Sunday, August 8, 2021

#আজ_(বঙ্গমাতা)_রেণুর_একানব্বইতম_জন্মদিন_# ------✒️📝 ওয়াহিদ ফেরদৌস

 





#আজ_(বঙ্গমাতা)_রেণুর_একানব্বইতম_জন্মদিন_#

-----------------✒️📝 ওয়াহিদ ফেরদৌস

একটি বহুল প্রচলিত বাক্য, 'সব শ্রেষ্ঠ পুরুষের পেছনে থাকে এক নিভৃতচারী নারীর ভূমিকা'। 'বঙ্গমাতা' শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব' সম্পর্কে লিখতে গেলে মনে হয় এই বাক্যটি এই মহীয়সী নারীর ক্ষেত্রে যথাযোগ্য প্রবচন হওয়া আবশ্যক।


বাস্তবিক বঙ্গবন্ধুর সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার নেপথ্যে, একদিকে যেমন তাঁর পিতার দৃঢ় সমর্থন ও অর্থনৈতিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, তেমনি গৃহকোণে বালিকাবধূ  থেকে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী, সন্তানদের মা, ও পুত্রবধু হিসেবে 'রেণু' জাতিরপিতার লক্ষ অর্জনে আপোষহীন অবস্থান এবং বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হওয়ার কারণে ব্যক্তিগত সুখ,ভোগ-স্বাচ্ছন্দ বিস্বর্জন দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে পারিবারিক জীবনের দ্বায়িত্ব-কর্তব্যের চাপ থেকে মুক্তি দিয়ে, জাতিকে পরম লক্ষ স্বাধীনতার পথে নেতৃত্ব প্রদানে, সর্বক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে, সম্ভাব্য সব রকমের সহায়তা দিয়েছেন।





অন্যদিক থেকে বঙ্গবন্ধুর পিতাকেও সে যুগের নয় বরং এ যুগের পরিপ্রেক্ষিতে ও একজন অতি আধুনিক এবং অসাধারণ দুরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখতে পাই-তাঁর অসাধারণ উক্তির মধ্যে! "রাজনীতি কর আপত্তি করবো না--- তবে পড়া-লেখা না শিখলে মানুষ হতে পারবেনা"।


একসময় চারপাশের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যখন তাঁকে বলতেন 'আপনার ছেলে যা আরম্ভ করেছে তাতে তার জেল খাটতে হবে'। তখন 'শেখ লুৎফর রহমানের' অসামান্য উক্তি ছিল, 'সে দেশের জন্য কাজ করছে,  অন্যায় তো করছে না'!



এই পিতার সংসারে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল বাবা-মা হারা তিনবছর বয়সের 'রেণু' তেরো বছর বয়সের 'খোকার' বিবাহিত স্ত্রী হয়ে! ভবিষ্যতে যিনি বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা-স্থপতি বঙালি জাতির পিতা হবেন,এবং তাঁরই সু-যোগ্য সহধর্মিণী হয়ে উঠবেন! সেই ঘটনাটিও বাঙালি জাতির জন্য সমান তাৎপর্যপূর্ণ। 




" বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী' অর্ধেক তার নর" 

কবি নজরুলের কবিতাংশের এই অমর বাণীটি 'রেণু' নামের এই নারীর জন্যই রচিত হয়েছিল হয়তো! বিশ্বের মহান সৃষ্টিতে যেসব নারীর নাম উল্লিখিত হয় তাঁরা স্বগুণে আপন মহিমায় ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। যেমন-প্রীতিলতা,বেগম রোকেয়া প্রমুখ, এরপর যে নামটি সগৌরবে উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন 'রেণু'। 



যাদের কথা নজরুল বলেছেন- '"জগতের যতবড় জয়, বড় অভিযান, মাতা-ভগ্নি ও বধুধের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান"

সেই নারী, সেই মাতা,সেই ভগ্নি,সেই বঁধু'দের অন্যতম হলেন 'মুজিব' পত্নী 'শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব' আমাদের অতল শ্রদ্ধার, অসীম গর্বের, 'বঙ্গমাতা' পরম মমতাময়ী 'মা'। 


সকল মহৎ ও সফল ব্যক্তির সাফল্যে 'প্রেরণা দিয়েছে,শক্তি যুগিয়েছে বিজয়লক্ষ্মী নারী' এইসব প্রেরণা ও শক্তির পেছনের নারীর কথা কখনো প্রকাশ পেয়েছে,কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই অপ্রকাশ্য রয়েগেছে। তেমনি একজন আমার 'মা' রেণু!



এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে আমরা দেখেছি অভিজাত ও শিক্ষিত ব্যক্তিরাই নেতৃত্ব দিয়েছন,বিশেষ করে নবাব ও জমিদার পরিবার। সেইসাথে মাড়োয়ারী, ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সন্তানেরা ছিল। কারণ এদের অর্থবিত্ত ছিল প্রভাব ও প্রতিপত্তিও ছিল।


ইতিহাসে খুব কম রাজনৈতিক নেতার পরিচয় পাওয়া যায়, যিনি পরিবার ও সমাজের টানাপোড়েনের মধ্যদিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন, যাদের প্রধান ভিত্তি,শক্তি ও উৎস ছিল জনগন! সেই বিরল দৃষ্টান্তটি স্থাপন করেছেন আমাদের টুঙ্গিপাড়ার 'খোকা'।


