Wednesday, August 25, 2021

" বিতর্কিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন "

 



" বিতর্কিত নারীবাদী লেখিকা   
         তসলিমা নাসরিন "


           তসলিমা নাসরিন সমাজের নড়বড়ে কাঠামোতে হয়তো অপরিকল্পিত ভাবে ধাক্কাটা দিয়েছেন; ফলে ভঙ্গুর স্তুপের নিচে তিনি নিজেই যেনো চাপা পড়ে গেছেন! তারপরও জঞ্জাল সরানোর অবিরাম চেষ্টা! 


          ডাক্তার হিসেবে রোগীর পালস্ হার্টবিট যতটা বুঝতেন; উপমহাদেশের শঙ্কর বাঙালি সংস্কৃতির নাড়িনক্ষত্রের সমীকরণ ততটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন কিনা; তা নিয়ে নিশ্চয়ই বিতর্ক রয়েছে। 


         নারীবাদী ও ধর্মীয় সমালোচনামূলক রচনার কারণে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। তার রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্মবিরোধী মতবাদ প্রচার করায় তসলিমা বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন এবং ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে বাধ্য হন। 


         ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে আগস্ট ময়মনসিংহ শহরে তসলিমা নাসরিনের জন্ম হয়। তার মাতা ঈদুল ওয়ারা গৃহিণী এবং পিতা রজব আলী পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। তসলিমা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।



          তেরো বছর বয়স থেকে তসলিমা কবিতা লেখা শুরু করেন।  ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ হতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থ আকারে তসলিমার কবিতা, উপন্যাস সহ বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়। 


          ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমা কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র প্রেমে পড়েন এবং গোপনে বিয়ে করেন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের সাথে তার বিয়ে এবং ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ হয়। তিনি ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক বিচিন্তার সম্পাদক মিনার মাহমুদকে বিয়ে করেন এবং ১৯৯২ সালে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। তসলিমার কোন সন্তানাদি নেই।


           তার কাব্যগ্রন্থ ও সংবাদপত্রের কলামে নারীদের প্রতি মুসলিম মৌলবাদীদের শোষণের কথা লেখায় ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে এই পত্রিকার অফিস ভাঙচুর করা হয়। এই সময় নির্বাচিত কলাম নামক তার বিখ্যাত প্রবন্ধসংকলন প্রকাশিত হয়, যার জন্য ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। 


          ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে "লজ্জা" নামক তার পঞ্চম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে বাংলাদেশের মুসলিমদের দ্বারা একটি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা করা হয়। এই উপন্যাসটি প্রকাশের পর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মুসলিম মৌলবাদীরা তসলিমার ওপর শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে ও তার এই উপন্যাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানায়। গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষ তাকে মেলায় প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। এই বছর অক্টোবর মাসে কাউন্সিল অব ইসলামিক সোলজার্স নামক এক মৌলবাদী সংগঠন তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে।


           তসলিমা নাসরিনের সাতটি আত্মজীবনী গ্রন্থের অধিকাংশ বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়। "আমার মেয়েবেলা" নামক তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হলেও ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে এই বইয়ের জন্য তসলিমা দ্বিতীয়বার আনন্দ পুরস্কার জয় করেন। 


         ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তার দ্বিতীয় আত্মজীবনী "উতাল হাওয়া" বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে  তার তৃতীয় আত্মজীবনী বাংলাদেশ উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই বইটি দ্বিখণ্ডিত নামে প্রকাশিত হলেও ভারতীয় মুসলিমদের একাংশের চাপে পশ্চিমবঙ্গেও বইটি নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়।  ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে "সেই সব অন্ধকার" নামক তার চতুর্থ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।


         ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইসলামি ধর্মীয় আইন শরিয়া অবলুপ্তির কথা বলেন। এর ফলে ইসলামি দলগুলো তার ফাঁসির দাবিতে সমাবেশ ও দেশ জুড়ে তার শাস্তির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে জনগণের ধর্মীয় ভাবনাকে আঘাত করার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয় এবং জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেসময় এক আলোকচিত্র শিল্পীর আশ্রয়ে তিনি লুকিয়ে ছিলেন। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাকে জামিন মঞ্জুর করা হয় এবং তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।


          বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে সুইডেনে ও ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানিতে বসবাস করেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন। এই সময় তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দেশে ফেরার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হন এবং জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি ত্যাগ করে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিকট হতে তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত পান ও বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশ প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে পুনরায় জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রুজু হলে তিনি পুনরায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ১৯৯৯ থেকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন।



          দীর্ঘ ছয় বছর অপেক্ষার পর ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতে প্রবেশ করার ভিসা সংগ্রহ করতে সমর্থ হলে তিনি কলকাতা যাত্রা করেন।  পরবর্তীতে তিনি "শোধ" নামক তার একটি উপন্যাসের মারাঠি ভাষায় অনুবাদকর্মের প্রচারে মুম্বই শহরে পৌঁছানোর সময় মুসলিম মৌলবাদীরা তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার হুমকি দেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমার পিতা মৃত্যুশয্যায় শায়িত হলে তসলিমার বাংলাদেশ প্রবেশে অনুরোধ করে ব্যর্থ হন। 


          ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাকে অস্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হলে তসলিমা কলকাতা শহরে বসবাস শুরু করেন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম সৈয়দ নূরুর রহমান বরকতি নাসরিনের মুখে কালিলেপন করলে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করেন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল বোর্ড নামক একটি সংগঠন তার মুন্ডচ্ছেদের জন্য পাঁচ লাখ টাকা ঘোষণা করেন। 


         ২০০৭ খ্রী: ৯ই আগস্ট তিনি "শোধ" উপন্যাসের তেলুগু ভাষায় অনুবাদকর্মের প্রচারে হায়দ্রাবাদ শহরে গেলে অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন নামক একটি রাজনৈতিক দলের প্ররোচনায় উত্তেজিত জনতা তাকে আক্রমণ করে। ১৭ই আগস্ট কলকাতা শহরের মুসলিম নেতারা তসলিমাকে হত্যা করার জন্য বিপুল অর্থ পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ২১শে নভেম্বর অল ইন্ডিয়া মাইনোরিটি ফোরাম নামক একটি ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী কলকাতা শহরে তাণ্ডব শুরু করলে সেনাবাহিনীকে আইন ও শান্তিরক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়। এই দাঙ্গার পর নাসরিনকে কলকাতা থেকে জয়পুর হয়ে নতুন দিল্লি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।



          ভারত সরকার তাকে পরবর্তী সাত মাস একটি অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দি করে রাখে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সিমোন দ্য বোভোয়ার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হলেও তিনি ভারতে প্রবেশে অনুমতি না পাওয়ার আশঙ্কায় ফ্রান্স যাত্রা করে পুরস্কার নিতে অসম্মত হন। এই সময় তিনি নেই কিছু নেই নামক তার আত্মজীবনীর ষষ্ঠ ভাগ প্রকাশ বাতিল করেন ও কলকাতার দাঙ্গার জন্য দায়ী দ্বিখণ্ডিত নামক তার বিতর্কিত বইটির কিছু অংশ অপসারণ করতে বাধ্য হন।


         ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত মৌলবাদীরা তার প্রাণনাশের হুমকি দিলে সেন্টার ফর ইনক্যুয়ারি তাকে ঐ বছর ২৭শে মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে সহায়তা করে এবং তার খাদ্য, বাসস্থান নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।”   


          তসলিমা নাসরিনের জীবনভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র নির্বাসিত ২০১৪ সালে মুম্বাই চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পায়। ২০১৫ সালে এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র বিভাগে ৬২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে।


          তসলিমা তার উদার ও মুক্তচিন্তার মতবাদ প্রকাশ করায় দেশ-বিদেশ থেকে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।  আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার,  ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট কর্তৃক শাখারভ পুরস্কারসহ ফ্রান্স, সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল পেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ, নরওয়েভিত্তিক হিউম্যান-এটিস্ক ফরবান্ড কর্তৃক বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

 

          দেশে, বিদেশে এবং নির্বাসিত জীবনে বহু কবিতা, উপন্যাস, আত্মজীবনী ও কলাম লিখে তিনি যেমন নন্দিত  হয়েছেন; তেমন নিন্দিতও হয়েছেন। তারপরও তিনি অনেকের কাছে আধুনিক নারীজাগরণের পথিকৃত; মুখোশ আর খোলস ভাঙার চেষ্টায় অবিচল এক ব্যতিক্রমী কালজয়ী নারী।


©  হারুন-অর-রশীদ। 

(Source- "Bangladesh bans new Taslima book"- Ahmed, Kamal (13 August 1999)/BBC News(1 June 2009), Wikipedia)

Sunday, August 22, 2021

শরীরে পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করে যেসব খাবার



 


শরীরে পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করে যেসব খাবার


 (এড. মোঃ সোহরাব হোসেন ভূঁঞা(মিঠু)

আইনজীবী, জজকোর্ট ঢাকা/কুমিল্লা, বাংলাদেশ।)

শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা জন্য যেসব খনিজ প্রয়োজন তার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পটাশিয়াম। এটা হৃদপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক এবং পেশীর টিস্যুর কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুব প্রয়োজনীয়।


রক্তে পটাশিয়ামের ঘাটতি হলে বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা, বুক ধড়পড় এবং অন্যান্য অনেক প্রকারের জটিল সমস্যা হয়। দিনে কতখানি পটাশিয়াম শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এটা সবারই জানা প্রয়োজন।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীর ভাল রাখতে দিনে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের প্রয়োজন। খাবার কিংবা সাপ্লিমেন্ট ওষুধ খেয়ে শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা সাপ্লিমেন্টের চেয়ে পটাশিয়ামসৃদ্ধ খাবার খাওয়াটাকেই বেশি গুরুত্ব দেন। 


এক কাপ সাদা শিমের বিচিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পটাশিয়াম এবং ৬৭৩ ক্যালরি থাকে। এটা প্রতিদিনের চাহিদার প্রায় ১০৪ ভাগ পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে।


এ কাপ বরইতে ১ হাজার ২৭৪ মিলিগ্রাম পাটাশিয়াম এবং ৪১৮ ক্যালরি থাকে। যা শরীরের প্রতিদিনের পটাশিয়ামের ঘাটতির শতকরা ৩৬ ভাগ পুরণ করে। এছাড়া ভিটামিন এ থাকায় বরই দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং চোখের নানা রোগ সারাতে সাহায্য করে।


এক কাপ পালং শাকে ১৬৭ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং শতকরা ৭ ভাগ ক্যালরি থাকে। পালং শাক আয়রনেরও দারুণ উৎস। এটি চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং রক্তশূন্যতা  পূরণে সাহায্য করে। 


কলাতে ৪৮৭ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং ১২১ ক্যালরি থাকে। এটি প্রাণশক্তি বাড়াতেও দারুন কাজ করে। এতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায়। 


মিষ্টি আলুও পটাশিয়ামের দারুন উৎস। এতে ৪৪৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ও ১১৪ ক্যালরি  থাকে। গাজরের রসে ৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ও ৪৬ ক্যালরি থাকে। শরীরের পটামিয়ামের ঘাটতি পূরণে নিয়মিত গাজর খেতে পারেন। এছাড়া ডাবের পানি, দই, বাদাম এগুলোও শরীরে পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে সহাযতা করে। নিয়মিত পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেলে হার্ট ভাল থাকবে, মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করবে। এছাড়া এ ধরনের খাবার হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।



Friday, August 20, 2021

বানী ডিয়ায এর লেখা কবিতা " স্মৃতির পাতায় খন্ড খন্ড চিত্র "


 " স্মৃতির পাতায় খন্ড খন্ড চিত্র "

  বানী ডিয়ায 



ছোট্ট যে শিশুটি জন্মেছিলো ছোট্ট সেই গ্রামে

আছো তুমি স্মৃতির পাতায় খন্ড খন্ড চিত্রে

  সেতো আর কেউ নয় স্পস্টভাষী ন্যায়পরায়ণ, 

ব্যক্তিত্বে মহান...........

মাতৃভক্ত, অত্যন্ত দয়ালু শেখ মুজিবর রহমান ।


গোপালগঞ্জের সেই ছোট্ট কিশোর................

অক্লান্তকর্মী, প্রতিবাদী, দুর্জয় সাহসের বহমান

আর কেউ নয় নির্ভিক, রাজনৈতিক অংকুর...

মহাপুরুষ শেখ মুজিবর রহমান...................।



বিরুদ্ধবাদীদের চক্রে পড়ে যখন অাঠারোতে

যেতে হলো জেলে জীবনে প্রথম...........

রাজনৈতিক চেতনা সহসা হলো জাগ্রত......

ব্যাঘ্র শিশুর মতো ফুসে উঠেছিলো..........

সেতো আর কেউ নয়.... সোচ্চার কৈশোরের

সেই সতীর্থ বন্ধু... শেখ মুজিবর রহমান......।


কিশোর বয়সেই দিয়েছিল দোলা মনের কোণে

পরাধীনতার নাগপাশ ছিঁড়ে স্বদেশকে করবো জয়

বেজেছিলো সুর করবে ইংরেজ শাসনের অবসান

সেতো আর কেউ নয়... বর্ষীয়াণ বিপ্লবী সেনা

বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমান...................।


রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই......বাংলা চাই ধ্বনিত হতেই

মায়ের ভাষাকে কেড়ে নিতে চাইলো যে শাসক

প্রতিবাদী কন্ঠে মুহুর্মুহু ধ্বনিত হলো........

রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই....... বাংলা চাই........

কৃষক -শ্রমিক -মজুরদের সক্রিয় বঙ্গ বন্ধু

পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর শোষণ নীতির বিরুদ্ধে 

ধরলো অস্ত্র, লাঠি সোঠা, কন্ঠে প্রতিবাদের বজ্রসুর

সেতো আর কেউ নয় আমাদেরই বিপ্লবীনেতা

বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমান.............।


ভাষার দাবীতে রঞ্জিত হয়েছিলো ঢাকার রাজপথ

বায়ান্নের বাঙ্গালী...... আর রইলোনা বসে ঘরে

ফিরিয়ে দিতে হবে মা-কে তার ভাষা, দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে

তরুণ -তাজা সংগ্রামী ছাত্র-ছাত্রী-জনতা..........

কৃষক- শ্রমিক, শিল্পী -সাহিত্যিক -বুদ্ধিজীবি.........

দুর্জয়  সংকল্প নিয়ে ত্রিশলক্ষ বাঙ্গালীর

রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে নিয়ে এলো বিজয়ীবেশে

আমাদেরই প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবর রহমান ।


স্বাধীন বাংলার সুখ বুকে নিয়ে মহাউল্লাসে

ফিরে এলেন মায়ের বুকে দৃপ্ত কন্ঠে.......

জনসমুদ্রের ভীড় ঠেলে মুজিব রমনার সেই

ঐতিহাসিক বিশাল ময়দানে................

