Thursday, August 19, 2021

ফারহানা হোসেনের "অনুভূতি"

 


অনুভূতি 

ফারহানা হোসেন 

(“ ফারহা ডায়রী “ থেকে কিছু অংশ) 

————————————


অনুভূতিগুলো ভোতা হয়ে গেছে। খুব সকালে ডায়রী লিখি, ছোটবেলার অভ্যাস। আজ মনে হলো অবাক হবার পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে আমার।

যেমন বর্ষার মেঘলা আকাশে টলটলা বিশাল চাঁদ বা কালপুরুষ দেখলেও অবাক হইনা আর। অবাক হই না যখন দেখি কেউ অলিখিত পাপগুলো করে যাচ্ছে কিংবা কোন মহিলা এক স্বামী থাকা কালিন আবার বিয়ে করছে, আমি একটুও অবাক হই না। কারন আমার মনে হয় এমনই তো হবার কথা।

যখন শুনি এক সময় কিছু বাবা-মা ধর্ম নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করেছে তাদের ছেলেমেয়ারা বিদেশী বিয়ে করেছে; আমি একটুও চমকাই না। কারন এমনই তো হবার কথা। শুধু করুণা হয় বাবা মা গুলোর জন্য। সত্যিতো খুব কস্টের।

যখন বুঝি খুব কাছের মানুষগুলো ষড়যন্ত্র করছে আমাকে নিয়ে আমি একটুও বিচলিত হই না। কারন বিচলিত হবার বা কস্ট পাবার কিছু নেই। মানুষতো আমরা, এটা করতেই পারে তারা। 

কোন ছোট বাচ্চা রেপ হলে বা কোন ছোট ছেলে এবিইউস হলে অবাক হই না এখন আর। কারন এমনই তো হবার কথা। আজকাল শুধু বাবা মা'দের একটু সাবধান হতে হবে। আর বাচ্চাগুলোর জন্য ভীষণ কষ্ট হয় আমার। কারন তারা বুঝে গেলো পৃথিবী কতো নোংরা জায়গা।


লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। কেউ না কেউ পরিচিত। মানুষ নাই হয়ে যাচ্ছে; একটুও অবাক হই না। কারন এটাই ভাগ্য আল্লাহ লিখে রেখেছেন। ভাগ্যের উপর খবরদারী করার সাধ্য কার আমাদের! তবুও কষ্ট হয় মানুষগুলোর জন্য। আর দেখবো না কোনদিন। কিন্তু অবাক হবার পালা শেষ। কারন এতো মৃত্যু প্রতিদিন অনুভূতি শুন্য করে দিয়েছে। শুধু কষ্টগুলো গুমরে উঠে দু চারদিন খেতে পারিনা। একেই মনে হয় ডিপ্রেশন বলে। কষ্ট পাই তারপরও অবাক হইনা এই তো জীবন। 

কেউ কিছু সারপ্রাইজ বা গিফট দিলে শুধু বলি ওয়াও, একটুও অনুভূতি কাজ করে না। মনে হয় এটাই তো হবার কথা। আমি জানতাম আমাকে সারপ্রাইজ দিবে। 

এই যে দিনে দিনে অবাক হবার পালা আর অনুভূতি গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে-- আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি আর নিজে নিজে বলি নিজেকে, 'হে সৃস্টিকর্তা এমন কিছু ম্যাজিক করে দাও আমার জন্য যা দেখে আমি বিস্মিত জ্ঞানশুন্য হই'।

আমি সৃষ্টিকর্তাকে বলি, 'যা আমার তা আমার জন্যই রাখো। আমি আবার অনুভূতি ফিরে পেতে চাই এই পৃথিবীর বুকে...'

যদি কোন অপরিচিত মানুষ অধিকার নিয়ে বলে-- তুমি বাইরে যেও না অবস্হা 

খারাপ।

আমি অবাক হবো আবারও কারন কেউ তো স্বার্থ ছাড়া ফিলিংস দেখায় না আজকাল। আমি  সৃস্টিকর্তাকে বলি আমার জন্য এমন কিছু আশ্চর্য করো যাতে আমার মনে ছোট একটা পাখির গান শুনলেও অনুভূতি জাগ্রত হয়। একটা ঘাস ফড়িং উড়তে দেখলেও আমি যেন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।

অচেনা কেউ মারা গেলেও চিৎকার করে কাঁদি। কেউ ষড়যন্ত্র করলে যেন ভিষন কষ্ট পাই।

আমি চাই আবার আমার অনুভূতিগুলো ফিরে আসুক। আমি চেয়ে চেয়ে অবাক হবো। পৃথিবীর সব কষ্ট, সৌন্দর্যগুলো মনে গেঁথে।

No comments:

Post a Comment

Thank u very much