Saturday, August 14, 2021

গল্পঃ #হায়াত/পর্বঃ ২/ সাহিল রহমান

#হায়াত



পর্বঃ ২

সুমি আসফাককে এমন অস্থির হতে কখনো দেখনি, সুমিকে এভাবে জোর করে আসফাক কেন বাবার বাড়িতে রেখে গেল সেটা কোন ভাবেই মাথায় আসছে না তার। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে আসফাক চলে যাবার কিছুক্ষণ পরেই সুমি বদিকে ফোন করেছিল, বদির মা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন ! 


তাহলে এমন কি হল যে আসফাক সুমিকে এভাবে মিথ্যা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল?  আসফাকের এই ব্যাবহারে ভেতরে ভেতরে এক অজানা সন্দেহ উঁকি দিতে লাগল সুমির মনে, আর এগুলো ভাবতে ভাবতে এক সময় সুমির চোখ লেগে আসল। ঠিক তারপর মুহূইর্তে সুমির মাথার উপর সজোরে সিলিং ফ্যানটা খুলে পড়ে, বিকট একটা শব্দ আর চিৎকার হবার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারায় সুমি। 


~


ওটির বাইরে পাগলের মতন এদিক সেদিন পায়চারি করছিল আসফাক, ঠিক ভোর হবার আগেই সুমির মৃত্যুর সংবাদ পায় সে। সুমির বাবা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেও আসফাক একদম পাথর বনে যায়। আসফাকের কানে  তৎক্ষণাৎ একটি কথাই বাজতে থাকে, আর তা হল গত রাতে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ভেসে আসা অতি পরিচিত কণ্ঠস্বর, 

“আমি আসফাক… ২৭ বছর ভবিষ্যৎ হতে ছুটে এসেছি সুমিকে বাঁচাতে…”


সঙ্গে সঙ্গে সিধান্ত নিয়ে নেয় আসফাক, সময় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে পা বাড়াবে সে, আর এই কাজ সম্পন্ন করতে এই সমাজ হতে একদম দূরে চলে যাবে… 


~


২৭ বছর পর…


আসফাকের মস্তিষ্কে একই সাথে যেন দুটি ঘটনা খেলে যায়, সেদিন রাতে সিলিং ফ্যান খুলে সুমির এক্সিডেন্টের কিছুদিন পরেই আসফাক পাইকপাল নামক এক মফস্বল গ্রামে নিজের রিসার্চের ঘাঁটি তৈরি করে, পরিচিত সবাই আর সমাজ ফেলে চলে আসে এখানে। এই গ্রামে আসফাক আগে কোন দিন আসেনি কিন্তু তবুও কেন যেন আসফাকের মনে হয় এইখানে সে আগেও এসেছে, এই মানুষ গুলোকে সে আগেও দেখেছে, কিন্তু মস্তিষ্কের এই স্মৃতি গুলো খুব দূরে থেকে হানা দেয় আসফাককে, এগুলো খুবই ঝাপসা। 


নিজের তৈরি টাইম মেশিনের সামনে দাড়িয়ে আছে আসফাক, বারবার মনে হচ্ছে এই মেশিনটার সামনে সে যেন আগেও একবার এসে দাঁড়িয়েছে, দীর্ঘ সময় নিজের যুক্তির সাথে নিজে নিজে তর্ক করার পর আসফাক একটি সিধান্তে আসে আর তা হল, সেদিনের ফোন কলটা সম্পূর্ণ সত্যি ছিল, আসফাক এই নিয়ে তার জীবনে দ্বিতীয় বারের মতন টাইম ট্রাভেল করছে, আর তাই দুটি সময়ে ঘটে যাওয়া দুটি স্মৃতি প্যারালালি অবস্থান করছে আসফাকের মস্তিস্তকে !