দাঁড়ালেন অশ্রু ভারাক্রান্ত কন্ঠে জানালে শ্রদ্ধা,

জানালেন শ্রদ্ধা অমর শহীদের তরে বারবার

সেতো আর কেউ নয় আমাদের রাস্ট্র নায়ক

বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ......।


হে প্রাণপ্রিয় ভাষা-সৈনিক,  রাস্ট্র নায়ক

তোমাকেই প্রাণ দিতে হলো বৃষ্টি ভেজা  

সেই শ্রাবণের শেষদিনে............

লুটিয়ে পড়তে হলো খুনীদের দাবানলের

গুলিতে, সিঁড়িতেই নির্মমভাবে হত্যা চালিয়ে

পরিবারের সদস্যদের করে দিলো নিঃশেষ।

১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সাল, করি শ্রদ্ধাভরে  স্মরন

রবে তুমি আমাদেরই হৃদয়ে হয়ে চিরদিন অম্লান 

 সেতো আর কেউ নয়, বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।

  

<<<<<<<<<<<<<<< # >>>>>>>>>>>>>>>


   ( প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে স্মরন করে লেখা) 


   ১০/৮/২০১৫ ইং

Thursday, August 19, 2021

ফারহানা হোসেনের "অনুভূতি"

 


অনুভূতি 

ফারহানা হোসেন 

(“ ফারহা ডায়রী “ থেকে কিছু অংশ) 

————————————


অনুভূতিগুলো ভোতা হয়ে গেছে। খুব সকালে ডায়রী লিখি, ছোটবেলার অভ্যাস। আজ মনে হলো অবাক হবার পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে আমার।

যেমন বর্ষার মেঘলা আকাশে টলটলা বিশাল চাঁদ বা কালপুরুষ দেখলেও অবাক হইনা আর। অবাক হই না যখন দেখি কেউ অলিখিত পাপগুলো করে যাচ্ছে কিংবা কোন মহিলা এক স্বামী থাকা কালিন আবার বিয়ে করছে, আমি একটুও অবাক হই না। কারন আমার মনে হয় এমনই তো হবার কথা।

যখন শুনি এক সময় কিছু বাবা-মা ধর্ম নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করেছে তাদের ছেলেমেয়ারা বিদেশী বিয়ে করেছে; আমি একটুও চমকাই না। কারন এমনই তো হবার কথা। শুধু করুণা হয় বাবা মা গুলোর জন্য। সত্যিতো খুব কস্টের।

যখন বুঝি খুব কাছের মানুষগুলো ষড়যন্ত্র করছে আমাকে নিয়ে আমি একটুও বিচলিত হই না। কারন বিচলিত হবার বা কস্ট পাবার কিছু নেই। মানুষতো আমরা, এটা করতেই পারে তারা। 

কোন ছোট বাচ্চা রেপ হলে বা কোন ছোট ছেলে এবিইউস হলে অবাক হই না এখন আর। কারন এমনই তো হবার কথা। আজকাল শুধু বাবা মা'দের একটু সাবধান হতে হবে। আর বাচ্চাগুলোর জন্য ভীষণ কষ্ট হয় আমার। কারন তারা বুঝে গেলো পৃথিবী কতো নোংরা জায়গা।


লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। কেউ না কেউ পরিচিত। মানুষ নাই হয়ে যাচ্ছে; একটুও অবাক হই না। কারন এটাই ভাগ্য আল্লাহ লিখে রেখেছেন। ভাগ্যের উপর খবরদারী করার সাধ্য কার আমাদের! তবুও কষ্ট হয় মানুষগুলোর জন্য। আর দেখবো না কোনদিন। কিন্তু অবাক হবার পালা শেষ। কারন এতো মৃত্যু প্রতিদিন অনুভূতি শুন্য করে দিয়েছে। শুধু কষ্টগুলো গুমরে উঠে দু চারদিন খেতে পারিনা। একেই মনে হয় ডিপ্রেশন বলে। কষ্ট পাই তারপরও অবাক হইনা এই তো জীবন। 

কেউ কিছু সারপ্রাইজ বা গিফট দিলে শুধু বলি ওয়াও, একটুও অনুভূতি কাজ করে না। মনে হয় এটাই তো হবার কথা। আমি জানতাম আমাকে সারপ্রাইজ দিবে। 

এই যে দিনে দিনে অবাক হবার পালা আর অনুভূতি গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে-- আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি আর নিজে নিজে বলি নিজেকে, 'হে সৃস্টিকর্তা এমন কিছু ম্যাজিক করে দাও আমার জন্য যা দেখে আমি বিস্মিত জ্ঞানশুন্য হই'।

আমি সৃষ্টিকর্তাকে বলি, 'যা আমার তা আমার জন্যই রাখো। আমি আবার অনুভূতি ফিরে পেতে চাই এই পৃথিবীর বুকে...'

যদি কোন অপরিচিত মানুষ অধিকার নিয়ে বলে-- তুমি বাইরে যেও না অবস্হা 

খারাপ।

আমি অবাক হবো আবারও কারন কেউ তো স্বার্থ ছাড়া ফিলিংস দেখায় না আজকাল। আমি  সৃস্টিকর্তাকে বলি আমার জন্য এমন কিছু আশ্চর্য করো যাতে আমার মনে ছোট একটা পাখির গান শুনলেও অনুভূতি জাগ্রত হয়। একটা ঘাস ফড়িং উড়তে দেখলেও আমি যেন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।

অচেনা কেউ মারা গেলেও চিৎকার করে কাঁদি। কেউ ষড়যন্ত্র করলে যেন ভিষন কষ্ট পাই।

আমি চাই আবার আমার অনুভূতিগুলো ফিরে আসুক। আমি চেয়ে চেয়ে অবাক হবো। পৃথিবীর সব কষ্ট, সৌন্দর্যগুলো মনে গেঁথে।

Wednesday, August 18, 2021

শিমুল ভূঁইয়ার লেখা কবিতা "চাহিদার শর্তে সাজে নর্তক"


চাহিদার শর্তে সাজে নর্তক

শিমুল ভূঁইয়া
তারিখঃ-০৫/০৮/২০২১


নিজেকে বিলীন হতে দেখলে এখন আর কষ্ট হয়না?
কারণ একটিই তো জীবন!
জীবন শুধু খাই,খাই
আর এই খাই,খাই মানুষ গুলোর কাছে

অর্থই শুধু মূখ্য? হোক তা বর্জ্য!
এরা অর্থ দিয়েই হতে চায় অগ্রজ
চাহিদার শর্তে সাজে নর্তক
কলুষিত ভরা তাঁদের মস্তক।

সহজ লভ্য এই জীবনে
তাই সহজ লভ্য মৃত্য চাই
অনাগত ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই
তা শুধু মাটির পুতুলের ভ্রান্ত ধারণা।।

আমি অমানুষ হতে চাই না
আমি মাটির মানুষ হতে চাই
আমি বর্জ্য হতে চাই না
আমি হতে চাই এক টুকরো শুদ্ধ মাটি।




ত্বক ভালো রাখতে চাইলে মোটেও খাবেন না যে খাবারগুলো

 

ত্বক ভালো রাখতে চাইলে মোটেও খাবেন না যে খাবারগুলো


এড. মোঃ সোহরাব হোসেন ভূঁঞা(মিঠু)
আইনজীবী, জজকোর্ট ঢাকা/কুমিল্লা, বাংলাদেশ।

সুস্থ ত্বক সৌন্দর্যের প্রতীক। ত্বকের রঙ যেমনই হোক, ত্বক যদি ভালো থাকে তাকে দেখতে এমনিতেই ভালো লাগে। তাই ত্বকের রঙ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে ত্বক কীভাবে ভালো রাখা যায় তাই ভাবা উচিৎ। সে কারণেই ত্বকের যত্নে আমরা সব চাইতে বেশি কাজ করে থাকি। সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার রাখা, ত্বকের নানা সমস্যা থেকে ত্বককে মুক্ত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন অনেকেই। কিন্তু আপনি জানেন কি, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার রয়েছে যা আপনার সকল চেষ্টা বৃথা করে দিচ্ছে? সুস্থ সুন্দর ত্বক পেতে চাইলে এই ধরণের খাবার থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকাই শ্রেয়। আজ চলুন তাহলে চিনে নিন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর সেই খাবারগুলোকে।

অতিরিক্ত লবণ
অনেকেই খাবারে লবণ বেশি খান। আবার অনেকে খাবারের সাথে প্লেটে আলাদা করে খানিকটা লবণ নিয়ে নেন। এটি দেহের পাশাপাশি ত্বকের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর একটি কাজ। অতিরিক্ত লবণের সোডিয়াম দেহে বাড়তি লিক্যুইড তৈরি করে যা ত্বক ঝুলে পরার জন্য দায়ী। এছাড়াও এই বাড়তি লবণ ত্বকের নিচে এসে জমা হয়ে ত্বকের টিস্যু নষ্ট করে ফেলে। তাই অতিরিক্ত লবন আছে এমন খাবার যেমন, পাঁপড়, আচার, চিপস, টিনজাত খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিন।

যে খাবারগুলো দেহকে পানিশূন্য করে
দেহে পানিশূন্যতা হলে ত্বকের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে, ত্বকে বলিরেখা পড়ে যায়। কফি, চিনি সমৃদ্ধ খাবার, ফ্রাইড খাবার, ফাস্ট ফুড ধরনের খাবার ইত্যাদি খেলে দেহে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়। তাই এই জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকাই ভালো।

ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার
ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত খাওয়া ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ক্যাফেইন দেহে কারটিসোল উৎপন্ন করে যা ত্বকের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। এবং ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে ত্বকে বয়সের ছাপ তথা বলিরেখা তৈরি করে। তাই ত্বকের সুস্থতা চাইলে খুব বেশি ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন না।

অ্যালকোহল
অ্যালকোহল এবং অ্যালকোহল সমৃদ্ধ খাবারের কারণে ভ্যাসোডিলাটেশন ঘটে সোরিয়াসিস তীব্র পর্যায়ে নিয়ে যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের ফলে দেহে অ্যান্টি-ডিউরেটিক হরমোনের নিঃসরণ করে যা দেহকে ডিহাইড্রেট করে ফেলে। এতে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

উচ্চমাত্রার গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ খাবার
যে কোনো ধরণের বেকড খাবার ও টিনজাত প্রসেসড খাবারে থাকে এই গ্লাইসেমিক উপাদান যা রক্তের সুগারের মাত্রার বিপুল তারতম্যের জন্য দায়ী। এতে করে অনেক বেশি ইনসুলিন ও আন্ড্রোজেনের নিঃসরণ ঘটে যা ত্বকের নিচে মেদ জমা, মৃত কোষ উৎপাদন এবং ত্বকের ব্রণের সমস্যা হতে সহায়তা করে।

অতিরিক্ত চিনি সমৃদ্ধ খাবার
চিনি সমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত খাওয়া হলে তা ত্বকের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে থাকে। রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে এটি ত্বকের নিচে রক্ত সঞ্চালনে বাঁধা দেয়। এতে ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, ত্বকের ইলাস্টিসিটি নষ্ট হয়ে যায় এবং ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। শুধুমাত্র চিনিই নয়, অতিরিক্ত গুড় এবং মধু খাওয়াও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।

বোতলজাত পানীয়
বোতলজাত যেসকল পানীয় আমরা সফটড্রিংকস হিসেবে পান করে থাকি তা আমাদের ত্বকের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হিসেবে ধরা যায়। ত্বক ঝুলে পড়া, ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলা ইত্যাদির মূল কারণ খুব বেশি সফটড্রিংকস পান করা। এগুলো থেকে দূরে থাকুন।

লাল মাংস
লাল মাংস খাওয়া দেহের জন্য যতোটা ক্ষতিকর তেমনই ক্ষতিকর ত্বকের জন্যেও। লাল মাংস খেলে দেহে ইনফ্লেমেটরি রিঅ্যাকশান বেড়ে যায়। এছাড়াও লাল মাংসের স্যাচ্যুরেটেড ফ্যাট রেডিকেলে সৃষ্টি করে। তাই লাল মাংস থেকে দূরে থাকুন।

তেলে ভাজা খাবার এবং হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট
খুব বেশি তেলে ভাজা খাবার এবং হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট যেমন ঘি, চর্বি ইত্যাদি ফ্যাটি এসিডের অক্সিডাইজেশন ঘটায় এবং দেহের ভিটামিন ই ও ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নষ্ট করে দেয়। ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি নষ্ট হয়ে যাওয়া, ত্বকের টিস্যু শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই খুব বেশি তেলে ভাজা খাবার থেকে দূরে থাকুন।

আর্টিফিশিয়াল চিনি, রঙ এবং ফ্লেভার
ক্যালরি কম খাওয়ার আশায় অনেকেই আর্টিফিশিয়াল চিনি খেয়ে থাকেন যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এবং এর পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল চিনি, রঙ এবং ফ্লেভারে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা ত্বকের টিস্যুর মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই এই জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন ত্বকের সুরক্ষায়।

Tuesday, August 17, 2021

সোহেল বিশ্বাসের লেখা কবিতা "মানুষ কি বাঁধা যায় প্রেমে?"

 


মানুষ কি বাঁধা যায় প্রেমে?

-সোহেল বিশ্বাস


মানুষ কি বাঁধা যায় প্রেমে?

অর্থের অভিলাসে যদি যায়

ভালোবাসা থেমে!

যদি থেমে যায় হুড তোলা রিক্সাটা

ঝুমঝুম বৃষ্টির নাচনে।

যদি থেমে যায় নরোম যুগল হাত

উদোম বাতাসী মন্থনে।


মানুষ কি বাঁধা যায় প্রেমে? 

