Friday, August 13, 2021

একজন পরী মনি এবং নারীর লাঞ্চনা..

 


একজন পরী মনি এবং নারীর লাঞ্চনা..

-----✒️📝জসিম মল্লিক

পরী মনির কোনো চলচ্চিত্র আমি দেখিনি কিন্তু তার নাম অনেক শুনেছি। সে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় একজন নায়িকা। পরী মনি খুবই রুপসী নায়িকা। সে ভাল অভিনেত্রীও বটে না হলে সে শুধু রুপ দিয়ে জনপ্রিয় হতে পারত না। পরী মনি একজন চলচ্চিত্র কর্মীই নন তিনি কারো কন্যা, কারো বোন, কারো বন্ধু কারো বা প্রেয়সী। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে বাংলাদেশের নাগরিক এবং একজন গর্বিত নারী। নিশ্চয়ই তার জাতীয় পরিচয় পত্র আছে, পাসপোর্ট আছে। সে বাংলাদেশের ভোটার। সে পাসপোর্ট নিয়ে দেশ বিদেশে যায়। একজন নাগরিকের যা যা করার অধিকার আছে পরী মনিরও আছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর যে অধিকারের কথা বলা আছে সবই পরী মনির জন্য প্রযোজ্য। সে অন্য আর দশটা নারীর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে শোবিজের মানুষ। মানুষকে বিনোদন দেয় সে। এঞ্জলিনা জুলি, কাজল বা রেখার মতোই তার গুরুত্ব। সরকারকে সে ইনকাম ট্যাক্স দেয়, সরকার তার অভিনীত চলচ্চিত্র থেকে আয়কর নেয়। চলচিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার রুটি রুজির ব্যবস্থা হয় যখন একটা চলচ্চিত্র ব্যবসা সফল হয়।

আচ্ছা পরী মনিকে এতো হেনস্থা হতে হচ্ছে কেনো! সে তথাকথিত বোট ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলেই কি! পরী মনি নিশ্চিতভাবে সাপের লেজে পা দিয়েছে। যারা পরী মনিকে রাতের অন্ধকারে হেনস্থা করেছে তারা টাকা ওয়ালা মানুষ। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে টাকাই সব। আইনের শাসন, মানবতা, ন্যায়বিচার মাথা কুড়ে মরে। টাকা দিয়ে বাংলাদেশে সবই করা সম্ভব। সত্যকে মিথ্যা, দিনকে রাত করা যায়। নারীদের সুরক্ষায় বাংলাদেশে যথেষ্ট শক্ত আইন থাকা স্বত্বেও নারীরা প্রতিনিয়ত হেনস্থা হচ্ছে! ধষর্ন, হত্যা, নির্যাতন, লাঞ্চনা, অবিচার থেমে নেই। ঘরে বাইরে, রাস্তায়, হাটে বাজারে, বাসে, লঞ্চে, অফিসে সর্বত্র। বাংলাদেশ পুরুষশাসিত দেশ। পুরুষের ক্ষমতার কাছে নারী তুচ্ছ। পুরুষেরা হায়েনার ভূমিকায়। সেখানে নারীরা মোটেই নিরাপদ না। নারী খেকো পুরুষেরা কখনও ভাবে না যে এই নারীই তার কন্যা, জায়া, জননী। মনে হয় তারা ঘরেও এসব করতে দ্বিধা করে না।

৩ 

পরী মনির অপরাধ কী? যে সব গল্প ফাঁদা হচ্ছে তা চর্বিত চর্বন। গল্পের স্ক্রিপ্ট সবই এক। খুবই দুর্বল স্ক্রিপ্ট। দেশের যে হাজার হজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, পাচার হয়ে যাচ্ছে, বড় বড় অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে সেসব নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নাই। কারণ এসব করছে প্রভাবশালীরা। তাদের পশমও ছুঁতে পারছে না কেউ। অথচ পুরো দেশ এক অসহায় নারীকে নিয়ে পড়ে আছে। যেনো পরী মনিকে অপমান করতে পারলে, চরিত্রহীন বানাতে পারলে, রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করতে পারলে, শাস্তি দিতে পারলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

যে দেশে নারীর সম্মান নেই, যে দেশে নারীরা নিরাপদ নয়, যে দেশে নারীদের ভোগের সামগ্রী মনে করা হয় সে দেশ কখনও মর্যাদাশীল জাতি হতে পারবে না। নারীকে ভালবাসুন, তাদের সম্মান করুন। নারী সমাজেরও উচিত তাদের মর্যাদার প্রতি, অধিকারের প্রতি সচেতন হওয়া, সোচ্চার হওয়া। পরী মনির ঘটনাই শেষ ঘটনা না। অসংখ্য পরী মনি প্রতিদিন ঘরে বাইরে কর্মক্ষেত্রে, দেশে বিদেশে নির্যাতিত হচ্ছে, লাঞ্চিত হচ্ছে। নারীর লঞ্চনা বন্ধ করতে হবে। পরী মনিদের বাঁচতে দিন।

টরন্টো ১৪ আগষ্ট ২০২১



No comments:

Post a Comment

Thank u very much