মেশিনে উঠে সময় ভ্রমণ করার আগ মুহূর্তে আরও একবার কিছু একটা ভাবল আসফাক, তারপর ঠিক করল অতীতে গিয়ে তাকে কি করতে হবে, প্রথম সময় ভ্রমণের ভুল এবার করা যাবে না। সুমিকে তার বাবার বাড়ি পাঠানো যাবে না কোন ভাবেই, আর তাই আসফাক ২৭ বছর আগের সেই রাতে না গিয়ে সময়কে ঠিক করল ২৭ বছর আগের ঠিক দিনের বেলায়। তারপর হাতের সামনের লাল বোতামটি চেপে ধরল, সেই সাথে এক বিশাল আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে গেল সে… 


~


জ্ঞান আসার পর আসফাক উপলব্ধি করল এই মুহূর্তে ২৭ বছর আগের অতীতে অবস্থান করছে সে, দ্রুত বাইরে বের হয়ে এল আসফাক। মাত্রই সকাল হয়েছে, চারিপাশে সমস্ত দোকান-পাট বন্ধ, নির্জন রাস্তা, কিন্তু আসফাকের বেশ পরিচিত এই রাস্তা গুলো, স্মৃতির পাতায় এই ছবি খুব সযত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছে আসফাক। 


অল্প কিছুদূর হেটে একটি চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়াল আসফাক, দোকানদার মাত্রই দোকান খুলছেন, আসফাককে দেখে একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল সে। উস্ক-খুস্ক কাঁচা-পাকা চুল, প্রায় সাদা হয়ে আসা  দাড়ি, কেমন যেন হারিয়ে যাওয়া দৃষ্টির একজোড়া চোখ। 


পুনরায় দোকান খোলার জন্য হাত লাগাল দোকানদার আর কিছুক্ষণ পরেই খুসখুসে গলার একটা কণ্ঠ কানে ভেসে আসল তার, “ভাই একটা ফোন করা যাবে! খুব দরকার…” 


দোকানদার লক্ষ্য করল তার সামনে দাড়িয়ে থাকা উদ্ভাস্তের মতন লোকটা হাতে একটি ৫০০ টাকার নোট তার  দিকে তাক করে দাড়িয়ে আছে, লোকটার চোখের দৃষ্টিতে কি যেন একটা ছিল, দোকানদার তাকে কোন প্রশ্ন করল না, পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে লোকটার হাতে দড়িয়ে দিল। 


দোকানদারের কাছ হতে মোবাইলটা হাতে তুলে নিল আসফাক, তারপর বলল, “একটা বেনসন সিগারেট দিন”, দোকানদার একটা আমান প্যাকেট ছিঁড়ে আসফাকের হাতে একটি সিগারেট ধরিয়ে দিতেই সিগারেট জ্বালিয়ে সামান্য দূরে সরে গেল আসফাক। 


দোকানের ড্রয়ারের উপর পাঁচশ টাকার নোটটা পড়ে আছে, দোকানদার লক্ষ্য করল চকচকে পাঁচশ টাকার নোটটা নতুন কিন্তু এটাকে দেখতে কেমন পুরনো লাগছে, মনে হচ্ছে কেউ বহু বছর এই টাকাটা আলাদা করে চাপা দিয়ে রেখেছিল, টাকাটা যে আসল সেটা পুনরায় ভাল করে দেখে মনের সন্দেহ দূর করল দোকানদার, তারপর কেতলিতে আগুন দিল সে। 


কেন যেন মনের মধ্যে অস্থিরতা নিয়ে নিজের নম্বরেই ডায়াল করল আসফাক, এইবার কোন ঝামেলা হলে চলবে না, এটা তার দ্বিতীয় সময় ভ্রমণ, সেই হিসেবে ৫৪ টি বছর পার করেছে আসফাক, শুধু একটি উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য আর তা হল সুমিকে বাচাতে হবে তার! 


~


ভোর বেলা মোবাইল বাজার শব্দে ঘুম ভাঙ্গল আসফাকের, অপরিচিত একটি নম্বর হতে বারবার কে যেন ফোন করে যাচ্ছে, অনিচ্ছা সত্ত্বে ফোনটা ধরল আসফাক, কিন্তু ফোন ধরার সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ওপাশের কথা শুনে মুহূর্তে ঘুম উবে গেল, একজন ভারী পরিচিত কণ্ঠ বিড়বিড় করে আসফাকের ল্যাবের পাসওয়ার্ড বলছে, “********” আসফাক খুব ভাল করেই জানে আসফাক ছাড়া এই পাসওয়ার্ড জানা অন্য কারো পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার! 