মানুষের এক জোড়া নিলাজ চোখ,

চোখের ছিঁড়ে যাওয়া পর্দায় উকি দেয়

উদ্ধত বেহায়া বোধ।

মানুষের বেহায়া চঞ্চু ভ্রমণ করে

সহস্র চঞ্চুর বিবস্র শহর।

মানুষেরেই ভালোবাসি, মানুষেই ক্রোধ।

জান্নাতুল ফেরদৌস জ্যোতির লেখা কবিতা "স্বাধীন দেশে"

 


স্বাধীন দেশে

জান্নাতুল ফেরদৌস জ্যোতি


দেশের জন্য যুদ্ধ করে 
দিয়েছি মোদের প্রাণ। 
সোনার দেশে দাড়িয়ে তাই আজ
গাইছি স্বাধীনতার গান। 

স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ
মোদের নেইকো ভয়। 
জীবন দিয়ে বাংলাকে মোরা 
করেছি যে জয়। 

বঙ্গবন্ধুর মহান ত্যাগে
পেলাম স্বাধীনতা। 
বঙ্গবন্ধু শব্দটি চিরদিন রবে
 বাঙ্গালীর হৃদয়ে গাঁথা। 

অজস্র বীর গিয়েছিলো সেদিন
স্বাধীন করতে দেশ,
মায়ের বুকে আজও ফেরেনি,
যাদের শ্রেষ্ঠত্বে স্বাধীন দেশ।



Sunday, August 15, 2021

বেগুন চাট রন্ধন প্রণালী ঃ-কাওসার পারভীন




বেগুন চাট

কাওসার পারভীন


বড় বেগুন ১ টা

তেঁতুল ১০০ গ্রাম।

হলুদ গুরা-১/৪ চা চামচ

মরিচগুরা ১ চা চামচ (শুকনা মরিচ গরম তাওয়ায় টেলে করে গুরা করতে হবে।)

জিরা ভাজা গুরা-১ চা চামচ। 

বিট লবন-১ চা চামচ 

গোল মরিচ গুরা ১ চা চামচ

পিয়াজ বাটা ১/২ টেবিল চামচ। 

রসুন বাটা - ১ চা চামচ।

ধনে পাতা কাঁচামরিচ একসাথে বাটা ১ টেবিল চামচ। 

চিনি ২ চা চামচ

লবন পরিমান মত 

তেল ।

টমেটো ১ টা টুকরা করা

আস্ত কাচামরিচ। 


প্রনালী:-


বেগুন বোঁটা রেখে একই ভাবে সমান করে ফুলের মত করে কেটে হলুদ মরিচ লবন পিয়াজ রসুন বাটা কাচামরিচ বাটা মেখে রেখে দিন ১/২ ঘণ্টা।


তারপর মাঝারি আঁচে ডুবো তেলে ভাজুন। খুব সাবধানে ভাজতে হবে যেন উপরের ডাঁটা ভেঙ্গে না যায়।বেগুনও যেন ভেঙে না যায়। বাদামি হলে নামিয়ে নিন। 


তেঁতুল আগেই পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। বিচি ফেলে তার সাথে বিট লবন,মরিচ গুরা ,চিনি মিক্সড করুন।এবার ভাজা বেগুন এর উপরে ছড়িয়ে ঢেলে দিন।


টমেটো অল্প তেলে ২ মিনিট মত কশিয়ে নিবেন। বেগুন এর ফাঁকে ফাঁকে টমেটো আর আস্ত কাঁচামরিচ দিয়ে সাজিয়ে নিন। কিংবা নিজের পছন্দ মত সাজিয়ে পোলাও খিচুড়ি বিরিয়ানির সাথে পরিবেশন করুন মজাদার, মুখরোচক বেগুন চাট।

ইমরান খান রাজের লেখা কবিতা "বঙ্গবন্ধু"

 



বঙ্গবন্ধু 

ইমরান খান রাজ


মুজিব মানে বঙ্গবন্ধু
মহান যুদ্ধের চেতনা,
মুজিব মানে জয়বাংলা
এগিয়ে যাবার প্রেরণা।

মুজিব মানে স্বাধীনতা
আলোকিত বাংলার পথ,
মুজিব মানে বিদ্রোহ সুরে
বাংলা বিজয়ের শপথ।

মুজিব মানে ভরসার বন্ধু
এক বিশ্বনেতার নাম,
মুজিব মানে জাগ্রত বাঙালি
বীর শহীদের রক্তের দাম।

মুজিব মানে বাংলার হাসি
লাল-সবুজের দেশ,
মুজিব মানে চিরচেনা
অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ।


--

 ইমরান খান রাজ

শিক্ষার্থী, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ।
স্টাফ রিপোর্টার, ডেইলি নয়া আলো ডট কম।
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা৷

সাতভিটা, নারিশা

পাঞ্জাব বিশ্বাসের লেখা কবিতা "আগস্টের রক্তকণা"

 



আগস্টের রক্তকণা

পাঞ্জাব বিশ্বাস


যারা ইতিহাসকে খুন করতে চেয়েছিল তোমাকে খুন করে,

যাদের হৃদপিণ্ডের নির্মাণ পরজীবী কালো পাথরে, 

তারা ভুল করেছিল। ওরা অর্বাচীন কুলাঙ্গার, 

দুর্গন্ধময় সত্য পুড়ানো অঙ্গার। 


ইতিহাস কখনো খুন হয়না, খুন করা যায়না!

যারা চেষ্টা করে তারাই বেঘোরে মরে!

ইতিহাসের এমনই অদ্ভুত প্রাণ, 

যতবার খুনের চেষ্টা হয়েছে ততবারই হয়েছে কালজয়ী উত্থান। 

ইতিহাস সত্যাশ্রয়ী সুমহান চিরন্তন,

দেখতেও ঠিক তোমারই মতোন!

তুমি ইতিহাসের সন্তান, 

তুমি স্বদেশ স্বাধীনতা এবং সত্যের শেষ ঠিকানা! ওরা জানেনা, তুমি যতবার খুন হবে,

ততবারই পৃথিবীর স্বপ্ন হয়ে উঠে দাঁড়াবে! 

ক্ষুধার্ত পৃথিবীর উদ্বেলিত বাহু তোমার দিকে বাড়াবে!

তুমি পরাধীনতায় কালোত্তীর্ণ আলো,

নিকশ কালো রাতের উঠোনে দীপ্ত প্রদীপ জ্বালো! 


আগস্টের প্রতিটি রক্তকণা একটি মুজিব হয়! 

প্রতিটি রক্তকণার বুক সূর্যের মতো দীপ্তিময়, অকুতোভয়।

স্বাধীনতার সাহসী স্তম্ভ এই আগস্ট মাস!

আর

ইতিহাসের বুকে গন্ধ ছড়াবে পরজীবী লাশ।

Saturday, August 14, 2021

রিলিজ হলো তাজদীদ শিল্পীগোষ্ঠীর ব্যানারে মাহবুব হাসান এর নতুন সংগীত আমি বড় একা।

 




রিলিজ হলো তাজদীদ শিল্পীগোষ্ঠীর ব্যানারে মাহবুব হাসান এর নতুন সংগীত আমি বড় একা।


সাহিত্য সাংস্কৃতি চর্চায় নতুন নতুন সৃষ্টিতে ষোলকলা পরিপূর্ণতা পেতে ছুঁতে হয়, সাহিত্য সাংস্কৃতি প্রেমীদের হৃদয় এবং সর্বস্তরের পাঠক স্রোতাদের বাধতে হয় মেধা শ্রম ও লিখনির জাদুতে। তবেই গড়ে উঠে একজন কবি সাহিত্যিক গীতিকার মূলধারার লেখক। বর্তমান সময়ে সঙ্গীতাঙ্গণে খুব জনপ্রিয় একটি নাম, গীতিকার মাহবুব হাসান, তার প্রতিটি সংগীতই হয়ে উঠছে জনপ্রিয়। তার কথার মাধুর্যে শব্দচয়নে ইসলামি সংগীতে দিচ্ছে নতুনত্বের স্বাদ। মাহবুব হাসান শুধুই গান লিখেন তা নয়, তিনি একজন মূলধারার লেখক কবি ও কথা সাহিত্যিক,  স্বপ্নডানা পত্রিকার সম্পাদক। শখের বশে সাংবাদিকতাও করেন,এবং একজন সফল সংগঠক ।যাই হোক আজকে আমরা তাকে গীতিকার হিসাবেই উপস্থাপন করবো। ইসলামি সংগীতে  তিনি রেখে যাচ্ছেন তার সৃষ্টির ছাপ। তাজদীদ শিল্পীগোষ্ঠীর ব্যানারে রিলিজ হলো "মাহবুব হাসান" এর কথায় "সাকিব হাসান "এর সুরে এবং কণ্ঠে মরমি সংগীত আমি বড়ো একা'।সংগীত টি পরিচালনা করেছেন তাজদীদ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান পরিচালক  শরিফুল ইসলাম। 


ইসলামি সংগীত নিয়ে আমরা গীতিকার মাহবুব হাসান এর সাথে বিস্তারিত কথা বলে জেনেছি।কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বেশ কয়েকটি শিল্পীগোষ্ঠী থেকে আসছে  তার অসাধারণ কিছু সংগীত। 

 তার রিলিজ হওয়া  উল্লেখযোগ্য সংগীতগুলো হলো।মাদিনার পাখি,মাহে রামাদান,মাদিনাওয়ালা,যার ছবিটি আঁকি,প্রভাতফেরীর  গান,স্বপ্নযোগে দিও দেখা,আমি হবো লাশ,হারিয়ে যাবো। সংগীতগুলো রিলিজ হয়েছে কলরব,  সুরকেন্দ্র, ভোকালের মতো জনপ্রিয় ইসলামি চ্যানেলে।

তিনি আরও বলেন আমি ইসলামি সংগীতের জন্য কোন পারিশ্রমিক নেই না, আমার সর্বচ্চ চেষ্টা থাকবে ইসলামি সংগীতাঙ্গণে আমার নিজস্বতার ছাপ রেখে যেতে।

সাহিল রহমানের লেখা গল্প "সেটেল ম্যারিজ

 


সেটেল ম্যারিজ

----------✒️📝সাহিল রহমান

একটা লম্বা ঘোমটা দিয়ে বিছানায় বসে আছে তুলি, লাল একটা শাড়ি পড়েছে সে, শাড়িটা এমন ভাবে পড়েছে যে তুলির চেহারা দেখতে পাবার কোন উপায় নেই, দেখার মধ্যে শুধু তার ফর্সা হাত দুটি দেখা যাচ্ছে, ভর্তি কাচের চুড়ি সম্বলিত দুটো হাত। তুলি সুন্দর করে এক হাত অন্যটির উপর রেখে চুপ করে অপেক্ষা করছে।


তুলির জামাই ঘরে ঢুকতেই একটা ধাক্কা খেল, “হায় খোদা এটা কে?” 

কিছুক্ষণ আগেই রিসিপশনের অনুষ্ঠান শেষে তুলিকে নিয়ে ওদের বাড়ি ফিরেছে আলভী, তখন তার পড়নে ছিল একটা পারপেল কালারের লেহেঙ্গা। তুলির বাবা-মায়ের সাথে আলভীর কথা বলতে বেশী জোর ত্রিশ মিনিট লেগেছে, তুলি তো তখনও ওই লেহেঙ্গাটাই পড়ে ছিল। তাহলে টকটকে লাল শাড়ি পড়ে বিছানায় কে বসে আছে? কেন জানি হুট করেই গলা শুকিয়ে গেল আলভীর। আলভী শুকনো গলায় ডাকল, “তুলি... তুলি...”


আলভীর কথার কোন উত্তর আসল না, মেয়েটি একদম মূর্তির মতন বসে আছে, কোন নড়াচড়া নেই।

“ব্যাপার কি?” কিছুই বুঝতে পারছে না আলভী। আলভী এক দুই পা করে বিছানার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, তারপর একবার বসার চিন্তা করেও বসল না, সামান্য ঝুঁকে ঘোমটার ভেতর দিয়ে চেহারা দেখার চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না সে। এমন সময় আলভী আবিষ্কার করল ঘোমটা সরিয়ে মেয়েটার মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে তার, শুধু ইচ্ছে না প্রচণ্ড ইচ্ছে করছে। দুই তিন বার নিজের হাত ঘোমটার দিকে বাড়াল আলভী, আবার সরিয়ে নিল মনের অজান্তেই, শেষ পর্যন্ত হাজার সংশয় নিয়ে আলভী ঘোমটায় হাত দিতেই খপ করে আলভীর হাত ধরে ফেলল তুলি, সঙ্গে সঙ্গে বিরাট ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসল আলভী। 

সেই সাথে বেশ কয়েকজন মানুষের “হো হো” চিৎকারে কানে তব্দা বেধে গেল সবার, কিছুক্ষণ পরেই আলভী লক্ষ্য করল তুলি ঘোমটা সরিয়ে আলভীর হাত ধরে আছে আর হাসছে, তুলির বান্ধবী সহ বাড়ির আরও কয়েকজন হেসে কুটিকুটি হচ্ছে, যারা এতটা সময় ধরে লুকিয়ে ছিল আশেপাশে। 

এই বিষয়টিতে সবাই খুব আনন্দ পেলেও তেমন একটা আনন্দ পেল না আলভী, বরং নিজেকে কেমন বোকা মনে হল তার, যদিও আলভী সবার সাথে তাল মিলিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী হাসতে থাকল। 


~


“আপনি কি ভয় পেয়েছেন?” এবার শাড়ী গহনা খুলে একদম সাধারণ পোশাকে আলভীর সামনে বসেছে তুলি, মুখে এখনো হাসি ভাব শেষ হয়নি তার, তখনের সেই আনন্দের রেশ এখনো তুলির মধ্যে বিরাজমান। 

আলভী মাথা নেড়ে বলল, “হুম একটু ভয় পেয়েছি”

আলভীর কথাটা শুনে তুলির আনন্দ যেন  আরও দিগুণ হয়ে গেল, তুলি হাসতে হাসতে বলল, “কি যে তাড়াহুড়ো করে লেহেঙ্গা চেঞ্জ করে শাড়ী পড়েছি কি বলব!” 

তুলির কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে তার বেশ আগে থেকেই এই পরিকল্পনা ছিল, আর এটা করতে পেরে সে মহা খুশী।

যদিও তুলির এই আনন্দের সাথে খুব একটা তাল মেলাতে পারল না আলভী, আড়চোখে ঘড়ির দিকে তাকাল সে, রাত দুটা বাজতে চলেছে, চোখ ভেঙ্গে ঘুম আসছে তার।


মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে তুলির সাথে বিয়ে হয়েছে আলভীর, মেয়ে দেখার পর পছন্দ হওয়া, এই শেষ। এরপর থেকে শুধুই বিয়ের আয়োজন। বিয়ের সব আয়োজন নিয়ে তুলিও ভীষণ ব্যাস্ত ছিল, এরমধ্যে আলভীর সাথে তিন দিন শপিংএ গেছে তুলি, ওই সময় দুজন টুকটাক কথা বলেছে, এছাড়া আর তেমন কথা হয়নি দুজনের মাঝে। আলভী যে তুলির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনি তা নয়, বেশ কয়েকবারই কথা বলার জন্য চেষ্টা করেছে, কিন্তু কোন বারই ঠিক মতন কথা হয় নি। তুলির সাথে আলভীর যতবার কথা হয়েছে ততবারই তুলি বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করেছে। বিয়ের আয়জন আর বিয়ের প্রোগ্রাম নিয়ে তুলির সেই রকম সয়লব অবস্থা, প্রায় দশ বারোটা প্রোগ্রাম, প্রতিটা প্রোগ্রামের এত এত লোকজন, ফটোগ্রাফার, স্টেজ, ম্যাচিং ড্রেস আরও কত কি? এসব আলোচনা নিয়ে বেশী কথা বলতে ইচ্ছে করে না আলভীর, তাই কথাও আগায় নি তেমন।


~


আলভীর চোখ কয়েকবার লেগে আসল, ঝিমুনি গ্রাস করে ফেলেছে ওকে, মাথার নিচে দেবার জন্য বিছানা থেকে বালিশ টেনে নিল আলভী, এমন সময় তুলির কথায় চোখ মেলল সে, 

“ওমা আপনি কি ঘুমাতে যাচ্ছেন নাকি? মাত্র তো রাত দুটা বাজে, এখনো কত কাজ বাকী!” তুলির এই কথায় এবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল আলভীর, এখনো আরও প্রোগ্রাম বাকী আছে নাকি? 


