝর্ণার মধ্যে চিংড়ি ঝর্ণা অন্যতম। একসময় এখানে প্রচুর চিংড়ি পাওয়া যেতো। বগালেক থেকে কেওক্রাডং যাবার পথে ৩০ মিনিট হাঁটলে এটার দেখা পাওয়া যায়। বর্ষাকালে অপরূপা হয়ে ওঠে।
নীলদিগন্ত- থানচি উপজেলার জীবননগর এলাকায় পাহাড়চূঁড়ায় ৩ একর এলাকা নিয়ে এটি গড়ে উঠেছে। সবুজ পাহাড়ের সাথে সাদা মেঘের খেলা নীল দিগন্তকে মোহনীয় করে। নীলগিরি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। এখানে পাহাড়ি আদিবাসীদের জীবনযাত্রা নজর কারবে সকলের।
আন্ধারমানিক- নৈসর্গিক রহস্যঘেরা সৌন্দর্যময় আন্ধারমানিক বান্দরবান জেলার থানচির বড় মদক এলাকায় অবস্থিত। রেমাক্রি হয় ছোট মদক হয়ে বড় মদকে যেতে হয়। ৮ ঘন্টা হাঁটার পথ, উঁচু-নিচু ও নদীল পাড় ধরে ঝোপঝাড়পূর্ণ পাহাড়ি পথ।
দেবতাখুম- রোয়াংছড়ি উপজেলায় দেবতাখুব অবস্থিত। প্রায় প্রায় ৫০-৭০ ফুট গভীর এই খুমের দৈর্ঘ্য ৬০০ ফুট যা ভেলখুম থেকে অনেক বড় এবং অনেক বেশী বন্য। শীলবাঁধা পাড়া থেকে বাঁশের মজবুত ভ্যালা বানিয়ে নিতে হবে। শীলবাঁধা গিয়ে প্রথমে পং সু আং খুম পার হতে হবে। পং সু আং খুম পার হওয়ার পর দেবতাখুমের শুরু। স্থানীয়দের কাছে এটা হলো সোনাখুম। অনেকে আবার মারমা ভাষায় থংচিখুম নামেও ডাকে। পিচ্ছিল পাথরে পথে পা ফসকে যেতে পারে তাই সতর্ক থাকতে হয়। আশে পাশের সব সুনসান। শব্দ হিসেবে থাকবে উপর থেকে পানির ফোটা পরার শব্দ, নিজেদের ভেলার আওয়াজ এবং আপনার কথারই প্রতিধ্বনি।
এছাড়া দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে মিরিঞ্চা, শুভ্রশীল, লিক্ষ্যং ঝর্ণা, সাকাহাফং পর্বত, ডাবল ফলস বা ৎলাবং ঝর্ণা, তিনাপ সাইতা, লুং ফের ভা সাইতার ঝর্ণা, বাকলাই ঝর্ণা, রাজার বাড়ি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment
Thank u very much