Wednesday, August 4, 2021

সাঈদা নাঈমের লেখা প্রবন্ধ "বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ"

 

 

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ

সাঈদা নাঈম


"যতকাল রবে পদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমান,
ততকালীন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান। "


ধ্রুবতারার মতো সত্যি এ লাইন চারটি। বাংলাদেশের নাম যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম আদিগন্ত জুড়ে ধ্বনিত হবে। বাংলাদেশের হৃদয়পটে যাঁর নাম লেখা। তাঁর নাম কোনোদিন কেউ মুছে দিতে পারবে না। তিনি ছিলেন সবার ভরসা।




একাত্তরের উত্তাল ভয়াবহ সেইদিনগুলিতে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির বত্রিশ নাম্বার বাড়িটি ছিল সবার ঠিকানা। সবাই এসে জড়ো হতো এই বাড়িটির সামনে। মুক্তির আন্দোলনের উদ্বেল বাঙালি শান্তির আশায় ছুটে যেত ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িটিতে। আন্দোলন আর শপথের সূতিকাগার ছিল এই বাড়ি। আজ এই বাড়িটি ঐতিহাসিক বাড়ি। চারদিক যেন মুক্তির বর্ণচ্ছটা, শান্ত, শীতল। এখানে বসবাস করতেন বাঙালির  নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বাধীন বাঙলার স্থপতি তিনি। বাঙালি জনতা তাঁর নির্দেশে মুক্তির সংগ্রাম রচেছিল। কত টাটকা রক্ত, কত অত্যাচার, অনাচার, দগ্ধ বাড়ি, মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এসেছে বাঙালির মুক্তি, এসেছে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। 
আজও এই।বত্রিশ নম্বর সড়কের দশ নম্বর বাড়িটিতে ঘিরে রয়েছে হাজারো স্বপ্নময় স্মৃতি। কোটি বাঙালির ভালোবাসায় এই বাড়িটি এখন "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্মৃতি জাদুঘর "।

স্বাধীনতার পরবর্তীকাল বঙ্গবন্ধুর নিরলস প্রচেষ্টায় গড়তে চেয়েছিলেন একটি সোনার দেশ। দানবের হিংস্রতা সেই সুখস্বপ্ন শেষ করে দেয় একটি রাতেই। উনিশশো পঁচাত্তর সালের পনেরো আগস্ট নীল নকশার বাস্তবায়ন ঘটায় শত্রুপক্ষ। পৈশাচিক নির্মম হত্যা করে পরিবারের সবাইকে। অন্তঃসত্ত্বা থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর ছোট শিশু শেখ রাসেলকেও তারা হত্যা করে। এমন নিকষ কালো রাতের ঘটনা ইতিহাসের কোনো জাতির সাথে ঘটেনি। বাঙালির জন্য এটি ছিল একটি কালো অধ্যায়।

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের সময় তাঁর বিরুদ্ধে চলছিল গভীর ষড়যন্ত্র। খন্দকার মোস্তাকসহ আরো অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের স্বপ্ন নিজেদের মতো করে দেখছিল। কিন্তু ওরা জানতো না। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যিনি পঁচিশ বছরের মধ্যে বারো বছর জেলের অন্ধকারে কাটিয়ে দিয়েছেন দেশের জন্য। কোনো ক্ষমতার জন্য নয়। ক্ষমতার মোহ তাঁকে কখনও টানেনি। তিনি সবাইকে বিশ্বাস করতেন। আর এই বিশ্বাসের কারণেই স্বপরিবারে শহীদ হতে হয়েছিল।

জনগনের কাছে দল মত নির্বিশেষে সবার নেতা বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শুধু আওয়ামীলীগের নেতা নন, জাতির নেতা। ইতিহাসের নায়ক তিনি।
ভয়াল সেই দিনে বঙ্গবন্ধুসহ যারা ভোরের আলো দেখার সুযোগ পায়নি, যারা শহীদ হয়েছে। এ দিনটি জাতীয়ভাবে শোক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

ক্ষমতার লোভে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক। তিনি মন্ত্রিসভা গঠন করে তার সভায় বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষদেরও ডেকেছিল। নীতিহীন, নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিলেন সবাই।
তারা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নাম চিরতরে মুছে দিতে। তাঁর বংশের সবাইকে হত্যা করতে। সৌভাগ্যক্রমে তাঁর দুই কন্যা তখন দেশের বাইরে থাকাতে প্রাণে বেঁচে যান। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এখন দেশের জননেত্রী, সবার প্রিয়। তিনি দেশের ক্ষমতায় থেকে দেশদ্রোহীদের বিচার করছেন। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা পূরণ করতে চাইছেন। গণতান্ত্রিক প্রগতিবাদী ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণ করার সংকল্প করেছেন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা।

একদিন ঠিক এই স্বপ্নের রূপায়ণ হবেই হবে।
জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয় পনেরো আগস্ট। সেদিন স্মৃতিগুলো যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। মনে হয় যেন এখনই বঙ্গবন্ধু দোতালার সিঁড়ি বেয়ে এসে সবার সামনে দাঁড়াবেন। তাঁকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু যখন বত্রিশ নাম্বারে সকালে যাই। তখন এই।মহান নেতাকে যেন উপলব্ধি করতে পারি। দেশ ও জাতির মহানায়ক তিনি। তাঁর বজ্রকণ্ঠ যেন শুনতে পাই।


" তোমাদের যার যা আছে, তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো। "
আবার কখনও শুনি, "এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। "


জাতীয় শোক দিবস, জনগনের শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দেয়, চেতনাকে আরো সজীব করে।
হাজার চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুর নাম ওরা মুছতে পারেনি, পারবেও না।

এ দেশের নির্মাতা, এমাটির সন্তান বঙ্গবন্ধু। আমরা সবাই তাঁকে স্মরণ করি প্রতিনিয়ত।

জয় বাংলা,
জয় বঙ্গবন্ধু।


No comments:

Post a Comment

Thank u very much