Thursday, December 14, 2023

জানি আর ফিরবে না / ফারহানা হৃদয়িনী

 



★★জানি আর ফিরবে না★★

        ফারহানা হৃদয়িনী


এই বাংলার মাটিতে, একদিন এসেছিল,

মুক্তিকামী মানুষের সংঘর্ষের দিন,

বাংলার রাজপথ, মাঠ,ঘাট,বিল,

হয়েছিল বাঙালীর রক্তে রঙীন।

জানি আর ফিরবেনা তারা,

সোনারোদ ঝরা বাংলার নদী তীরে।

স্বাধীনতার বীজ বুনেছিল যারা,

বন্দীনি বাংলার কোমল বুকের পরে।

মুখে বিজয়ের গান, প্রাণে আহ্বান,

দেশকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ।

এই বাংলার নদী-নালা, খাল -বিল,

প্রশান্তিতে উড়িছে দেখ কত গাঙচিল,

এতো মুক্তিকামী মানুষের বলীদান।

আমরা বাঙালী আমরা ভুলবো না,

কখনো তোমাদের রক্তের ঋন।

লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে,

পেয়েছি আজ আমরা বিজয়ের দিন।



Saturday, December 9, 2023

তূয়া নূরের কবিতা /কৃষক

 


কৃষক

তূয়া নূর

তুমি যখন কৃষিজীবী মানুষের কথা বলো

তাদের দুঃখ দৈন্যের কথা বলতে বলতে ক্ষুধাতুর মানুষের সামনে 

অথবা টিভির পর্দায় – ভেঙে পড়ো কপট কান্নায়

তখন আমার ঘৃণা হয়।


আমি এমন কৃষকের কথা জানি যার বুকে 

তপ্ত লাভার উৎস আছে 

সময়ে সময়ে কেঁপে ওঠে বিকট শব্দে ।

তার ঋজুময় বাহুতে খাঁজ খাঁজ মাংসপেশির শৈল্পিক কারুকাজ। 

তামাটে বর্ণের চামড়ার মায়াময় ভাঁজ। 

ভাঁজে ভাঁজে জমা হয়ে আছে ত্রিকালদর্শীর পলল প্রজ্ঞা

সে তার তন্তুময় পেশীতে ধারণ করে শক্তির আধান,

যেনো সামুদ্রিক বন্দরের আধুনিক প্রযুক্তির জেটি। 

বয়োবৃদ্ধ বৃক্ষের মতো দীর্ঘ তার বয়স 

তার চোখে ভাসে অশান্ত নীলিমার ঢেউ 

সোজা হয়ে দাঁড়ালে তার ন্যুব্জ দেহ,

বনানীর মুখে ফোটে স্পর্ধিত হাসি।

ভারী দু'টো পায়ের ছাপ লেপটে থাকে নরম শিলায়

কাঁপায় শুভ্র প্রান্তর, দীঘির নিটোল জল 

অথচ তার মুখটা কতো বেশী সৌম্য,কতবেশী যৌবনমন্ত 

সকালের শিশির ঝরা ঘাসের মতো সতেজ।


বিশাল পাতার মতো বিস্তৃত তার ভারী করতল,

কতো কিছু ধরে রাখে তার শক্তিমন্ত আঙ্গুল 

হাতের তালুতে রেখা গুলো শুকনো নদীর মতো ফুটে আছে যেনো এক পৃথিবীর ম্যাপ। 

পেশল করতল দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখে লাঙলের হাতল। 

চকচকে ধাতব ফলা ফড়ফড় করে বিদীর্ণ করে পাথরের বুক,

চৈত্র খরায় তেজোবান হয় তার দ্রোহ 

শরীরের নোনা স্বেদবিন্দুর উষ্ণতা আর কালো মেঘের ভালোবাসা পেয়ে 

সবুজে ভরে যায় আদিগন্ত ফসলের মাঠ 

কেঁপে ওঠে সোনালী সুখ মনোরম রেখায় তার তামাটে ঠোঁটে। 

তার বুকে জমা হয় মোহময় ভালোবাসা 

চোখের তারায় জমে ক্রোধের পলি।


কৃষকের প্রার্থনায় নত হয়ে রাতভর জ্যোৎস্না ঝরায় রেশমি

আলো 

ঘরে ফেরা পাখী ডানা ঝাপটায় 

ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বাচ্চার কাছে সে জমা করে রাখে ভালোবাসার অবিনাশী বীজ। 