— কে আপনি? বিচলিত হয়ে ফোনের ওপাশের মানুষটাকে প্রশ্ন করল আসফাক। 

— আমি কে এটা বুঝতে তোমার এত সময় কেন লাগছে আসফাক? ফোনের ওপাশের মানুষটার পাল্টা প্রশ্নে আরও বিচলিত হয়ে গেল আসফাক। আসফাক পুনরায় কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই ওপাশের মানুষটার কণ্ঠ শুনতে পেল সে। 


— আমি তুমি! আমি আসফাক!  ২৭ বছর পরের ভবিষ্যৎ হতে এসেছি, আমি যা বলি সেটা খুব মনোযোগ সহকারে শোন। হিসেবে এটা আমার দ্বিতীয় সময় ভ্রমণ, এই সময় ভ্রমণের উদ্দেশ্য সুমিকে বাঁচানো। আজ রাতে সুমিকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে যাবার পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে তোমাকে, সুমিকে ঘর হতে বের হতে দেয়া যাবে না, তা না করলে সুমি মারা যাবে। প্রথম বার গাড়ি দুর্ঘটনায় আর দ্বিতীয় বার বাবার বাড়িতে সিলং ফ্যান খুলে সুমি মারা গেছে, সুতরাং সুমিকে এবার আর ওই বাড়িতে নেয়া যাবে না, ওখানেই ওর মৃত্যু লেখা, সুতরাং যদি আমরা সুমিকে এই স্থান হতে সরিয়ে রাখতে পারি তাহলেই ওকে বাঁচাতে পারব। 

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললেও, সমস্ত কথাই খুব সাবধানে বলেছে আসফাক, যেন অতীতের আসফাক তার 

কথাগুলো ধরতে পারে। 


ফোনের ওপাশের লোকটার কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল আসফাক কিন্তু অবিশ্বাস করল না, লোকটার কথার ধরন, বাচনভঙ্গি সব কিছুই আসফাকের মতন। আর লোকটা আসফাকের ল্যাবের যেই পাসওয়ার্ড বলেছে সেটা একটি অকাট্য প্রমান ! কিন্তু মনের মধ্যে আসফাকের অবিশ্বাসের প্রশ্ন, সময় ভ্রমণ কি সত্যি সম্ভব? 


— তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছ? ফোনের ওপাশ থেকে পুনরায় সেই কণ্ঠটা শুনতে পেল আসফাক।


আসফাক তার ভবিষ্যৎ পরিচয় দেয়া মোবাইলের ওপাশের মানুষকে মুখে কিছু বলতে পারল না, শুধু একটি শব্দ করল মাত্র, “হু”


লোকটা সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কেটে দিল। আসফাক দেখল সে রীতিমতন ঘামছে, গেঞ্জি সম্পূর্ণ ভিজে গেছে তার, পাশেই সুমি সম্পূর্ণ ঘুম, সুমিকে দেখে ভয়ে কলিজা যেন শুকিয়ে গেল আসফাকের, আজ রাতে সুমি মারা যাবে? হায় খোদা... 


~


ব্যাগের মধ্যে হতে বাইনুকুলার বের করে সুমি আর আসফাকের বাড়ির সামান্য দূরে অবস্থান করল ভবিষ্যৎ হতে আসা আসফাক, রাত অব্দি সময় আছে তার কাছে, সুতরাং কি হয় দেখে যেতে হবে। 


~


সকালে উঠে বেশ অবাক হল সুমি, আসফাক বিছানায় নেই, একটু হেটে সামনে যেতেই লক্ষ্য করল আসফাক বারান্দায় বসে কি যেন ভাবছে। সাধারণত আসফাক প্রায়ই রাত জেগে কাজ করে, তাই সকাল সকাল কখনই উঠতে পারে না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আসফাককে জোর করে ঘুম থেকে তোলে সুমি। যদিও সুমি এই বিষয়টা খুব উপভোগ করে কিন্তু আসফাককে সকালে ঘুম থেকে জাগানো বেশ কঠিন কাজ। 


কিন্তু আজ সেই মানুষটা সুমির আগে ঘুম থেকে উঠে বসে আছে ! ব্যাপার কি? 


