Wednesday, August 4, 2021

ফারহানা হৃদয়িনী'র কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সঞ্চয়িতা বইটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

"সঞ্চয়িতা" গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা

 লেখা - ফারহানা হৃদয়িনী



 "আজি হতে শতবর্ষ পরে,
কে কবি পড়িছো বসি আমার কবিতাখানি?"

                  

আজ একটি ভালোলাগার বই নিয়ে আলোচনা করছি। বইয়ের শ্রেণী বিভাগে এটি কবিতা সংকলন। বইয়ের নাম সঞ্চয়িতা। লেখক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলাদেশে বইটি মৌ প্রকাশনী হতে প্রকাশিত। ২০০৫ সালের সংস্করনের মূল্য : ১৮০ টাকা।

                                       (বইটির ভূমিকার কিছু অংশ)

সঞ্চয়িতার কবিতাগুলি সংকলনের ভার আমি নিজে নিয়েছি। অন্যের উপরেই দিতাম। কেননা কবিতা যে লেখে কবিতাগুলির অন্তরের ইতিহাস তার কাছে সুস্পষ্ট। বাহিরের প্রকাশে কবিতাগুলি উজ্জ্বল হয়েছে কি না হয়তো সেটা তার পক্ষে নিশ্চিত বোঝা কোনো কোনো স্থলে সহজ হয় না।

     কিন্তু, এই সংকলন উপলক্ষে একটি কথা বলার সুযোগ পাবো প্রত্যাশা করে এ কাজে হাত দিয়েছি। যাঁরা আমার কবিতা প্রকাশ করেন অনেক দিন থেকে তাদের সম্বন্ধে এই অনুভব করছি যে, আমার অল্প বয়সের যে সকল রচনা স্খলিত পদে চলতে আরম্ভ করেছে মাত্র, যারা ঠিক কবিতার সীমার মধ্যে এসে পৌঁছয় নি। আমার গ্রন্থাবলীতে তাদের স্থান দেওয়া আমার প্রতি অবিচার।...............

................

      আমার লেখা যে সকল কাব্যগ্রন্থ দীর্ঘকাল পাঠকদের পরিচিত, এই গ্রন্থে তাদেরই থেকে বিশেষ করে সংগ্রহ করা হয়েছে। যে গুলি অপেক্ষাকৃত অপরিচিত সেগুলি যথাস্থানে পূর্ণতর পরিচয়ের অপেক্ষায় রইলো।

শান্তিনিকেতন,

পৌষ১৩৩৮

                                                      শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

---------------------------------------------------------------------------------------------------////

"সঞ্চয়িতা" যে বইয়ের ভূমিকার কথাগুলোই পাঠককে অনেক কিছু শেখায়, হৃদয়কে মোহিত করে। যে বইয়ের কবিতা পড়লে অমৃতসুধা পানের অনুভব ঘটে,  যে সুধা অল্প অল্প করে বারে বারে পান করতে হয়। এখান থেকে প্রিয় কিছু কবিতার লাইন উল্লেখ করছি। 


                   দুর্লভ জন্ম
             একদিন এই দেখা হয়ে যাবে শেষ,
             পড়িবে নয়ন 'পরে অন্তিম নিমেষ।
             পরদিনো এইমতো পোহাইবে রাত,
              জাগ্রত জগৎ- 'পরে জাগিবে প্রভাত।


মানব জনম বড়ই দুর্লভ, একদিন সবাইকেই চলে যেতে হবে, একদিন অন্তিম সময়ের নিশ্বাস পড়বে। তারপরও পৃথিবী চলবে আপন গতিতে শুধু আমরাই থাকবোনা সেই নতুন প্রভাতে।


            " মরিতে চাহিনা এই সুন্দর ভুবনে,
             মানবের মাঝে আমি বঁচিবারে চাই।
             এই সূর্য করে এই পুষ্পিত কাননে
             জীবন্ত হৃদয়- মাঝে যদি স্থান পাই! "


হাজার বছরের বিরল প্রতিভা সম্পন্ন ব্যাক্তি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তিনি তার কর্মের মাধ্যমে জীবন্ত হৃদয়ের স্পন্দন হয়ে বেঁচে আছেন। কবি দেহের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু কবির আত্মা আজো মিশে আছে লাখো হৃদয়ের ভালোবাসার মাঝে। কবির ক্ষয় নাই, মৃত্যু নাই। 


             " অতিথি"
প্রেম এসেছিলো, চলে গেল সে যে খুলিয়া দ্বার
                 আর কভু আসিবে না।
বাকী আছে শুধু আরেক অতিথি আসিবার 
                    তারি সাথে শেষ চেনা।
সে আসি প্রদ্বীপ নিবাইয়া দিবে একদিন
                       তুলি লবে মোরে রথে--
নিয়ে যাবে মোরে গৃহ হতে কোন গৃহহীন
                        গ্রহতারকার পথে।।


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখনীতে জীবনের বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে, এসেছে প্রেম, এসেছে মানবতা, এসেছে বিরহগাথা, এসেছে নবচেতনার দখিন হাওয়া। এক জনমে তার লেখনীর সবটুকু স্বাদ হয়তো গ্রহণ করার সময় সুযোগ হবেনা। তবু তার প্রতি গভীর প্রেম কখনো ফুরোবার নয়। তার লেখনীর সরোবরে অবগাহনে নবচেতনার উন্মেষ ঘটে, জীবনে আসে বসন্ত, আসে উচ্ছাস, আসে ২৫ শে বৈশাখ। যে দিনটির স্মরণে কবি লিখেছেন  ;




আজ মম জন্মদিন। সদ্যই প্রাণের প্রান্ত পথে
ডুব দিয়ে উঠেছে সে বিলুপ্তির অন্ধকার হতে
মরণের ছাড়পত্র নিয়ে।  মনে হতেছে,  কী জানি,
পুরাতন বৎসরের গ্রন্থিবাঁধা জীর্ণ মালাখানি।


****************************************************************************

               

            আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান
                প্রাণের আশা ছেড়ে সপেছি প্রাণ।।
                 যতই দেখি তারে ততই দহি,
                 আপন মনো জ্বালা নীরবে সহি,
                 তবু পারিনা দূরে যেতে, মরিতে আসি-
                  লইগো বুক পেতে অনলবান।।
                   যতই হাসি দিয়ে দহন করে
                    ততই বাড়ে তৃষা প্রেমের তরে,
                     প্রেম-অমৃতধারা ততই যাচি
                    যতই করে প্রাণে অশনি দান।।
                                   --- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



2 comments:

  1. অসাধারণ একটা লিখনি। লেখকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। আরও বেশি করে লিখা চাই।

    ReplyDelete

Thank u very much