গাভীর দুধের বোটায় জমা হয় সুখ ।


তার হাতে চিক্ মিক্ করে ধারালো পাথর—সে এক সোনালী মাধব যুবক


ঘন কুয়াশায় হেঁটে যায় সূর্যের কাছে 

ভারী দু'টো পা রেখে যায় ছাপ পাললিক শিলায়। 


আমি এমন কৃষকের কথা জানি

যে শক্ত কব্জিতে ধরে রাখে শানিত পাথর 

সে যেন আদিম চিত্রকলার পেশল পুরুষ—

যারা মাটিতে প্রথম রোপণ করেছিল সোনামুখী  শস্যের বীজ। 


রক্তবর্ণ শিলাখন্ডে লিখেছিলো জীবনের নাম

দেয়ালের গায়ে এঁকেছিলো সাহসের ছবি।

শিলার স্তর জমে জমে যেমন পৃথিবীর বুক অজানা রহস্যে ভরে ওঠে সহসা

এ বুকে তেমন বিদ্রোহ জমতে জমতে 

বিকট শব্দে চৌচির হয়ে যায় কোন এক সময় 

বিষাক্ত বাতাস নীল করে দেয় মোমের শরীর।


শিল্প-সত্ত্বায় কারুময় ভঙ্গিতে 

সে তার কাঠের লাঙলের নিরেট ধাতব ফলা 

আমূল বিদ্ধ করে উর্বরা জমিনে 

ঠোঁটে কাঁপে ভালোবাসার গান 

প্রাকৃতিক ভালোবাসায় গাঢ় হয়ে ওঠে তার উত্তরপুরুষ—

ঠিক অবিকল অবয়ব তার, একই রকম চোখ

সমান অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে চোয়ালে 

তেমনি দীর্ঘ গ্রীবা, পেশল বাহু, দৃপ্ত করতল—

রক্ত নদীতে একই স্রোতের জোয়ার ভাটার খেলা।


তুমি যখন কৃষিজীবী মানুষের কথা বলো তাদের 

দুঃখ-দৈন্যের কথা বল বলতে মেকী শব্দে কেঁদে ওঠো টিভির পর্দায়—

অথবা কোন জনসমাগমে—

তখন তোমার প্রতি আমার ঘৃণা হয় 

ভীষণ ঘৃণা হয়।




Thursday, December 7, 2023

গ্রন্থ আলোচনা,"নরওয়েজিয়ান উড" / মোস্তফা অভি

 

মোস্তফা অভি

"নরওয়েজিয়ান উড" 

গ্রন্থ আলোচনা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওয়াতানাবে নানা ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তবে তার প্রথম প্রেমিকা নাওকোকে কিছুতেই ভুলতে পারেনা। ওদিকে নওকো ভালোবাসে কিজুকিকে যে কিনা আত্মহত্যা করেছে। হাসিখুশি নাওকো জীবনের কঠিন মুহূর্ত পার করতে গিয়ে এতটাই বিষণ্ন হয়ে পড়ে, সে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারিয়ে ভর্তি হয় মানসিক হাসপাতালে। গাছ-গাছালির ছায়াঘেরা এক পল্লী বলয়ে মানসিক হাসপাতাল। নওকোর বন্ধু তার মন ভালো করতে গিটারে বাজায় বিটলস এর গান- "নরওয়েজিয়ান উড" 

উপন্যাসটির মূল আকর্ষন লেখকের বাস্তবধর্মী বর্ণনা। যেন চরিত্র আর পরিবেশ বর্ণনার সাথে লেখক সবকিছু পাঠককে দেখিয়ে দিচ্ছেন।  যেখানে পার্থিব বাস্তবতার চেয়ে লেখক সৃষ্ট বাস্তবতাই যেন অধিক সত্য, বাস্তবের চেয়েও আরো বাস্তব। মুরাকামি তাঁর আখ্যান বর্ণনায় পাঠককে নিয়ে যায় অন্যরকম এক ঘোরের জগতে। যেখানে ধীরে ধীরে কল্পিত জগতের সঙ্গে পাঠক নিজেকে লীন করে ফেলে। ফলে খানিক সময়ের জন্য প্রভাবিতও হয় বটে।সম্ভবত, সেজন্যই মুরাকামি বিশ্বের অন্য সকল লেখক থেকে আলাদা জগত নির্মানের কারিগর।

ধরা যাক, উপন্যাসে বর্ণিত এক রেস্তোরাঁর কথা। লেখক দুই বন্ধুর কথোপকথনের ছলে সেখানকার খুটিনাটি সম্পর্কে পাঠককে যে ধারণা দিয়েছেন, সম্ভবত আমরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও সেসব দেখতে পেতাম না। বাস্তবকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে পাঠককে স্বপ্নের জগতে বিচরণ করানোই মুরাকামির ওস্তাদি কাজ। অনেকে এটাকে সুরিয়ালিজম অথবা ম্যাজিক রিয়ালিজম বলেও আখ্যায়িত করেন। তবে আমার মতে সেটা শুধুই "মুরাকালিয়াজম"।

পুরো উপন্যাসজুড়ে লাগামহীম যৌনতার শৈল্পিক বিচরণ।  বিষন্নতার চরম ঘোর থেকে বের হতে গিয়ে মানুষ যে সিনিয়র জুনিয়রের বাছবিচাহীন সম্পর্কের ভেতর দম নিতে শেখে, সেই নিদর্শন পাওয়া যায় ন্যারেটিভে। একজন যুবক তার চেয়ে বয়সী নারীর ভেতর খুঁজে পায় অদৃশ্য আনন্দের মেওয়া। বয়সের কারণে যতটা সাধারণ ভেবেছিল তাকে, তার চেয়ে বহুগুন আকর্ষনীয় তার যৌবনের সমস্ত কাঠামো। এ যেন শরীর নয়, মনের ভেতর মন ঢুকে শারীরবৃত্তীয় সমস্ত কলা বিনিময়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে নিরন্তর কান্না। সেই অদ্ভুত বর্ণনার উপলব্ধির কারণে মুগ্ধ পাঠক কল্পনায় ছুটে যায় অতীত জীবনের প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে।  

হারুকি মুরাকামির লেখা "নওরেজিয়ান উড" উপন্যাসটি বিশ্বের প্রায় পঞ্চাশটি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। প্রচলিত তথ্যমতে, জাপানের এমন কোনো শিক্ষিত মানুষ নেই যিনি এই উপন্যাসটি পড়েননি। এছাড়াও বইটি সারা বিশ্বে লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। আপনিও পড়ে দেখতে পারেন। হ্যাপি রিডিং!!

লেখা©®মোস্তফা অভি