“আজ আমাদের গল্প করার রাত, বিয়ের সব কিছু ম্যানেজ করতে গিয়ে আপনার সাথে গল্পই করতে পারিনি, আজকে থেকে গল্প শুরু, প্রথমে আপনি বলবেন তারপর আমি, ওকে।” তুলির কথাটা শুনে এবার চোখ মেল তাকাল আলভী, লক্ষ্য করল মেয়েটার মধ্যে একটা এমন একটা মনোভাব আছে যে সে যেটা চাইবে সেটাই হবে, অনেকটা ছোট বাচ্চাদের মতন। তুলির দিকে এবার আরও লক্ষ্য করে তাকাল আলভী, প্রথম দেখা দেখির সময়ের পর এই দ্বিতীয় বার ভাল করে তুলিকে ঠিক মতন দেখল সে।


“এবার বলেন আমাকে কেন পছন্দ করলেন?” তুলির সেই একই ধরণের ভাবান্তরহীন প্রশ্ন,

“আপনাকে ভাল লেগে গেছে তাই” প্রশ্নের উত্তরটা এক কথায় দিল আলভী, যদিও এই প্রশ্নটা আলভীর তুলিকে করা উচিৎ ছিল। সার্টিফিকেটের বয়সে তুলি আলভীর থেকে ১৩ বছরের ছোট, সার্টিফিকেট অনুযায়ী তুলির বয়স ২৫, আর আলভীর ৩৮, সেই দিক থেকে তুলির আলভীকে ভাল লাগাটাই অধিক বেমানান।


“আচ্ছা, এবার বলেন কয়টা প্রেম করেছেন?” কথাটা বলার সময় চোখ দুটো সরু করে ফেলল তুলি, ভাবটা এমন খুব সিরিয়াস কিছু শুনতে যাচ্ছে সে,

“একটাও না” নিরস উত্তর করল আলভী,

“কি বলেন, ভাল লাগার মতন কেউ ছিল না, এটা কি করে সম্ভব!” খুব জোর গলায় কথাটা বলল তুলি, তুলির কথায় মুচকি হাসল আলভী, কিন্তু মনের মধ্যে একটা চিনচিন কষ্ট অনুভব করল সে, যেই কষ্টটা দুনিয়ার কাছে বেমানান হলেও আলভীর কাছে নিখাদ একটি যন্ত্রণা। 


~


দশ বছর আগের স্মৃতি কিন্তু আলভী এখনো সেটা পরিষ্কার মনে করতে পারে। 

নীল শাড়ী পরিহিত একটি মেয়ে ঠিক আলভীর সরাসরি সামনে বসে ছিল, মেয়েটি ঠায় তাকিয়ে ছিল মাটির দিকে, আলভী বারবার আর চোখে তাকাচ্ছিল তার দিকে। হঠাৎ আলভীর মামী বললেন, ওরা দুজন একটু আলাদা কথা বলুক, আমরা অন্য ঘরে যাই? 

কথাটা বলতেই হুড়মুড় করে সবাই উঠে গেল অন্য ঘরে, রয়ে গেল শুধু আলভী আর নীল শাড়ি পরিহিত মেয়েটি। সেদিন সেই সময় কেমন যেন অন্য রকম একটি অনুভূতি হয়েছিল আলভীর, যেটা আলভী ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না। অনেকটা সময় নিশ্ছুপ থাকার পর হালকা করে গলা খাকাল আলভী, আলভীর গলার শব্দে একনজর চোখ তুলে তার দিকে তাকাল মেয়েটি, তারপর মুহূর্তেই আবার মাটির দিকে চোখ ফিরিয়ে নিল সে। কিন্তু মেয়েটির সেই দৃষ্টি যেন আলভীর হৃদয়ের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছিল, মুহূর্তের মধ্যে বুকের ভেতর ধড়ফড় শুরু হয়ে গিয়েছিল তার।


সিভিতে মেয়েটির নাম লেখা ছিল, কিন্তু সেটা কোন ভাবেই মনে করতে পারল না আলভী, এই কিছুক্ষণ আগেও তো মনে ছিল, কিন্তু এখন বেমালুম ভুলে গেছে সে। কি বলবে আলভী, কিছুই যেন মাথায় আসছে না তার। 


“আপনি কি একদমই কম কথা বলেন?” অনেকক্ষণ চিন্তা করার পর এমন একটা উদ্ভট প্রশ্ন করে বসেছিল আলভী, যদিও এই উদ্ভট প্রশ্নে কাজ হয়েছিল, এখান থেকেই শুরু হয়েছিল আলভী আর স্মৃতির কথার সূত্রপাত ! 


সেদিন দুজনের মধ্যে সামান্য কিছু কথা, কয়েকবার চোখে চোখ পড়া, অল্প সময়ের আলাপ আলভীর মন জুড়ে ছিল, আলভীর মনই তাকে বলে দিচ্ছিল এই মেয়েটিকে আলভীর ভাল লেগেছে, ভাল লাগা এমনই একটি বিষয় যেটা বুঝতে সময় লাগে না, নিজের মনই বলে দেয় সেটা।


~


প্রেম করার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি আলভীর, তাই বেশ ঝড় পোহাতে হয়েছে তাকে ও তার পরিবারকে, স্মৃতিকে প্রথম দেখায় আলভীর পছন্দ হওয়াতে বেশ খুশী ছিল আলভীর পরিবার, তাই খুব বেশী দেড়িও করতে চায়নি তারাও। দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের কথা বার্তা বেশ তোরেজোড়ে শুরু হয়েছিল সেই সময়। 


ওইদিকে আলভীর সাথে স্মৃতির সম্পর্কটাও আগাচ্ছিল সুন্দর, সকাল ৮ টায় অফিসের জন্য বের হতে হলেও রাত ২ টা পর্যন্ত স্মৃতির সাথে কথা বলত আলভী। ছুটির দিন সুযোগ পেলেই দুজন কফি খেতে চলে আসত। সেদিনের চুপ করে বসে থাকা মেয়েটি ঠিক চুপ করেই আলভীর হৃদয়ে অনেকটা জায়গা করে নিয়েছিল।


~


বিয়ের কথা আর দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কটা খুব ভাল মতন এগুচ্ছিল কিন্তু একদিন আলভী অফিস থেকে বাসায় ফিরতেই লক্ষ্য করল বাড়ির সবাই গম্ভীর হয়ে বসে আছে সামনের ঘরে, সবার মধ্যে একটি চিন্তিত ভাব। কাধ থেকে ব্যাগ রেখে আলভী খালি সোফায় বসতে বসতে বলল, “কি ব্যাপার? কোন সমস্যা নাকি?”


প্রশ্নের উত্তরে আলভী যেটা শুনল তা হল,

“তোমার হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে বিশ লক্ষ্য টাকা কাবিন করতে বলেছেন, এর কমে কোন ভাবেই কাবিন করবেন না তারা”

বিশ লক্ষ্য টাকা কাবিন! এটা তো অনেক, মাত্র দুই বছর হয় চাকরিতে ঢুকেছে আলভী, এত টাকা কাবিন করার সামর্থ্য তো আলভীর আসলেই নেই। কিন্তু আলভীর বাবার কথা শুনে যেটা বোঝা গেল, এই বিষয়ে মেয়ের পরিবার খুবই শক্ত, মেয়ের মান-সম্মানের বিষয় এটা, বিশ লাখের নিচে কাবিন করলে নাকি ওদের মান সম্মান থাকবে না!


স্মৃতির সাথে এই নিয়ে সেদিন রাতে কথা বলেছিল আলভী, কাবিনটা যে ছেলের সামর্থ্যের উপর হওয়া উচিৎ এই কথাটা বোঝাতে সেদিন অক্ষম হয়েছিল আলভী, এই বিষয়ে পরিবারের সিধান্তই শেষ সিধান্ত সেটা বলেছিল স্মৃতি, কাবিনের টাকা তো আর দেয়া লাগছে না, তো বিশ লাখ টাকা কাবিন করলে কি সমস্যা। 


বিষয়টা নিয়ে আলভী আর তার পরিবার আর ঘাটায় নি, রাজি হয়ে ছিল এই সিধান্তে, কিন্তু এই সম্মতিতে শেষ রক্ষা হয়নি। বিয়ের কেনা-কাটা, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, মেয়ের কস্মেটিক্স, শাড়ী সকল বিষয় নিয়ে হিমশিম খাবার অবস্থা হয়ে পড়ল আলভীর, আর তখনই লাগাম টানার সিধান্ত নিইয়েছিল আলভী ও তার পরিবার। ওদের অবশ্যই ছেলের সামর্থ্য সম্পর্কে বুঝতে হবে। আলভীরা তো গুলশান বনানীর কোটি পতির মেয়ে ঠিক করেনি, নিজেদের মতনই মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়েকে পছন্দ করেছে, কিন্তু ওদের সব কিছুইতে তো উচ্চাখাঙ্খি কথা বার্তা!


সেই লাগাম টানার বিষয়টিও ভাল চোখে নিতে পারেন নি ওরা, হুট করেই সুন্দর সম্পর্কে একটি তিক্ততা চলে এসেছিল সেদিনের পর, আর এই তিক্ততার জেরে শেষ পর্যন্ত বিয়ে ভাঙ্গা। যদিও আলভী অনেক চেষ্টা করেছিল বিয়েটা টেকানোর যদিও সেটা হয়নি শেষ পর্যন্ত। আলভী স্মৃতির পরিবারের সাথে কথা বলেছিল কয়েকবার, কিন্তু ওদের তোপের মুখে আর কোন কথা বলার সুযোগ পায়নি আলভী।

“তোমার এখনই যদি এগুলো নিয়ে সমস্যা হয়, তাহলে আমাদের বুঝতে হবে তুমি আসলে অক্ষম” এমন একটি কথায় একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল আলভী। 


অন্য কেউ হলে হয়ত ওখানেই থেমে যেত, কিন্তু মন থেকে স্মৃতিকে ভুলতে পারছিল না আলভী, তাই একদিন স্মৃতির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল, যদি দুজন মিলে কিছু একটা বন্দোবস্ত করতে পারে, যদি সম্পর্কটা ঠিক হয়, কিন্তু সেদিন স্মৃতির কথা শুনে আলভী মন থেকেই ভেঙ্গে পড়েছিল, 

“আমি সেটেল ম্যারিজ করছি একজন এস্টাবলিস্ট ছেলেকে বিয়ে করার জন্য!” স্মৃতির এই কথাটা শোনার পর আর একটিও কথা বলেনি আলভী, এই বিয়ে টেকানোর জন্য আর কোন চেষ্টাও করেনি সে। শুধু অনুধাবন করেছিল ৩০ হাজার টাকা বেতন আলসে বিয়ে করার জন্য উপযুক্ত কোন বেতন না, এস্টাবলিস্ট হতে আজও অনেকটা সময় বাকী আছে তার! 


~


সেদিনের পর ১০ টা বছর কেটে গেছে আলভীর এস্টাবলিস্ট হতে হতে, ২৮ বছরের আলভীর বয়স আজ ৩৮ বছর। 

আজ সব কিছু সম্পন্ন করে তুলিকে বিয়ে করছে আলভী, কোন কিছুইতেই কোন কার্পণ্য করেনি, বরং প্রয়োজনের থেকে বেশী করা হয়েছে। সেদিন স্মৃতির চোখে যেই তাচ্ছিল্য ছিল আজ তুলির চোখে সেই তাচ্ছিল্য একদম নেই। 

আলভী তুলির চোখের দিকে তাকিয়ে তুলিকে পাল্টা প্রশ্ন করল “তুমি আমাকে পছন্দ করলে কেন?”


“আপনি এস্টাবলিস্ট আর …” কথার মাঝেই হেসে ফেলল আলভী, আলভীর হাসিতে সামান্য অপ্রস্তুত হয়ে গেল তুলি, যদিও সেই দিকে দেখার কোন প্রয়োজন বোধ করল না আলভী। মাথার নিচে বালিশটা দিয়ে বলল, 

“আমি অনেক টায়ার্ড, আমার অনেক ঘুম এসেছে, কাল সকালে কথা হবে” এটুকু বলেই চোখ বুজল আলভী, একটা সময় তুলির মতন বিয়ের দিন রাতে সারা রাত গল্প করে কাটানোর পরিকল্পনা আলভীরও ছিল, কিন্তু সেই উত্তেজনা সেই স্পৃহা এখন আর কাজ করে না, সেই বয়সটাও এখন নেই, সেই মায়া হারিয়ে গেছে অনেক আগেই, আলভীর মাথায় এখন কোটি কোটি টাকার হিসেবটাই বেশী শোভা পায়, এসব এখন আলভীর কাছে নিতান্তই বাচ্চামি!



গল্পঃ #হায়াত/পর্বঃ ৪/ সাহিল রহমান

হায়াত



পর্বঃ ৪ ও শেষ পর্ব


অগত্যা একটা ফোন পায় আসফাক, যেখানে তাকে বলা হয় স্ত্রী সুমির ভবিষ্যৎ মৃত্যুর কথা, কথাটা শুনে প্রথমে মাথা গরম হয়ে গেলেও ফোনকারী ব্যাক্তির অকাট্য কিছু প্রমাণে চুপ মেরে যায় আসফাক। সুমি সম্পর্কে অপ্রীতিকর এই ভবিষ্যৎ বানী শেষে, আসফাককে নির্দেশনা দেয়া হয় সময় ভ্রমণ সূত্রের, যেই সূত্র স্বয়ং আসফাক নিজেই তৈরি করেছে, আর এই সূত্র নিয়ে ছুটে এসেছে সুদূর ভবিষ্যৎ হতে। 


সেদিন সেই ফোনের পর আসফাকের জীবন পুরোপুরি অন্যরকম হয়ে যায়, ফোনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমেই আসফাক চলে যায় শহরের বাইরে পাইকপাল নামক একটি গ্রামে, যেখান হতে খুঁজে নেয় ভবিষ্যৎ হতে রেখে যাওয়া সময় ভ্রমণের সূত্র!


তার পরের নির্দেশনা অনুযায়ী আসফাক অপেক্ষা করতে থাকে একটি নির্দিষ্ট দিনের , ফোনের বর্ণিত বর্ণনা অনুযায়ী আসফাক একটি ট্যালি খাতা তৈরি করে, যেখানে প্রতিবার সময় ভ্রমণের পূর্বে টুকে রাখতে হবে সুমির অবস্থান, সময় ভ্রমণের সংখ্যা আর সুমির মৃত্যুর কারণ… 


কয়েক মাসের মধ্যেই চলে আসে সেই দিনটি, সেদিন ফোনের ভবিষ্যৎ বানী অনুযায়ী আসফাকের সামনেই মৃত্যু হয় সুমির। সেই সাথে আসফাক শুরু করে এমন এক যাত্রা যার শেষ কোথায় সেটা কেউই জানে না, এমনকি আসফাক নিজেও না…  


~


কেন যেন আজকাল আসফাকের কাজগুলো খুব সন্দেহ লাগে সুমির, সুমির আজকাল মনে হয় আসফাক ওকে ধোঁকা দিচ্ছে, আসফাকের কাছে সুমির প্রয়োজন শেষ, ওলট-পালট সব কল্পনা চোখের সামনে হুট করে প্রায়ই ভেসে ওঠে সুমির। 

আসফাক সুমিকে তার বাবার বাড়িতে যেতে দিচ্ছে না ! আবার মাঝে মাঝে দেখা যায় সুমিকে মিথ্যা বলে আসফাক বাবার বাড়িতে ফেলে এসেছে! 