— তুমি ঠিক আছো তো? কোন সমস্যা? বেশ চিন্তার স্বরে আসফাকের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল সুমি। 

আসফাক ঠিক নেই, মহা সমস্যা আর বিরাট চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু এই সমস্যার কথা সুমিকে বলা সম্ভব নয়। আসফাক নিজের মনের কথা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক হয়ে বলল, “তেমন কিছু না, আজ কেন জানি অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে না, তোমার সাথে সারা দিন একা কাটাতে ইচ্ছে করছে” 


আসফাকের কথা শুনে একটু অবাকই হল সুমি, সুমি জানে আসফাক সুমিকে তার জীবনের থেকেও বেশী ভালবাসে কিন্তু রোমান্টিক পুরুষ সে কখনই নয়, আসফাকের মুখে এই ধরনের কথা কেন যেন অন্য রকম মনে হল সুমির কাছে। আসফাককে সুমি বহু বছর ধরে চেনে, সুতরাং আসফাকের স্বভাব বহির্ভূত কোন কাজ সুমির চোখে পড়বেই। 


সুমি ভ্রু কুঁচকে আসফাককে জিজ্ঞাস করল, কিন্তু আজ না বাবার বাসায় যাবার কথা আমাদের? 

সুমির কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে সুমির হাত ধরে ফেলল আসফাক, তারপর বলল, “আজ বাদ দাও, দুইজন একসাথে আজকের দিনটা কাটাই…” 


আসফাকের এমন ব্যাবহারে আরও অবাক হল সুমি, কিন্তু কিছু বলল না সে, একটা বিসৃত হাসি দিয়ে আসফাকের চুল গুলো এলোমেলো করে বলল, “আজ কাল দেখছি তুমি বেশ রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছ!” 

এটুকু বলে চলে গেল সুমি, কিন্তু মনের মধ্যে তার খচখচ করতে লাগল আসফাকের এই অচেনা ব্যাবহারে। 


~


সন্ধ্যা নামছে, দূর হতে আসফাক তাকিয়ে আছে নিজের অতীতের দিকে, সুমি আর আসফাকের চালচলন দেখে মনে হচ্ছে ওরা আজ বাইরে বের হবে না। বিষয়টা আঁচ করতে পেরে একটু সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল দূরে বাইনুকুলারে তাকিয়ে থাকা আসফাক। পাশের এক মসজিদে ওয়ায মাহফিলের আয়োজন চলছে, ইতিমধ্যে ওয়াজ শুরু হয়ে গেছে, কোন এক বক্তার কথা কানে ভেসে আসছে, যদিও সেই মুহূর্তে আসফাকের নজর আর ধ্যান দূরে অন্যদিকে। 


~


সারা দিন আসফাক সুমিকে নিয়ে নিজেদের মতন কাটিয়ে দিলেও বিকেলের দিকে বাইরে হেটে আসার বায়না ধরল সুমি, বলল “চল একটু বাইরে গিয়ে বাতাস খেয়ে আসি, সারা দিনই তো বাসায় কাটিয়ে দিলে।” 

সুমির  কথাটা শুনে বুক ধুঁক করে উঠল আসফাকের, না… না… সুমিকে আজ কোন ভাবেই বাড়ির বাইরে বের করা যাবে না। সুমির এই কথার উত্তরে কি বলবে এই চিন্তা করতে লাগল আসফাক। সুমি লক্ষ্য করল আসফাক কোন কথা ছাড়া সুমির দিকে তাকিয়ে আছে, সুমি পুনরায় আসফাককে জিজ্ঞাস করল, “কি? কথা বল না কেন?” 


আসফাক ঘোর ভেঙ্গে সুমির চোখের দিকে তাকাল, তারপর বলল, যাওয়া যেত কিন্তু আমি তো অন্য পরিকল্পনা করেছি?


