উত্তর ইউরোপের ভ্যানিস খ্যাত, হ্রদের শহর বুরুজ
------------------------------- যূথিকা চৌধুরী
আমি যেখানেই ট্যুরে যাই সেই শহর , সেই জায়গায় সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা সঞ্চয় করে নেই আগেভাগে ।তখন যা'কিছু দেখি সবই জীবন্ত মনে হয়,আপন লাগে।
মেঘলা আকাশ! সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। মনে মনে ভেবে নিলাম মৌসুম যেমনই হোক, আজ সাইকেল নিয়ে সারা বুরুজ শহর টোটো করে ঘুরবো। ছোট ছোট পাথর বসানো রাস্তা। সহজ নয় সাইকেল চালানো,তাতে কী!? আমি উল্টো পথে চলা মানুষ। কঠিন কাজ করতে ভালোলাগে।
আমাদের হোটেল 'ভিলা নস্ট্রা' 'ডামে' শহরে।বুরুজ থেকে পাঁচ কিলোমিটার ভিতরে। এই শহর ভরা অসংখ্য ভিলা মাথা উচু করে শোভাবর্ধন করছে। দেখেই বোঝা যায় একসময় পয়সাওয়ালাদের বসবাস ছিলো এই ভিলাগুলোতে।এই ভিলাগুলোই এখন 'বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট ' হোটেলে পরিনত হয়েছে। এর'ই একটার মাঝে আমরা তিনরাত কাটাবো। ভিলাগুলো আগের মতই সাজানো গুছানো পরিপাটি। এককথায়,দারুণ রাজকীয় ব্যাপার স্যাপার।
ইউরোপের এই এক সমস্যা, সামান্য সময়ের মধ্যে ওয়েদারের কি পরিবর্তন হতে পারে কেউ জানে না। একটা প্রবাদ আছে, ইউরোপে 'থ্রী ডাব্লিউ'তে বিশ্বাস করা মুস্কিল। ওয়েদার, উইম্যান আর ওয়ার্ক! যদিও এই প্রবাদ আমার পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।
ছোট্ট শহর বুরুজের সৌন্দর্যের কথা ইউরোপবাসী মাত্রই জানে। শহরজুড়ে সাজানো লেক না দেখলে, বোট ক্রুজ না করলে এই শহরে আসা বৃথা। একেবারে ছবির মতো মনোমুগ্ধকর, হৃদয় কাড়া এই বুরুজ শহর আর ঝকঝকে সাদা নীলে ছাওয়া আকাশ! লেকের দু'পাশে ১২'শো শতাব্দীর তৈরী পাথরের বাড়ীঘর। বাড়িগুলোর একটা অংশ লেকের ভিতর নেমে গ্যাছে। দেখে আনন্দে চিৎকার করে উঠলাম। মেয়ে বললো মম, আমরা আগেও এখানে এসেছি,মনে নেই? তাতে কী? আমার সবকিছু দেখে মুগ্ধ হবার একটা রোগ আছে।
এই লেক দেখে মুগ্ধ হয়েই হয়ত বলিউড মুভি 'পিকে' র একটা অংশ এখানে শ্যুটিং হয়েছিলো।
পর্যটকদের জন্য সবরকম ব্যাবস্থায় রয়েছে বুরুজে।এত পরিস্কার পরিছন্ন। একটা কাগজ বা চিপসের প্যাকেট কোথাও পড়ে নেই। রাস্তার দু'ধারে হরেকরকম ফুটন্ত ফুল সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।
প্রিয়তমা ব্রুজ সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়।ব্রুজ বেলজিয়ামের ওয়েস্ট ফ্লান্ডারস প্রদেশের রাজধানী। দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমে শহরটির অবস্থান। পুরো শহরের আয়তন ১৩৮ কিলোমিটার, যা আমাদের চট্টগ্রাম শহরের থেকে ছোট। বুরুজ একটি ঐতিহাসিক শহর। শহরের সিটিসেন্টার ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্থান পেয়েছে।
হ্রদের শহর ব্রুজকে কখনো কখনো বলা হয়ে থাকে উত্তরের ভেনিস। এই শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ল্যান্ডমার্কের নাম বেলফ্রাই।১২৪০ সালে স্থাপিত এই সুউচ্চ ভবনের সৌন্দর্য নিয়ে ইংরেজ কবি হ্যানরী ওয়ার্ডাস ওয়াথ লংফেলো লিখেছেন তার বিখ্যাত কবিতা 'বেলফ্রাই অফ ব্রুজেস'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপের অনেক শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রিয়তমা বুরুজ ছিলো নিরাপদ।
মধ্যযুগীয় নির্মাণশৈলী আর স্থাপত্যকলায় তৈরী ভবনের পাশাপাশি কিছু আধুনিক ভবনও চোখে পড়ে ব্রুজের মনোহর হ্রদের গাঁ ঘেঁষে।
ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে পর্যটকরা শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিশাল আকৃতির ঘোড়ায়টানা গাড়িতে চড়ে শহরের সৌন্দর্য অবলোকন করছে।
পাথরের রাস্তায় ঘোড়ার ক্ষুরের আওয়াজ চোখ বন্ধ করলে আমার মনোজগতে এখনো বিচরণ করছে....
No comments:
Post a Comment
Thank u very much