এমন হাজারো কল্পনা অহরহ চোখের সামনে ভাসলেও সুমি এটা বুঝতে পারে আসফাক সত্যি অনেক পরিবর্তিত হয়ে গেছে, সে আগেও ব্যস্ত ছিল কিন্তু এখন তার কাজের ধরন, কাজের ব্যস্ততা, অস্থিরতা সব কিছুই কেমন অন্য রকম মনে হয়। আজকাল বড্ড একা লাগে সুমির নিজেকে, সব থেকে বড় ব্যাপার ভালবেসে বিয়ে করা আসফাক নামের মানুষটাকে ভয় হয় ভীষণ…


~


ট্যালি খাতার উপর হেলান দিয়ে বসে আছে আসফাক, আসফাকের জন্য এখন অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ যেন একটি জায়গায় আটকে গেছে, তাই মাঝে মাঝে ট্যালি খাতায় চোখ বুলিয়ে নিজের সময়ের অবস্থান ঠিক করে নেয় সে। চোখ বোলাতে বোলাতে বিগত দিনের সময় ভ্রমণের নম্বরটা দেখে চোখ কপালে উঠে গেল তার, যার শেষ কলামে লেখা- 


সময় ভ্রমণ নম্বর ৬৯৯, 

সুমির অবস্থান বান্দরবন, 

মৃত্যুর কারণ - পাহাড় ধ্বস, 


সংখ্যাটা দেখে এক চাপা কষ্টের নিঃশ্বাস ত্যাগ করল আসফাক, প্রায় দুই বছর হতে চলেছে, শেষবারের সময় ভ্রমণ সহ ৬৯৯-তম ভ্রমণ করা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে, কিন্তু প্রতিবারেই কোন না কোন ভাবে মৃত্যু হয়েছে সুমির, কোথায় গেলে কি করলে অতীতের এই পরিণতি পরিবর্তন হবে কে জানে!


আসফাক তার ট্যালি খাতার নিচে নতুন করে নম্বর তুলল, 

সময় ভ্রমণ নম্বর ৭০০, তারপর টাইম মেশিনে উঠে বসে অতীতের এক সময় চলে গেল যেখানে সুমি গতকাল অব্দি জীবিত ছিল। 


~


সকাল বেলা উঠেই বের হয়ে পড়ল আসফাক, ইতিমধ্যে ভবিষ্যৎ হতে ফোন পেয়ে গেছে সে, বোঝা যাচ্ছে গত বারের অভিযান ব্যর্থ, ঢাকার বাইরে সুমিকে নিয়ে যাবার প্লানগুলো কাজে লাগেনি। 

আসফাকের আজকের প্লান ভিন্ন, সুমিকে এবার ঘরেই রেখে দেবে আসফাক, সন্ধ্যার আগে এসে বাইরে থেকে গ্যাসের লাইন, ইলেকট্রিক লাইন কেটে দেবে, ঘরের মধ্যে থেকে যেন সুমির কোন ধরনের বিপদ বা দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে এই সকল লাইনগুলি বিছিন্ন করে দেবে সে।  


পরিকল্পনা অনুযায়ী আসফাক সকাল সকাল বের হয়ে গেল, আসতে দেড়ি হবে এই কথাটাও বলে গেল সুমিকে।


~


বিকেল হতেই  অস্থির লাগতে লাগল আসফাকের, এই নিয়ে সুমিকে সে কত বার মরতে দেখছে তার ঠিক নেই, কিন্তু হাল ছাড়বে না আসফাক যত কিছুই হয়ে যাক না কেন। হাত ঘড়িতে সময়টা দেখে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা করল আসফাক। 


বাড়িতে পৌঁছেই বাইরে থেকে গ্যাস, ইলেকট্রিক সহ অন্যান্য সংযোগ বিছিন্ন করে দিল, তারপর ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নিজ ফ্ল্যাটের দিকে অগ্রসর হতে লাগল। আজ কি হবে সুমির সাথে সেটা দেখতে না চাইলেও বাধ্য হয়ে দেখতে হবে আসফাককে। চিন্তাটা মাথা হতে ঝেড়ে ফেলে দ্রুত সিঁড়ির দিয়ে পা চালাল আসফাক… 


বাড়ির দরজার সামনে এসে কলিং বেল চাপল আসফাক, কলিং বেল বাজল না, নিজেই মনে করে নিল বিদ্যুতের লাইন কাটা ! পকেট হতে চাবি বের করে গেট খুলল আসফাক, কেন জানি বুক ধুঁকধুঁক করে কাঁপছে তার। এই সময়টাতে সর্বদা বুকের মধ্যে ভয় কাজ করে আসফাকের। 


ধীরে ধীরে নিজেদের ঘরে প্রবেশ করল আসফাক, সুমি কি করছে কে জানে? ঘরের দরজার সামনে যেতেই সুমিকে দেখে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল আসফাকের। 

না ! সুমি এখনো জীবিত আছে, বিছানায় অন্য একটি ছেলের সাথে প্রেম খেলায় মশগুল হয়ে আছে সুমি, এতটাই মসগুল যে আশেপাশে কি হচ্ছে কোন কিছুরই খোঁজ নেই তার ! 


আসফাক তার শরীরের সমস্ত শক্তি যেন হারিয়ে ফেলছে, যেই স্ত্রীকে বাঁচাতে দীর্ঘ দুই বছরের বেশী সময় নিজের জীবনটা তছনছ করে ফেলেছে আসফাক আজ সে কিনা এভাবে ধোঁকা দিচ্ছে তাকে? রান্না ঘরে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল আসফাক, তারপর ধুপ করে বসে পড়ল মাটিতে। 


~


আসফাকের অদ্ভুত চাল চলনে অস্থির হয়ে উঠেছিল সুমির জীবন, আসফাকের কাছ থেকে মুক্তি পেলে যেন সে বাঁচে, কিন্তু আসফাক সুমিকে এত সহজে ছেড়ে দেবে না সেটাও সুমি জানত। আর এই দোটানা থেকেই হুট করে একটি ছেলের সাথে অজান্তেই সুমি জরিয়ে পড়ে পরকীয়ায়। সুমি জানত সুমির এটা করা ঠিক না কিন্তু কেন যেন নিজেকে আটকাতে পারছিল না সে। আর অল্প সময়ের মধ্যে সুমির এই প্রেমের সম্পর্কটা অনেকটা গভীরে চলে যায়। সুমির ধারণা ছিল সুমির এই সম্পর্কের কথা আসফাক কোনদিনও জানতে পারবে না, আর আজ আসফাক দেড়ি করে আসবে সেটা বলেই গিয়েছিল, তাই প্রেমিককে নিজ বাড়িতেই ডেকে এনেছে সুমি। 


রান্না ঘর হতে হঠাৎ ধুপ একটি শব্দ শুনে হুশ আসল সুমির, সুমি বেড রুম হতে সামান্য গলা ছেড়ে বলল ‘কে?” সুমিকে জড়িয়ে রাখা প্রেমিক বলল বিড়াল-টিরাল হবে হয়ত। এক বার ভাবল সুমি, আসফাক এমনিতেই  অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে, আর আজ সে বলেই গেছে দেড়ি হবে, সুতরাং আসফাকের আসার কোন প্রশ্নই নাই। আর আসফাক এসে নিশ্চয়ই রান্না ঘরে ঢুকবে না, বেল বাজাবে প্রথমে… 


তবুও সুমির মনে খটকা রয়ে গেল, “একটু দেখে আসি” প্রেমিককে এই কথা বলে গায়ে চাদরটা জড়িয়ে বিছানা হতে উঠে সোজা রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াল সুমি, কাছাকাছি এসে আবার ডাক ছাড়ল “কে?” 


~


সুমির কণ্ঠ কানে আসল আসফাকের, বুঝতে পারল এদিকে এগিয়ে আসছে সুমি, উঠে দাঁড়াল আসফাক, রান্না ঘরের কেবিনেট হতে মাঝারি ধারাল ছুরিটা হাতে তুলে নিল সে, তারপর শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইল দরজার আড়ালে। সুমি রান্না ঘরে ঢুকেই ভেতরে তাকাল, একটু এগিয়ে নিচু হয়ে দেখল বিড়াল ঢুকেছে কিনা? নাহ কেউ নেই, হাফ ছাড়াল সুমি। তারপর বের হবার জন্য পেছনে ঘুরতেই হতভম্ব হয়ে গেল সে, শরীরের শক্তি মুহূর্তেই হারিয়ে গেল তার। সুমি দেখল ধারাল ছুরি হাতে আসফাক দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে !  


সুমি কিছু বলার আগেই তার পেটে ছুরি বসিয়ে দিল আসফাক, একটা চিৎকার করে উঠল সুমি, কিন্তু এই চিৎকারে কোন লাভ হল না বোধহয়, হাতের ছুরিটা আরও শক্তি করে সুমির পেটে ঠেলে দিল আসফাক। 


সুমির চিৎকারে হুড়মুড় করে সুমির ঘর হতে বের হয়ে এল তার প্রেমিক, সুমিকে আর আসফাককে দেখে কলিজা মুহূর্তেই উড়ে গেল তার, নিজের জান নিয়ে পালাল তৎক্ষণাৎ…


~


অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ আসল আসফাকের বাসায়, সুমির দেহটাকে তার গায়ের চাদর দিয়েই ঢেকে রাখল আসফাক, সমস্ত মেঝে জুড়ে রক্তের বন্যা, আসফাকের হাত জামা সুমির রক্তে লাল হয়ে গেছে। সুমির লাশের পাশ হতেই পুলিশ আসফাককে উদ্ধার করল, খুনের ছুরিটা তখনো সুমির শরীরে বিঁধে আছে। 


~


চারপাশে মানুষের ভিড়, পুলিশের সাইরেন আর এম্বুলেন্সের বাতি জ্বলছে আর নিভছে। সুমির লাশ এম্বুলেন্সে তোলা হল, তারপর আসফাককে উঠানো হল অন্য একটি গাড়িতে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের নিয়ে রওনা রওনা হল পুলিশ, রাস্তায় মানুষের ভিড়ে গাড়ি অল্প দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ল জ্যামে! 


পাশের মসজিদ ওয়াজ চলছে, অনেক লোক জড়ো হয়েছে এখানে, তাই এত ভিড়। মসজিদের মাইকে বক্তার একটি কথা কানে আসল আসফাকের, আসফাকের মনে হল এই কণ্ঠের এই কথাগুলো আসফাক আগেও একবার শুনেছে… 


কথাগুলো আসফাক কোথায় শুনেছিল সেটা সে মনে করতে পারল না, হয়ত কোন এক সময় ভ্রমণে, মনে করার চেষ্টাটা বাদ দিল আসফাক, তারপর বিড়বিড় করে বলল, “আর না…”

নিজের তৈরি সময় ভ্রমণ যন্ত্রের কথা একবার মন হল তার, কিন্তু সেটা নিয়েও চিন্তা বাদ দিল আসফাক, পাইকপাল গ্রামে আসফাকের তৈরি এই যন্ত্র যেখানে লুকানো আছে সেটা কেউ কোনদিন খুঁজেও পাবে না। যদি গ্রামের লোকেদের কেউ কোনদিন খুঁজেও পায়, এটাকে একটা আস্তকুর ভেবে ফেলে দেবে ভাঙ্গারিতে।


~


অশ্রু সিক্ত নজরে বাইরে তাকাল আসফাক, মসজিদের বক্তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল সে, তারপর বিড়বিড় করে বক্তার সেই কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করতে লাগল বর্তমান সময়ের নামকরা বিজ্ঞানী আসফাক, যে কিনা তৈরি করেছিল সময় ভ্রমণের সূত্র…


অনেকটা পথ চলে আসার পর আসফাকের গাড়ির চালক আর সেখানে উপস্থিত পুলিশ লক্ষ্য করল, কিছুক্ষণ আগে খুনের স্পট হতে তুলে নিয়ে আসা মানুষটা পেছেন হতে বিড়বিড় করে করে বারবার একটি বাক্য বলে চলেছে, 


“মানুষের হায়াত নির্ধারিত, রিজিকে যা লেখা যা আছে তার বেশী একটা ভাতও সে খেতে পারবে না!” 


লোকটাকে পাগল মনে হল ওদের কাছে… 


“সমাপ্ত”


লেখকঃ Sahel Rahman



গল্পঃ #হায়াত/পর্বঃ ৩/ সাহিল রহমান

হায়াত



পর্বঃ ৩


সুমিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি ! 

বার্ন ইউনিটের ওটিতে ডাক্তার যখন সুমিকে নিয়ে যায় তার অনেক আগেই আসফাক এটা আন্দাজ করতে পেরেছিল যে সুমি বাঁচবে না। আর তাই এটা নিয়ে আসফাক না করল কোন চিন্তা আর না করল কোন আফসোস। আসফাকের সম্পূর্ণ চিন্তার গতি ঘুরে গেল ভিন্ন এক দিকে, আর তা হল, দুই বার সময় ভ্রমণ করেও কেন আসফাক সুমিকে বাঁচাতে পারল না? কি হতে পারে এর কারণ? হাসপাতালে সুমির ওটি থেকে অনেকটা দূরে একটা বেঞ্চের উপর বসে বেশ অনেকটা সময় ধরে এই বিষয়টা নিয়েই ভাবতে থাকল আসফাক…  


তারপর নিজে হতে একটি উত্তরে উপনীত হল সে, দুই বার সময় ভ্রমণ করে সুমিকে বাঁচাতে ব্যর্থ হবার একটাই কারণ হতে পারে, আর তা হল আসফাকের এই দুই বারের চেষ্টায় সুমির জন্য নির্ধারিত মৃত্যু পরিবর্তন হয়নি!  কোয়ান্টাম মেকানিক্সে সময়ের সাথে দুটি বিষয়ের সূক্ষ্ম সম্পর্ক রয়েছে, আর সেগুলো হল অবস্থান আর পরিণতি! 


কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট অবস্থানে মানুষের পরিণতি নির্দিষ্ট হয়ে থাকে, সময় আর অবস্থানের সাথে এই পরিণতির পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু অতীতে এই সময়ে এসে আসফাক সুমির অবস্থান পরিবর্তন করছে ঠিকই কিন্তু পরিণতি এখানে অপরিবর্তিত রয়ে গেছে! 


যার অর্থ আসফাককে সুমির জন্য এমন একটি অবস্থান খুঁজে বের করতে হবে যেখানে ওই নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সাথে সুমির পরিণতি পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আর এই জন্য আসফাককে বারবার ২৭ বছর করে সময় নষ্ট করলে চলবে না ! 

সুমির এই পরিণতির পরিবর্তিত করার জন্য তার সেই অবস্থান বের করতে হলে আসফাককে একের পর এক সময় ভ্রমণ করতে হবে, আর খুঁজতে হবে সেই অবস্থান যেখানে পরিবর্তন হয়ে যাবে এই অতীত!


হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কাছাকাছি বসে থাকা বেঞ্চ হতে ধীরে উঠে দাঁড়াল আসফাক, একনজর সুমির ওটির দিকে তাকাল সে।  লক্ষ্য করল সুমির বাবা, আত্মীয় স্বজনরা প্রায় সকলেই হাজির হয়েছে এখানে, সবার চোখে পানি আর মুখে কান্নার আওয়াজ। যেন কেউই মানতে পারছে না বিষয়টি। 


সুমির সব আপনজন কাঁদলেও তাদের মধ্য হতে শুধু আসফাক মোটেও কাঁদল না, ধীর পায়ে একটি শব্দ না করে বের হয়ে গেল হাসপাতাল হতে। সুমির সকল আত্মীয় সুমির এই দুর্ঘটনা মেনে নিতে না পারলেও দিন শেষে মেনে নিত, কারণ এটা মেনে নিতে হয়, কিন্তু আসফাক সত্যি সত্যি ঘটনাটাকে মেনে নিতে পারল না। 


কিছুদিন পর কাউকে কিছু না জানিয়ে সমাজ আর সকল আত্মীয় স্বজন হতে একদম হারিয়ে গেল আসফাক, সে কোথায় গেছে সেটা জানল না কেউই…


~


এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতন পুনরায় ২৭ টি বছর পার করল আসফাক, এবার আসফাকের মস্তিষ্কে একত্রে বিছিন্ন কিছু ঘটনার প্রতিফলন অনুভব করল সে। সুমির গাড়ি দুর্ঘটনা, সিলিং ফ্যান মাথায় পড়ে যাওয়া আর রান্না ঘরে সিলিন্ডারে আগুন লেগে যাওয়া, এই তিনটি ঘটনাই যেন আসফাক একত্রে দেখতে পায়। 


দীর্ঘ ২৭ বছর পার করে নিজের সময় যন্ত্র তৈরি করার পর আসফাক এটাও উপলব্ধি করল যে একই সময় আসফাক যেন সুমিকে দুই ভাবে আগুনে পুড়ে যেতে দেখছে, এই অনুভূতিটা খুবই অদ্ভুত। আসফাকের মনে হয় আসফাক যখন সুমিকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিল ঠিক তখনই সেই একই সময়ে সে দূরে দাড়িয়ে এই ঘটনাটাকে পর্যবেক্ষণ করেছিল! 


কেন এমন অনুভূতি সেটা আসফাক ভাল করেই জানে, কারণ সেদিন আসফাককে যেই মানুষটা ফোন করেছিল সে ছিল আসফাক নিজেই, আর সে দূরে দাড়িয়ে দেখছিল সব কিছু। 


~


আসফাকের টাইম মেশিন তৈরি, কিন্তু এবার আসফাক আগের দুই বারের মতন এই যন্ত্রে উঠে বসল না, সে ঠাণ্ডা মাথায় অপেক্ষা করতে থাকল আর করতে চিন্তা করতে থাকল। আসফাক এবার অতীতের সেই একই দিনে ফিরে যাবে না, এবার সময় ভ্রমণ করার আগে খুব ভাল করে পরিকল্পনা করতে হবে আসফাককে। 


এবার আসফাক ফিরে অন্য একটি সময়ে, যেটা হবে সুমির মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগের!


~


সুমির মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগে গিয়ে আসফাক আগত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অতীতের আসফাককে অবগত করবে, আসফাক জানে এবারও হয়ত সুমিকে বাঁচানো যাবে না, কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এক এক করে। এই চেষ্টার মাধ্যমে বের করে আনতে হবে এমন একটি অবস্থান যেই অবস্থানে সুমির পরিণতি পরিবর্তন হবে, আর তখনই মৃত্যু থেকে বাঁচানো যাবে সুমিকে। 


সুমির মৃত্যুর সম্পর্কে অতীতের আসফাককে অবগত করার পরেই তার হাতে তুলে দিতে হবে সময় ভ্রমণের সূত্র, জানিয়ে দিতে হবে পাইকপালে আসফাকের এই ল্যাবের খোঁজ। এভাবে বারবার ২৭ বছর করে সময় নষ্ট করা সম্ভব নয়, সময় ভ্রমণের সূত্র ২৭ বছর আগেই দিয়ে আসতে হবে আসফাককে, যেন আসফাক সুমির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় অতীতে চলে যেতে পারে। 


~


সময় ভ্রমণ যন্ত্র তৈরির পরে প্রায় মাস খানেক ধরে সমস্ত পরিকল্পনা করল আসফাক, তারপর নিজের তৈরি এই পরিকল্পনা অনুযায়ী টাইম মেশিনের মধ্যে দিয়ে রওনা করল অতীতে… 


~


কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে একটা বড় কনফারেন্সে বিশেষ বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে তরুণ সায়েন্টিস্ট আসফাককে, দেশের ভেতর ও বাইরের অনেক বিজ্ঞানী উপস্থিত আছেন এই সভায়। এছাড়াও উপস্থিত আছেন দেশের বিভিন্ন ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এক এক করে বিভিন্ন বিজ্ঞানী নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রোজেক্ট, বর্তমান গবেষণা ও বিভিন্ন ধরনের মতবাদ ও মতবেদ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য পেশ করল সকলের সামনে। বিজ্ঞানীদের জন্য বেশ উৎসব আর উৎসুক পরিবেশ তৈরি হল সুবিশাল এই হল রুমটার মধ্যে। 


অন্যান্য সবার ব্যক্তিতা শেষে, আসফাককে স্টেজে আমন্ত্রণ করলেন এই কনফারেন্সের প্রধান অথিতি, হাসি মুখে স্টেজে উঠে এল আসফাক, তারপর নিজের বক্তব্য পেশ করল সকলের সামনে। আসফাকের ভীষণ  তথ্যবহুল আর কৌতূহলী বক্তিতায় সভায় উপস্থিত সকলের করতালিতে মুখরিত হল হল ঘর। আনন্দের সাথে চারপাশে এক নজর তাকাল আসফাক, মনের মধ্যে আনন্দের ঢেউ অনুভব করল সে। কিন্তু হঠাৎ আসফাক লক্ষ্য করল পেছনের দিকের সারিতে কেউ একজন হাত উঁচু করে বসে আছে, ছেলেটার ভাবভঙ্গি দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কোন প্রশ্ন আছে তার, কিছু জানতে চায় সে!


ছেলেটিকে দেখে মনে মনে খুশী হল আসফাক, এমন কৌতূহলী মানুষ পছন্দ তার, আসফাক অরগানাইজারদের মধ্যে একজনকে উদ্দেশ্যে করে ওই ছেলেটিকে মাইক দেবার জন্য ইশারা করল, একজন হেটে গিয়ে ছেলেটার হাতে মাইক দিলে, উঠে দাঁড়াল ছেলেটি! 


শুকনো, হ্যাংলা পাতলা গড়নের একটি ছেলে, সাদা টি-শার্ট পরিহিত, বোঝাই যাচ্ছে কোন ভার্সিটির শিক্ষার্থী। আসফাক চোখের ইশারায় ছেলেটিকে তার প্রশ্ন করতে বলল, ছেলেটি সামান্য অপ্রস্তুত হয়ে অল্প সময় অপেক্ষা করেই প্রশ্নটা করে ফেলল, “স্যার সময় ভ্রমণ কি আসলেই সম্ভব? আপনি কি মনে করেন এই বিষয়ে?”


ছেলেটির প্রশ্ন শুনে একই সাথে অবাক আর বেশ বিরক্ত হল আসফাক, আজকের কনফারেন্সের বিষয়ের সঙ্গে সময় ভ্রমণ টপিক কোন ভাবেই জড়িত না, আর তার থেকেও বড় কথা সময় ভ্রমণ একটি বিজ্ঞানিক ফিকশন, আজকের মতন এমন একটি কনফারেন্সে এই ধরনের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা মোটেও সমীচীন নয়। নিজেকে শান্ত রেখে ছেলেটির প্রশ্নের উত্তর দিল আসফাক, 

“বিজ্ঞান সর্বদা যুক্তিতে চলে, সেখানে আমার মনে করা দিয়ে কিছু যায় আসে না, আজ পর্যন্ত জোগাড়কৃত সকল তথ্য আর উপাত্ত অনুযায়ী সময় ভ্রমণ এখনো একটি অবাস্তব বিষয়, এটি বিজ্ঞানিক ফিকশন ছাড়া আর কিছুই না !” 


কথাটা শেষ করে স্টেজ হতে নেমে গেল আসফাক, ওয়াশ রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল সে, দুপুরে বেশ বড় লাঞ্চের আয়োজন করা হয়েছে এখানে, তার আগে একটু হাত মুখ ধোঁয়া দরকার। ততক্ষণ পর্যন্ত আসফাক জানত না যে কিছুক্ষণের মধ্যেই সময় ভ্রমণের একটি অকাট্য প্রমান পেতে চলেছে সে…


ওয়াশ রুমের দরজার কাছাকাছি যেতেই মোবাইলটা বেজে উঠল আসফাকের, অপরিচিত একটি নম্বর, এক হাতে ফোনটা ধরে হ্যালো বলে অন্য হাত দিয়ে ওয়াশ রুমের দরজার হাতলে মোচড় দিল আসফাক, ফোনের ওপাশ হতে একটি কণ্ঠ ভেসে আসল আসফাকের কানে, যেই কণ্ঠটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে চোখ কপালে উঠে গেল তার! 

“চলবে”




লেখকঃ Sahel Rahman



গল্পঃ #হায়াত/পর্বঃ ২/ সাহিল রহমান

#হায়াত



পর্বঃ ২

সুমি আসফাককে এমন অস্থির হতে কখনো দেখনি, সুমিকে এভাবে জোর করে আসফাক কেন বাবার বাড়িতে রেখে গেল সেটা কোন ভাবেই মাথায় আসছে না তার। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে আসফাক চলে যাবার কিছুক্ষণ পরেই সুমি বদিকে ফোন করেছিল, বদির মা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন ! 


তাহলে এমন কি হল যে আসফাক সুমিকে এভাবে মিথ্যা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল?  আসফাকের এই ব্যাবহারে ভেতরে ভেতরে এক অজানা সন্দেহ উঁকি দিতে লাগল সুমির মনে, আর এগুলো ভাবতে ভাবতে এক সময় সুমির চোখ লেগে আসল। ঠিক তারপর মুহূইর্তে সুমির মাথার উপর সজোরে সিলিং ফ্যানটা খুলে পড়ে, বিকট একটা শব্দ আর চিৎকার হবার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারায় সুমি। 


~


ওটির বাইরে পাগলের মতন এদিক সেদিন পায়চারি করছিল আসফাক, ঠিক ভোর হবার আগেই সুমির মৃত্যুর সংবাদ পায় সে। সুমির বাবা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেও আসফাক একদম পাথর বনে যায়। আসফাকের কানে  তৎক্ষণাৎ একটি কথাই বাজতে থাকে, আর তা হল গত রাতে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ভেসে আসা অতি পরিচিত কণ্ঠস্বর, 

“আমি আসফাক… ২৭ বছর ভবিষ্যৎ হতে ছুটে এসেছি সুমিকে বাঁচাতে…”


সঙ্গে সঙ্গে সিধান্ত নিয়ে নেয় আসফাক, সময় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে পা বাড়াবে সে, আর এই কাজ সম্পন্ন করতে এই সমাজ হতে একদম দূরে চলে যাবে… 


~


২৭ বছর পর…


আসফাকের মস্তিষ্কে একই সাথে যেন দুটি ঘটনা খেলে যায়, সেদিন রাতে সিলিং ফ্যান খুলে সুমির এক্সিডেন্টের কিছুদিন পরেই আসফাক পাইকপাল নামক এক মফস্বল গ্রামে নিজের রিসার্চের ঘাঁটি তৈরি করে, পরিচিত সবাই আর সমাজ ফেলে চলে আসে এখানে। এই গ্রামে আসফাক আগে কোন দিন আসেনি কিন্তু তবুও কেন যেন আসফাকের মনে হয় এইখানে সে আগেও এসেছে, এই মানুষ গুলোকে সে আগেও দেখেছে, কিন্তু মস্তিষ্কের এই স্মৃতি গুলো খুব দূরে থেকে হানা দেয় আসফাককে, এগুলো খুবই ঝাপসা। 


নিজের তৈরি টাইম মেশিনের সামনে দাড়িয়ে আছে আসফাক, বারবার মনে হচ্ছে এই মেশিনটার সামনে সে যেন আগেও একবার এসে দাঁড়িয়েছে, দীর্ঘ সময় নিজের যুক্তির সাথে নিজে নিজে তর্ক করার পর আসফাক একটি সিধান্তে আসে আর তা হল, সেদিনের ফোন কলটা সম্পূর্ণ সত্যি ছিল, আসফাক এই নিয়ে তার জীবনে দ্বিতীয় বারের মতন টাইম ট্রাভেল করছে, আর তাই দুটি সময়ে ঘটে যাওয়া দুটি স্মৃতি প্যারালালি অবস্থান করছে আসফাকের মস্তিস্তকে !


মেশিনে উঠে সময় ভ্রমণ করার আগ মুহূর্তে আরও একবার কিছু একটা ভাবল আসফাক, তারপর ঠিক করল অতীতে গিয়ে তাকে কি করতে হবে, প্রথম সময় ভ্রমণের ভুল এবার করা যাবে না। সুমিকে তার বাবার বাড়ি পাঠানো যাবে না কোন ভাবেই, আর তাই আসফাক ২৭ বছর আগের সেই রাতে না গিয়ে সময়কে ঠিক করল ২৭ বছর আগের ঠিক দিনের বেলায়। তারপর হাতের সামনের লাল বোতামটি চেপে ধরল, সেই সাথে এক বিশাল আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে গেল সে… 


~


জ্ঞান আসার পর আসফাক উপলব্ধি করল এই মুহূর্তে ২৭ বছর আগের অতীতে অবস্থান করছে সে, দ্রুত বাইরে বের হয়ে এল আসফাক। মাত্রই সকাল হয়েছে, চারিপাশে সমস্ত দোকান-পাট বন্ধ, নির্জন রাস্তা, কিন্তু আসফাকের বেশ পরিচিত এই রাস্তা গুলো, স্মৃতির পাতায় এই ছবি খুব সযত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছে আসফাক। 


অল্প কিছুদূর হেটে একটি চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়াল আসফাক, দোকানদার মাত্রই দোকান খুলছেন, আসফাককে দেখে একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল সে। উস্ক-খুস্ক কাঁচা-পাকা চুল, প্রায় সাদা হয়ে আসা  দাড়ি, কেমন যেন হারিয়ে যাওয়া দৃষ্টির একজোড়া চোখ। 


পুনরায় দোকান খোলার জন্য হাত লাগাল দোকানদার আর কিছুক্ষণ পরেই খুসখুসে গলার একটা কণ্ঠ কানে ভেসে আসল তার, “ভাই একটা ফোন করা যাবে! খুব দরকার…” 


দোকানদার লক্ষ্য করল তার সামনে দাড়িয়ে থাকা উদ্ভাস্তের মতন লোকটা হাতে একটি ৫০০ টাকার নোট তার  দিকে তাক করে দাড়িয়ে আছে, লোকটার চোখের দৃষ্টিতে কি যেন একটা ছিল, দোকানদার তাকে কোন প্রশ্ন করল না, পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে লোকটার হাতে দড়িয়ে দিল। 


দোকানদারের কাছ হতে মোবাইলটা হাতে তুলে নিল আসফাক, তারপর বলল, “একটা বেনসন সিগারেট দিন”, দোকানদার একটা আমান প্যাকেট ছিঁড়ে আসফাকের হাতে একটি সিগারেট ধরিয়ে দিতেই সিগারেট জ্বালিয়ে সামান্য দূরে সরে গেল আসফাক। 


দোকানের ড্রয়ারের উপর পাঁচশ টাকার নোটটা পড়ে আছে, দোকানদার লক্ষ্য করল চকচকে পাঁচশ টাকার নোটটা নতুন কিন্তু এটাকে দেখতে কেমন পুরনো লাগছে, মনে হচ্ছে কেউ বহু বছর এই টাকাটা আলাদা করে চাপা দিয়ে রেখেছিল, টাকাটা যে আসল সেটা পুনরায় ভাল করে দেখে মনের সন্দেহ দূর করল দোকানদার, তারপর কেতলিতে আগুন দিল সে। 


কেন যেন মনের মধ্যে অস্থিরতা নিয়ে নিজের নম্বরেই ডায়াল করল আসফাক, এইবার কোন ঝামেলা হলে চলবে না, এটা তার দ্বিতীয় সময় ভ্রমণ, সেই হিসেবে ৫৪ টি বছর পার করেছে আসফাক, শুধু একটি উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য আর তা হল সুমিকে বাচাতে হবে তার! 