আসফাকের কথা শুনে সুমি ভ্রু কুঁচকে বলল, কি পরিকল্পনা? 


রাতে দুজন ভাল মন্দ খাব, তোমার হাতের পোলাও আর কোরমা খেতে ইচ্ছে করছে, আর তার সাথে চাটনি, অনেক দিন খাই না, আজ দুজন আর বের না হই। আসফাক বেশ কাকুতি নিয়ে কথা গুলো বলল সুমিকে। বাইরে যেতে আসফাক সর্বদা মাহের, ঘরের হাজার রান্না থাকলেও সে বাইরে গিয়ে খেতে পছন্দ করে, কিন্তু আজ সে কিনা ঘরে খাবে তাই বাইরে যেতে চাইছে না, হয়েছি কি আসফাকের? সুমির মনে প্রশ্ন দানা বাদে। 


যদিও সুমি আসফাককে কিছু বলল না, ওর কথা মতন রাজি হয়ে গেল, তারপর ফ্রিজ হতে কোরমার জন্য গোস্ত আর পোলাও বের করে রাতের খাবার তৈরি করতে হাত লাগাল। 


~


নিশ্ছুপ হয়ে দূরে সুমি আর আসফাকের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছিল ২৭ বছর ভবিষ্যৎ হতে আসা আসফাক, আজকের রাতটা সুমিকে আটকে রাখতে পারলে ব্যাস কাজ হয়ে যাবে তার। এত দিনের কষ্ট সাধন হবে। ইতিমধ্যে পাশের মসজিদের ওয়াজ বেশ জমে উঠেছে, মানুষের কাছে বেশ বাহাবা পাচ্ছেন বক্তা, যদিও বক্তার কোন কথাই কানে যাচ্ছে না আসফাকের। 


ঠিক এমন সময় দূরে সুমির রান্না ঘর হতে কিছু জ্বলজ্বল করার আলো চোখে আসল আসফাকের, দ্রুত দূরবীনে চোখ লাগাল আসফাক, স্পষ্ট দেখল সুমির রান্না ঘরের ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন লেগেছে, গ্যাসের চুলোর সিলিন্ডারটার উপড়ে জ্বলে ওঠা আগুন চারপাশে হু হু করে জ্বলছে, সেই সাথে দাউ দাউ করে জ্বলে যাচ্ছে সুমিও। কানে শব্দ না আসলেও আসফাকের বুঝতে অসুবিধা হল না, অতীতের আসফাক উন্মাদের মতন চিৎকার করছে, ইতিমধ্যে সে সিলিন্ডারের আগুন নিভিয়ে ফেললেও সুমির হাল বেগতিক, ধীরে ধীরে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ চলে এসেছে, সুমিকে বার্ন হবার প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে দিতে নিচে গাড়ি স্টার্ট দিতে গেল আসফাক, বাড়ির চারপাশে মানুষের অস্থিরতা, আসফাক গাড়ি স্টার্ট দিল, পাশের বাড়ির এক মহিলা সুমিকে নিয়ে উঠে বসল গাড়ির পেছনের সিটে। ধীরে ধীরে গাড়িটা হারিয়ে গেল রাস্তায়। 


বাইনোকুলারে সম্পূর্ণ ঘটনাটা দেখার পরে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইল আসফাক, কি হল কিছুই যেন তার মস্তিষ্কে আসছে না, যা ঘটে গেছে সেটা যেন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে তার ! 


হঠাৎ পাশের মসজিদে ওয়ায মাহফিলের বক্তার একটা কথা হুট করে কানে আসল বিজ্ঞানী আসফাকের, “মানুষের হায়াত নির্ধারিত, রিজিকে যা লেখা যা আছে তার বেশী একটা ভাতও সে খেতে পারবে না!” 


কথাটা শুনে ক্রোধে ফেটে পড়ল আসফাক, তারপর বিড়বিড় করে বলল, “সুমিকে আমার বাঁচাতে হবেই, আমি এই হায়াত মানি না!”

চলবে… 


লেখকঃ Sahel Rahman



No comments:

Post a Comment

Thank u very much