যে খোকা একাধারে বিপুলভবে জনসমর্থন অর্জন করেছেন। নিজের ও জনগনের শক্তি,সাহস বৃদ্ধি পায় সেই কাজটিই তিনি করতেন, জনগনের সাথে বেঈমানী করেন নি, জনকল্যান,সমাজসংস্কারের কথা ভবতেন, নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে কুন্ঠাবোধ করেন নি! তাই তিনি হয়ে ওঠেন স্বভাবজাত কিংবদন্তি,ওয়ে ওঠেন বিপ্লব ও স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা।


আব্রাহাম লিংকনের জীবন সংগ্রামের কথা আমরা জানি, শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের জনপ্রিয়তার কথা আমরা শুনেছি, হোসেন সহীদ সোহরাওয়ার্দীর দেশপ্রেমের কথা আমরা শুনেছি, মাহাত্মাগান্ধীর আত্মত্যাগের কথা আমরা শুনেছি! কিন্তু বাংলাদেশের স্থপতি,স্বাধীনতার রূপকার,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর প্রাণপ্রিয়তমা 'রেণু'র কথা আমরা কতটা জানি!? আমাদের প্রজন্মরা কতটুকু জানে!?


বঙ্গবন্ধু নামের এই 'খোকা' মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি সাধারণ মানুষর জীবনঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাদের ভলোবেসেছেন, ভালোবাসা পেয়েছেনও। তাই তাদের অধিকার নিয়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন! স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন! বীরের জাতি হিসেবে বিশ্ব-দরবারে "বাংলাদেশ" নাম প্রতিষ্ঠা করেছেন! বাঙালি জাতিকে শিক্ষিত ও উন্নত জীবনের অধিকারী করতে চেয়েছেন, তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তার প্রধান আধার ছিল মানুষ,মানুষ এবং মানুষ।


এই মানুষের জন্যই তাঁর আদর্শ,দেশপ্রেম এবং সাহস। ধর্মবর্ণ, শ্রেনীগোষ্ঠী নির্বিশেষ সব মানুষর প্রতি তাঁর অঙ্গিকার,দায়বদ্ধতা ও আত্মত্যাগ ইতিহাসের গবেষণায় বিশ্লেষিত হওয়া উচিৎ । এই সবকিছুর নেপথ্যে যে নিভৃতচারীনি মানুষটি নিরলস ভূমিকা পালন করেছেন তিনিই হলেন আমাদের 'মা' বঙ্গমাতা 'শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।


বঙ্গবন্ধুর জীবনসঙ্গী 'রেণু'র সম্পর্কে একটি কথা বলবো, আমার মনে হয়েছে তিনি একজন ঈশ্বর প্রদত্ত নারী ছিলেন! কবির ভষায় বলতে পারি- "রাজা করিতেছে রাজ্য শাসন রাজারে শাসিছে রাণী, রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি।"



বঙ্গবন্ধুর জীবনে তিনি ছিলেন একটি 'বাতিঘর' এবং মাইলস্টোন, যেমন-১। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর বিবাহ। ২। বঙ্গবন্ধুর বিএ পরীক্ষার সময় কলকাতায় গিয়ে অবস্থান। ৩। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অর্থের যোগান। ৪। ১৯৫৪সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর তিনি সন্তান সহ ঢাকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস। ৫। ১৯৬৭ সালে ছাত্র-জনতার দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্যারোলে মুক্ত হয়ে আইয়ুবের গোলটিবিল বৈঠকে যেতে নিষেধ করা। ৬। ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ভাষন দিতে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন "তোমার অন্তর যা চাইছে আজ তা-ই বলবে"। ৭। ৩০ জুলাই ১৯৭৫ সালে দুইকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা কে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া। ৮। ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫'এ বঙ্গবন্ধুর  সাথে কুলাঙ্গার ঘাতকদের বুলেটে সাহাদাত বরণ করে মরণেও তাঁর সঙ্গী হওয়া!



সবশেষে- আমি বিস্মিত হই! বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁর ভূমিকা নিয়ে! যার কোন প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ ডিগ্রী ছিলনা,ছিলনা কোন রাজনৈতিক চর্চা, তথাপি এমন রাজনৈতিক দুরদর্শি, এতোটা মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান, এমন মানবিক, এতোই সহনশীল,ত্যাগী ও দেশপ্রেমীক, শতশত সাধারণ মানুষদের আবদার অভিযোগ, অনুযোগ সামলানো, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সময় দেওয়া,উকিলদের সাথে পরামর্শ, বঙ্গবন্ধুর শগতশত আত্মীয়স্বজন দের চাহিদা, তারপর সন্তানদের সবরকম দ্বায়িত্বপালন কি করে সম্ভব!? কোন্ অদৃশ্য বা দৈবশক্তি বলে তিনি তা পারতেন!? 



এমন বিরামহীন পরিশ্রমী,সঠিক দিক নির্দেশক,এমনই দেশপ্রেমী নারী'র এমন নজীর পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই! স্যালুট বঙ্গমাতা। আমি এই মহীয়সী, গরবিনী মায়ের শুভ জন্মদিনে আমার সবটুকু ভালোবাসা ও অতল শ্রদ্ধা তাঁর চরণে ওজাড় করে দিলাম। হে মহান আল্লাহ, আপনি আমাদের এই শহীদ মা'কে জান্নাতুল ফিরদৌস নসীব করুন।

No comments:

Post a Comment

Thank u very much