~


ভোর বেলা মোবাইল বাজার শব্দে ঘুম ভাঙ্গল আসফাকের, অপরিচিত একটি নম্বর হতে বারবার কে যেন ফোন করে যাচ্ছে, অনিচ্ছা সত্ত্বে ফোনটা ধরল আসফাক, কিন্তু ফোন ধরার সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ওপাশের কথা শুনে মুহূর্তে ঘুম উবে গেল, একজন ভারী পরিচিত কণ্ঠ বিড়বিড় করে আসফাকের ল্যাবের পাসওয়ার্ড বলছে, “********” আসফাক খুব ভাল করেই জানে আসফাক ছাড়া এই পাসওয়ার্ড জানা অন্য কারো পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার! 


— কে আপনি? বিচলিত হয়ে ফোনের ওপাশের মানুষটাকে প্রশ্ন করল আসফাক। 

— আমি কে এটা বুঝতে তোমার এত সময় কেন লাগছে আসফাক? ফোনের ওপাশের মানুষটার পাল্টা প্রশ্নে আরও বিচলিত হয়ে গেল আসফাক। আসফাক পুনরায় কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই ওপাশের মানুষটার কণ্ঠ শুনতে পেল সে। 


— আমি তুমি! আমি আসফাক!  ২৭ বছর পরের ভবিষ্যৎ হতে এসেছি, আমি যা বলি সেটা খুব মনোযোগ সহকারে শোন। হিসেবে এটা আমার দ্বিতীয় সময় ভ্রমণ, এই সময় ভ্রমণের উদ্দেশ্য সুমিকে বাঁচানো। আজ রাতে সুমিকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে যাবার পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে তোমাকে, সুমিকে ঘর হতে বের হতে দেয়া যাবে না, তা না করলে সুমি মারা যাবে। প্রথম বার গাড়ি দুর্ঘটনায় আর দ্বিতীয় বার বাবার বাড়িতে সিলং ফ্যান খুলে সুমি মারা গেছে, সুতরাং সুমিকে এবার আর ওই বাড়িতে নেয়া যাবে না, ওখানেই ওর মৃত্যু লেখা, সুতরাং যদি আমরা সুমিকে এই স্থান হতে সরিয়ে রাখতে পারি তাহলেই ওকে বাঁচাতে পারব। 

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললেও, সমস্ত কথাই খুব সাবধানে বলেছে আসফাক, যেন অতীতের আসফাক তার 

কথাগুলো ধরতে পারে। 


ফোনের ওপাশের লোকটার কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল আসফাক কিন্তু অবিশ্বাস করল না, লোকটার কথার ধরন, বাচনভঙ্গি সব কিছুই আসফাকের মতন। আর লোকটা আসফাকের ল্যাবের যেই পাসওয়ার্ড বলেছে সেটা একটি অকাট্য প্রমান ! কিন্তু মনের মধ্যে আসফাকের অবিশ্বাসের প্রশ্ন, সময় ভ্রমণ কি সত্যি সম্ভব? 


— তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছ? ফোনের ওপাশ থেকে পুনরায় সেই কণ্ঠটা শুনতে পেল আসফাক।


আসফাক তার ভবিষ্যৎ পরিচয় দেয়া মোবাইলের ওপাশের মানুষকে মুখে কিছু বলতে পারল না, শুধু একটি শব্দ করল মাত্র, “হু”


লোকটা সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কেটে দিল। আসফাক দেখল সে রীতিমতন ঘামছে, গেঞ্জি সম্পূর্ণ ভিজে গেছে তার, পাশেই সুমি সম্পূর্ণ ঘুম, সুমিকে দেখে ভয়ে কলিজা যেন শুকিয়ে গেল আসফাকের, আজ রাতে সুমি মারা যাবে? হায় খোদা... 


~


ব্যাগের মধ্যে হতে বাইনুকুলার বের করে সুমি আর আসফাকের বাড়ির সামান্য দূরে অবস্থান করল ভবিষ্যৎ হতে আসা আসফাক, রাত অব্দি সময় আছে তার কাছে, সুতরাং কি হয় দেখে যেতে হবে। 


~


সকালে উঠে বেশ অবাক হল সুমি, আসফাক বিছানায় নেই, একটু হেটে সামনে যেতেই লক্ষ্য করল আসফাক বারান্দায় বসে কি যেন ভাবছে। সাধারণত আসফাক প্রায়ই রাত জেগে কাজ করে, তাই সকাল সকাল কখনই উঠতে পারে না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আসফাককে জোর করে ঘুম থেকে তোলে সুমি। যদিও সুমি এই বিষয়টা খুব উপভোগ করে কিন্তু আসফাককে সকালে ঘুম থেকে জাগানো বেশ কঠিন কাজ। 


কিন্তু আজ সেই মানুষটা সুমির আগে ঘুম থেকে উঠে বসে আছে ! ব্যাপার কি? 


— তুমি ঠিক আছো তো? কোন সমস্যা? বেশ চিন্তার স্বরে আসফাকের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল সুমি। 

আসফাক ঠিক নেই, মহা সমস্যা আর বিরাট চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু এই সমস্যার কথা সুমিকে বলা সম্ভব নয়। আসফাক নিজের মনের কথা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক হয়ে বলল, “তেমন কিছু না, আজ কেন জানি অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে না, তোমার সাথে সারা দিন একা কাটাতে ইচ্ছে করছে” 


আসফাকের কথা শুনে একটু অবাকই হল সুমি, সুমি জানে আসফাক সুমিকে তার জীবনের থেকেও বেশী ভালবাসে কিন্তু রোমান্টিক পুরুষ সে কখনই নয়, আসফাকের মুখে এই ধরনের কথা কেন যেন অন্য রকম মনে হল সুমির কাছে। আসফাককে সুমি বহু বছর ধরে চেনে, সুতরাং আসফাকের স্বভাব বহির্ভূত কোন কাজ সুমির চোখে পড়বেই। 


সুমি ভ্রু কুঁচকে আসফাককে জিজ্ঞাস করল, কিন্তু আজ না বাবার বাসায় যাবার কথা আমাদের? 

সুমির কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে সুমির হাত ধরে ফেলল আসফাক, তারপর বলল, “আজ বাদ দাও, দুইজন একসাথে আজকের দিনটা কাটাই…” 


আসফাকের এমন ব্যাবহারে আরও অবাক হল সুমি, কিন্তু কিছু বলল না সে, একটা বিসৃত হাসি দিয়ে আসফাকের চুল গুলো এলোমেলো করে বলল, “আজ কাল দেখছি তুমি বেশ রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছ!” 

এটুকু বলে চলে গেল সুমি, কিন্তু মনের মধ্যে তার খচখচ করতে লাগল আসফাকের এই অচেনা ব্যাবহারে। 


~


সন্ধ্যা নামছে, দূর হতে আসফাক তাকিয়ে আছে নিজের অতীতের দিকে, সুমি আর আসফাকের চালচলন দেখে মনে হচ্ছে ওরা আজ বাইরে বের হবে না। বিষয়টা আঁচ করতে পেরে একটু সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল দূরে বাইনুকুলারে তাকিয়ে থাকা আসফাক। পাশের এক মসজিদে ওয়ায মাহফিলের আয়োজন চলছে, ইতিমধ্যে ওয়াজ শুরু হয়ে গেছে, কোন এক বক্তার কথা কানে ভেসে আসছে, যদিও সেই মুহূর্তে আসফাকের নজর আর ধ্যান দূরে অন্যদিকে। 


~


সারা দিন আসফাক সুমিকে নিয়ে নিজেদের মতন কাটিয়ে দিলেও বিকেলের দিকে বাইরে হেটে আসার বায়না ধরল সুমি, বলল “চল একটু বাইরে গিয়ে বাতাস খেয়ে আসি, সারা দিনই তো বাসায় কাটিয়ে দিলে।” 

সুমির  কথাটা শুনে বুক ধুঁক করে উঠল আসফাকের, না… না… সুমিকে আজ কোন ভাবেই বাড়ির বাইরে বের করা যাবে না। সুমির এই কথার উত্তরে কি বলবে এই চিন্তা করতে লাগল আসফাক। সুমি লক্ষ্য করল আসফাক কোন কথা ছাড়া সুমির দিকে তাকিয়ে আছে, সুমি পুনরায় আসফাককে জিজ্ঞাস করল, “কি? কথা বল না কেন?” 


আসফাক ঘোর ভেঙ্গে সুমির চোখের দিকে তাকাল, তারপর বলল, যাওয়া যেত কিন্তু আমি তো অন্য পরিকল্পনা করেছি?


আসফাকের কথা শুনে সুমি ভ্রু কুঁচকে বলল, কি পরিকল্পনা? 


রাতে দুজন ভাল মন্দ খাব, তোমার হাতের পোলাও আর কোরমা খেতে ইচ্ছে করছে, আর তার সাথে চাটনি, অনেক দিন খাই না, আজ দুজন আর বের না হই। আসফাক বেশ কাকুতি নিয়ে কথা গুলো বলল সুমিকে। বাইরে যেতে আসফাক সর্বদা মাহের, ঘরের হাজার রান্না থাকলেও সে বাইরে গিয়ে খেতে পছন্দ করে, কিন্তু আজ সে কিনা ঘরে খাবে তাই বাইরে যেতে চাইছে না, হয়েছি কি আসফাকের? সুমির মনে প্রশ্ন দানা বাদে। 


যদিও সুমি আসফাককে কিছু বলল না, ওর কথা মতন রাজি হয়ে গেল, তারপর ফ্রিজ হতে কোরমার জন্য গোস্ত আর পোলাও বের করে রাতের খাবার তৈরি করতে হাত লাগাল। 


~


নিশ্ছুপ হয়ে দূরে সুমি আর আসফাকের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছিল ২৭ বছর ভবিষ্যৎ হতে আসা আসফাক, আজকের রাতটা সুমিকে আটকে রাখতে পারলে ব্যাস কাজ হয়ে যাবে তার। এত দিনের কষ্ট সাধন হবে। ইতিমধ্যে পাশের মসজিদের ওয়াজ বেশ জমে উঠেছে, মানুষের কাছে বেশ বাহাবা পাচ্ছেন বক্তা, যদিও বক্তার কোন কথাই কানে যাচ্ছে না আসফাকের। 


ঠিক এমন সময় দূরে সুমির রান্না ঘর হতে কিছু জ্বলজ্বল করার আলো চোখে আসল আসফাকের, দ্রুত দূরবীনে চোখ লাগাল আসফাক, স্পষ্ট দেখল সুমির রান্না ঘরের ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন লেগেছে, গ্যাসের চুলোর সিলিন্ডারটার উপড়ে জ্বলে ওঠা আগুন চারপাশে হু হু করে জ্বলছে, সেই সাথে দাউ দাউ করে জ্বলে যাচ্ছে সুমিও। কানে শব্দ না আসলেও আসফাকের বুঝতে অসুবিধা হল না, অতীতের আসফাক উন্মাদের মতন চিৎকার করছে, ইতিমধ্যে সে সিলিন্ডারের আগুন নিভিয়ে ফেললেও সুমির হাল বেগতিক, ধীরে ধীরে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ চলে এসেছে, সুমিকে বার্ন হবার প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে দিতে নিচে গাড়ি স্টার্ট দিতে গেল আসফাক, বাড়ির চারপাশে মানুষের অস্থিরতা, আসফাক গাড়ি স্টার্ট দিল, পাশের বাড়ির এক মহিলা সুমিকে নিয়ে উঠে বসল গাড়ির পেছনের সিটে। ধীরে ধীরে গাড়িটা হারিয়ে গেল রাস্তায়। 


বাইনোকুলারে সম্পূর্ণ ঘটনাটা দেখার পরে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইল আসফাক, কি হল কিছুই যেন তার মস্তিষ্কে আসছে না, যা ঘটে গেছে সেটা যেন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে তার ! 


হঠাৎ পাশের মসজিদে ওয়ায মাহফিলের বক্তার একটা কথা হুট করে কানে আসল বিজ্ঞানী আসফাকের, “মানুষের হায়াত নির্ধারিত, রিজিকে যা লেখা যা আছে তার বেশী একটা ভাতও সে খেতে পারবে না!” 


কথাটা শুনে ক্রোধে ফেটে পড়ল আসফাক, তারপর বিড়বিড় করে বলল, “সুমিকে আমার বাঁচাতে হবেই, আমি এই হায়াত মানি না!”

চলবে… 


লেখকঃ Sahel Rahman



গল্পঃ #হায়াত/পর্বঃ ১/ সাহিল রহমান

#হায়াত



পর্বঃ ১

বাংলাদেশের অন্যতম তরুণ নামকরা সায়েন্টিস্ট ডঃ আসফাক, হঠাৎ করেই করেই উধাও হয়ে গেছে। নিজের সকল স্টাডি, রিসার্চ, কনফারেন্স একদম বন্ধ করে দিয়েছে, প্রায় দুমাস হতে চলেছে ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস পর্যন্ত নিচ্ছে না। 


আসফাকের স্ত্রী সুমি রোড এক্সিডেন্টে মারা যাবার পরে একদম বিষণ্ণ আর হতাশ হয়ে পরেছে সে, সকলের সাথেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। 

আসফাকের এভাবে সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবার বিষয়টি তার প্রফেশনাল মানুষজন এবং বন্ধু-বান্ধব সাধারণ ভাবে নিয়েছিল, কারণ আসফাকের জন্য এই শোক মেনে নেয়া যে বেশ কঠিন হবে এটা সবাই জানত। স্ত্রীকে অসম্ভব রকমের ভালবাসত আসফাক, দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে হয়েছিল ওদের কিন্তু বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় সুমি। 

নিজেকে এই কঠিন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে এবং ধীরে ধীরে মানুষিকভাবে শক্ত হতে আসফাকের কাছের মানুষগুলো আসফাককে এতদিন একা থাকতে দিয়েছে, সর্বদা খোঁজ খবর নিলেও কেউই আসফাককে খুব বেশী ঘাটায়নি, কিন্তু আজ আসফাক যেটা করছে সেটার পর আসফাকের সাথে সরাসরি কথা বলাটা বেশ জরুরী, এটাকে পাগলামো ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না…


~


ঢাকা ইউনিভার্সিটির কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিভাগীয় প্রধান নূর হক নিশ্চুপ হাতে দুটি কাগজ ধরে বসে আছেন, টেবিলের উপর সাদা খোলা খামটা কিছুক্ষণ আগে তার উদ্দেশ্যে এসেছে, যেই খামটা এখনো ফ্যানের বাতাসের সাথে সাথে হালকা দুলছে, খামটা খোলার পর নূর হক যেটা পড়লেন সেটা পড়ে মারাত্মকভাবে মর্মাহত হয়েছেন তিনি। 

খামের মধ্যে দুটো কাগজের মধ্যে একটি আসফাকের পদত্যাগ পত্র আর আরেকটি ছোট একটি চিঠি, যেখানে লেখা, 


“স্যার আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন, আমার পক্ষে ক্লাস আর রিসার্চ চালিয়ে যাওয়া সম্বব নয়, আমি সমাজ হতে দূরে চলে যাচ্ছি, হয়ত আপনাদের সাথে আর দেখা হবে না, হয়ত হবে… 

আগামীতে কি হবে, জানি না… 

আর জানার কথাও না… 

মানুষের জীবন, সময়ের মতনই অনিশ্চিত…”


চিঠির শেসে আসফাক তার নাম উল্লেখ করেনি, আর নাম উল্লেখ করার কোন প্রয়োজনও নেই। আসফাকের হাতের লেখা নূর হক খুব ভাল করেই চেনেন। চিঠিটা শেষ করার কিছুক্ষণ পরে দুটি নম্বরে কল করলেন নূর হক, যদিও তিনি জানেন এতে কোন লাভ হবে না, আসফাক যেই সিধান্ত নিয়েছে, সেটা সে করবেই, তাকে সেখান থেকে কেউই ফেরাতে পারবে না। তা না হলে আসফাক সরাসরি নূর হককে চিঠি লিখত না… 


~


সুমির বাবা আর আসফাকের বন্ধু বদি, নূর হকের ফোন পাবার পর দ্রুত ছুটে যায় আসফাকের বাসায়, কিন্তু ততক্ষণে আসফাক তার ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে গেছে, কোথায় গেছে সেটা জানে না কেউই। ফ্ল্যাটের চাবি আসফাকের শ্বশুরের কাছে থাকার কারণে সহজে দরজা খুলে প্রবেশ করল ওরা কিন্তু সেখানে আসফাককে দেখা গেল না। 

আসফাক আর সুমির সাজানো ফ্লাটটা খাঁ খাঁ করছে, মেয়েকে হারিয়ে সুমির বাবা কষ্ট পেলেও মেয়ের জামাই এর এমন মানুষিক অবস্থায় বেশ ভেঙ্গে পড়লেন তিনি, ঠা হয়ে দাড়িয়ে রইলেন  আসফাকের বাড়ির সামনের ঘরের আলনা ধরে। 


আসফাকের বন্ধু বদি পাগলের মতন সমস্ত ঘর আসফাককে খুঁজে বেশ সময় পর হাঁপাতে হাঁপাতে হাজির হল সামনের ঘরে, লক্ষ্য করল সুমির বাবা দিশেহারা নজরে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে, একটি মৃত্যু কিভাবে তছনছ করে ফেলল দুটি পরিবার, এই ভেবে বুকের মধ্যে চিনচিন এক ব্যাথা অনুভব করল বদি… 


~

সুমি আসফাকের জন্য শুধু মাত্র প্রেমিকা বা স্ত্রী ছিল না, সুমি ছিল আসফাকের জন্য জীবন। সুমি ছাড়া নিজেকে কোনোদিনও চিন্তা করতে পারে না আসফাক আর পারবেও না। ছোট কালে বাবা-মা হারানো অনাদরে বড় হওয়া আসফাকের মরুভূমিময় জীবনটায় সুমিই ছিল এক মাত্র বৃক্ষ। ভার্সিটির প্রথম দিন সুমির সাথে দেখা হবার পর হতে আসফাকের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তার, সেদিনের পর আসফাকের সকল কষ্ট নিজের করে নিয়েছিল মেয়েটি। জীবনটা একদম বদলে দিয়েছিল, আজকে আসফাকের এই নাম, এই খ্যাতি সমস্ত কিছুর পেছনে লুকিয়ে আছে সুমির অবদান। আসফাক কে বিয়ে করার জন্য নিজের বাবা মায়ের সাথে রিতিমতন যুদ্ধ করেছিল এই সুমি। 


কিন্তু আজ আসফাক কে একা রেখে চলে গেছে সে, চলে গেছে না ফেরার জগতে। সুমির নিজ হাতে সাজানো এই ঘরে বসে বসে দীর্ঘ দুই মাস ধরে চিন্তা করেছে আসফাক, আর এই চিন্তা থেকেই এই সিধান্তে উপনীত হয়েছে সে। আর তা হল আসফাক সুমিকে ফিরিয়ে আনবে, আর তাই সকল মানুষ আর সমাজ থেকে হারিয়ে যেতে হবে তাকে… 


আসফাক খুব ভাল করেই জানে পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী টাইম ট্রাভেল করতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু আজও পৃথিবীতে এই চেষ্টা বিদ্যমান। সুমিকে ফিরিয়ে আনতে হলে এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই আসফাকের কাছে, প্রয়োজনে সে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবে । আর সেই চেষ্টা করতে বাংলাদেশের কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নামকারা তরুণ সায়েন্টিস্ট রওনা হয় গহীন অজানা এক স্থানের উদ্দেশ্যে…


~


২৭ বছর পর… 


মফস্বল শহরের কাছেই ছোট একটি গ্রাম পাইকাল, এখানের সহজ সরল সকল মানুষ আসফাককে পাগল মেকানিক হিসেবেই চেনে, এই মানুষটার সারা বাড়ি ভর্তি শুধু অগোছালো বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম, যেগুলোর মাথা মুণ্ডু কিছুই বোঝে না তারা। কিন্তু এই গ্রামের মানুষগুলো খুব ভালোবাসেন আসফাক নামের পাগল মেকানিক কে। বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যাবহার করে গ্রামের মানুষের জিবিন খুব সহজ করে তুলেছে এই পাগল মেকানিক। 


আসফাকের এই গ্রামে আসার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আসফাকের পরিকল্পনা নিয়ে মাথা ঘামানোর কেউই নেই এই গ্রামে, ওদের কাছে আসফাক  একজন পাগল মেকানিক ছাড়া আর কিছুই না। 


এতটা বছর এই গ্রামে থেকে গ্রামের মানুষের সাথে বেশ সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হলেও আসফাকের এখান থেকে যাবার সময় হয়ে এসেছে, আসফাকের উদ্দেশ্য আজ প্রায় সফলের পথে, দীর্ঘ ২৭ বছর গবেষণার ফসল টাইম ট্রাভেলের যন্ত্র আজ তৈরি, আসফাক এবার ফিরে যাবে ঠিক ২৭ বছর পেছনে, সেই দিন যেদিন মর্মান্তিক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেছিল আসফাকের স্ত্রী সুমি। সেদিনের স্মৃতি আসফাকের চোখে আজও জ্বলমান, 


সুমির বাড়িতে সুমির বাবার সাথে দেখা করে আসার পথে বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে আসফাকের গাড়ি। আসফাক বেচে গেলেও সুমি বাঁচে নি। সেদিন আসফাক দুই বার করে সুমিকে বাপের বাড়ি থেকে যাবার কথা বলেছিল, কিন্তু সুমি শোনে নি। এবার এই ভুল আর করবে না আসফাক, এবার সুমিকে তার বাবার বাড়িতে রেখে আসবে সে। আর সেই সাথে চিরতরে পরিবর্তন হয়ে যাবে আসফাকের জীবন। সুমির সাথে আবার শুরু হবে আসফাকের সংসার।


ঘড়িতে ঠিক রাত ৮ টা বেজে ৪০ মিনিট, নিজের হাতে তৈরি যানে বসে সমস্ত কিছু একবার দেখে নিল আসফাক, তারপর হাতের সামনে লাল বোতামটি চেপে ধরল, সেই সাথে এক আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে গেল সে। 


~


চোখ খুলে তাকাল আসফাক, সে কতক্ষণ বেহুঁশ ছিল সেটা সে নিজেও জানে না, কিন্তু আসফাক যে সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে এসেছে এটা নিশ্চিত, নিজে এই যানে ওঠার আগে জড় বস্তু সহ কিছু প্রাণীকে অতীতে পাঠিয়েছে আসফাক, ওদের দেখে এটা নিশ্চিত হয়ে গেল সে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে মৃদু হাসল আসফাক, সে এই মুহূর্তে ২৭ বছর পূর্বের অতীতে অবস্থান করছে, আজ রাত ৯ টা ৩০ মিনিটের আগেই নিজের কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে আসফাক কে। 


ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্রুত নিজের আসল কাজের উদ্দেশ্যে রওনা করল আসফাক। 


~


সুমির বাসার নিচে গিয়ে প্রথমে নিজ গাড়ির টায়ার পানচার করল আসফাক, তারপর একটি অজানা নম্বর হতে নিজ নম্বরে কল করল সে। 


সুমির সাথে রাতের খাবার খেয়ে সুমির বাবার সাথে গল্প করছিল আসফাক, গল্পের ফাকে দুই বার আসফাক সুমিকে বলল, এই তুমি চাইলে আজ এখানে থেকে যাও, আমার কোন সমস্যা হবে না। 


আসফাকের কথায় সুমির একই উত্তর, আরে না, যাই , আজ বাসায় অনেক কাজ পড়ে আছে। সুমিকে আর কিছু বলল না আসফাক, সুমি বাড়িতে এলেই আসফাকের জন্য ভাল, একা বাড়িতে ভাল লাগে না তার। ঠিক এই সময় একটি অচেনা নম্বর হতে ফোন পেয়ে ফোনটা ধরল আসফাক, ফোনের ওপাশের কথা শুনে মুহূর্তেই ভ্রু কুঁচকে গেল তার, কেমন যেন পরিচিত একজন বয়স্ক মানুষের গলা, 


লোকটা গড়গড় করে কিছু কথা বলল, যার প্রথম কথাটা ছিল, 

“তোমার ল্যাবের পাসওয়ার্ড ***** যেটা তুমি ছাড়া কেউ যানে না, এমনকি সুমিও না। তার মানে বুঝতে পারছ আমি কে, আমি আসফাক ২৭ বছর ভবিষ্যৎ হতে ছুটে এসেছি সুমিকে বাঁচাতে। আজ রাত ৯.৩০ মিনিটে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাবে সুমি, সুতরাং সুমিকে তুমি আজ এখানেই রেখে আসবে। তুমি যদি আমার কথা বিশ্বাস না কর সেজন্য তোমার গাড়ির চাকাটা পানচার করে দিয়েছি আমি, এখন রাখি, আমার হাতে সময় কম!” 


ফোনটা কেটে যাবার পর কিছুক্ষণ একদম হতভম্বের মতন চুপ করে বসে রইল আসফাক, তারপর নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়াল সে, আসফাক কে উঠে দাড়াতেই সুমি বলল, “কি হল, দাঁড়ালে যে, কোথায় যাচ্ছ ?”

সুমির দিকে তাকাতেই কলিজা কামড়ে উঠল আসফাকের, কিছুক্ষণ আগে ফোনে বলা সেই মানুষটার কথাটা মনে হয়ে গেল তার। 


সুমির প্রশ্নে খুব দ্রুত উত্তর দিল আসফাক, “সুমি, শোন, আজ তোমাকে এখানেই থাকতে হবে, বদি ফোন করেছিল, ওর  মায়ের শরীরটা খারাপ, ওর বাসায় যেতে হবে।” 


“কি হয়েছে বদির মার…” এটুকু বলার পরেই সুমিকে থামিয়ে দিল আসফাক,  “তেমন কিছু না… আমি যাই হ্যাঁ… 

আগামীকাল ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে তোমাকে নিয়ে যাব…” 

এটুকু বলেই সুমির বাবার বাসা হতে বের হয়ে গেল আসফাক, গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল, দেখল সামনের দুটো চাকাই পানচার, নিশ্চুপ হয়ে আরও কিছুটা সময় গাড়ির সামনে দাড়িয়ে থেকে, বের হয়ে রাস্তায় এল। এদিক সেদিক তাকাল কয়েক বার। কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগের ফোনটা সম্পূর্ণ মাথা জ্যাম করে দিয়েছে। কিন্তু  লোকটা যেই পাসওয়ার্ড বলেছে সেটা সঠিক, এটা যে আসফাক ছাড়া আর কেউই জানে না সেটাও সঠিক। 


একটা সি.এন.জি ঠিক করে উঠে বসল আসফাক, দূর হতে আসফাকের দিকে বাইনুকুলার দিয়ে তাকিয়ে রইল ২৭ বছর ভবিষ্যৎ হতে আসা আসফাক নিজেই, লক্ষ্য করল আসফাকের সাথে সুমি নেই। তারমানে সুমি তার বাবার বাড়িতে থেকে গেছে। মনের মধ্যে অস্থিরতা কমে আসল আসফাকের, সে ধীরে ধীরে সঠিক সময়ে যাবার জন্য তৈরি হতে থাকল। জীবন এখন পরিবর্তন হয়ে যাবে সেই আশায়… 


~


সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারল না আসফাক, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বই গুলো বারবার করে দেখল সে, সময় ভ্রমণ কি সত্যিই সম্ভব ! যে ফোন করেছিল সে কি সত্যিই ভবিষ্যৎ হতে এসেছিল? এমন কিছু বিক্ষিপ্ত চিন্তা করতে করতে একটা সময় চোখ লেগে আসল আসফাকের। আর তারও কিছুক্ষণ পর মোবাইলের ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল তার, সুমির বাবা ফোন করেছেন, এত রাতে সুমির বাবার ফোন পেয়ে সামান্য অপ্রস্তুত হয়ে ফোন ধরল আসফাক, ওপাশের কথা শুনতেই বুক ধড়ফড় করে উঠল, 


“আসফাক… বাবা তুমি দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে আস, ঘরের সিলং ফ্যান খুলে সুমির মাথায় পড়েছে, অবস্থা ভাল না…” 

সুমির বাবার কান্না জড়িত গলা শুনে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসতে লাগল আসফাকের… 


চলবে… 


লেখকঃ Sahel Rahman