Wednesday, June 30, 2021

শুভ্রা নিলাঞ্জনা'র কবিতা অবেলায়

কবিতা

 অবেলায়

শুভ্রা নিলাঞ্জনা


কখনো কি মনে হয়
এই আমায় ছেড়ে 
দূরে যাবে চলে ?
খুব সহজেই অন্য 
অনেক কিছুর মত করেই
আমায় যাবে ভুলে ? 
তোমার সাজানো সংসার,
হেঙ্গারে ঝুলে যাওয়া সার্ট ,
এশট্রে তে পুড়ে যাওয়া সিগারে্‌ট,
ফ্রেমে বন্দি যুগল স্মৃতি,
পুরানো রাস্তা,বেড়ে উঠা শহর, 
মুঠোফোনে পুনরায় আবেগের
দর কষাকষি, খুচরো কিছু
মিথ্যে কথন ,মান অভিমানের
দেয়ালে জুড়ে ক্ষণ স্থায়ী 
জলরঙয়ের অস্পষ্ট আঁচর। 
সবই থাকবে ঠিকঠাক
একদম আগের মতন ।।
শুধু আমায় পড়বে না মনে
এখনের মত করে 
যখন তখন।। 

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন জনি র লেখা কবিতা ঃ আমি শুধু আমি :

 

কবিতা

 আমি  শুধু  আমি  

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন জনি

আমি সেই কবি
অন্যায় শক্তি করিনা ভয়
সত্যের ভক্তি অনন্তময় , 
আমি সেই রবি
অগ্নি জ্বালি জালিমের বুকে
শান্তি ঢালি অসুখীর দুঃখে । 

আমি সেই বায়ু 
সুঘ্রাণবাহী নাসিকা রন্ধ্রে
কল্যাণ চাহি মাতি আনন্দে , 
আমি সেই আয়ূ
প্রাণের স্পন্দন প্রতি জীবে
সহসা যেটা যায়না নিভে । 

আমি সেই বীর 
দুর্বলের পক্ষে অস্ত্র  ধরি
কল্যাণের লক্ষ্যে যুদ্ধ করি , 
আমি সেই তীর
লক্ষ্যভ্রষ্ট কখনো হইনা 
কোনো অস্পষ্ট পথ লইনা । 

আমি সেই ফুল
সুগন্ধি ছড়াই অকাতরে 
সুখের বন্ধনে  পরস্পরে , 
আমি সেই মূল 
মানব হৃদয়ে অবস্থান 
 নির্ভয়ে গাই অভেদ গান । 

আমি সেই মাতা
স্নেহ মমতা হৃদয়ে জমা
শত  ক্ষমতা তবুও ক্ষমা , 
আমি সেই দাতা 
দুহাত ভরে বিলাই স'বি
প্রতি অন্তরে উজ্জ্বল ছবি । 

আমি সেই মরু
পেতে সাধ নবীর চরণ
আর্তনাদ শহীদি মরণ , 
আমি সেই তরু
অক্সিজেনের যোগানদাতা 
পরিবেশের শুদ্ধ নির্মাতা । 

আমি সেই লোক 
অন্যায়কারী শত্রু আমার 
বিরুদ্ধচারী ভণ্ড বাবার , 
আমি সেই শোক
অন্য বস্ত্র জোটে না যাদের  অস্ত্র ধরি স্বপক্ষে তাদের । 

আমি সেই জ্বালা 
নিরবধি ব্যথার আগুন 
মরা নদী কষ্টের ফাগুন , 
আমি সেই মালা
বীরত্বের গলায় জড়াই
মহত্বের করিনা বড়াই  । 

আমি সেই জনি
অন্যায়কে দেইনা প্রশ্রয়
রক্ত চক্ষুকে করিনা ভয়  ,
আমি সেই মণি
মহামূল্যবান শ্রেষ্ঠ রত্ন
গুরুজনদের করি যত্ন। 

আমি সেই ভক্ত 
আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকি
একবিন্দুও দেইনা ফাঁকি , 
আমি সেই রক্ত
প্রয়োজন হলে যাবো রণে 
শহীদ হতে বাসনা মনে । 

আমি সেই লোক 
মৃত্যুকে পরোয়া করিনা কভু
 ভরসা শুধু  মহান প্রভু , 
আমি সেই চোখ 
সবে সমান ধরার বুকে
হাসি ফুটাই দুস্থের মুখে। 

আমি সেই আশা 
শতো বিপদে হাল ছাড়ি না 
কি আছে ভাগ্যে ধার ধারিণা , 
আমি সেই ভাষা 
বজ্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলি 
নিজেকেই নিজে যাই ভুলি । 

আমি সেই মুখ 
শয়নেস্বপনে সত্যি বলি
নিশি জাগরণে ফুটে কলি , 
আমি সেই সুখ 
যাতনা রুখেই স্বপ্ন কামী 
আমার তুলনা  শুধু আমি  । 


রচনাকালঃ ০৬/১১/২০১২ ইং সোমবার ।

গ্রাম: পশ্চিম বিন্নাপাড়া ,
ডাকঘর:  দেউলকাঠি ,
থানা ও জেলা: ঝালকাঠি ।

ইমেইল:  ismail.woven@gmail.com

সৈয়দ রনো'র "মৌটুসীকে নিয়ে লেখা পত্রকাব্য- ২

 

 

মৌটুসীকে নিয়ে লেখা পত্রকাব্য- ২

*******************************

সৈয়দ রনো


প্রিয় মৌটুসী,

বন্ধ্যা সময়ে চুপসে যাওয়া হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা নিও। সময়ের নিজস্ব গণ্ডি পেরুতে পারিনি বলে তোমার তিক্ত ভাষা তির্যক মন্তব্য আমাকে ব্যথিত করেছে। তবে নিরাশার বালুচরে আশার যে ফলবান বৃক্ষ তা পঁচে যাওয়া উদ্ভিদে রূপান্তরিত হোক মোটেই চাই না। মরুর বুকে ফুটুক না ভালোবাসার বসরাই গোলাপ। ক্যাকটাস গাছটি তোমার আমার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাক না দাঁড়িয়ে। একবারের জন্যে হলেও সাহিত্যের পাতা উল্টে দেখো অন্ধ হোমার  এখনো জীবন্ত। আমি অন্ধ হলেও ইতিহাস বেত্তা নই বলে কথার ছলে না হয়  দু’একটি কথা বলছি। তবে তোমার খুব একটা বিরক্তের কারণ হতে চাই না আর।


মৌটুসী,

তুমি বলেছো বহমান মনের নদীতে পলি মাটির উর্বর আস্তর জমে জমে গড়ে উঠা প্রতিটি মোহনায় শ্যাওলা জমেছে। তিন যুগের জমানো শ্যাওলায় গজিয়ে উঠা গুল্মলতা হয়েই তো এখনো তোমাকে আগলে রেখেছি। ভালো থেকো অনেক ভালো, মাঝে মাঝেই কলাগাছ তার খোলস পাল্টিয়ে হয় যৌবনা, ঠিক তেমনি তুমি  আমৃত্যু টলমলে দেহ শৈষ্ঠব ধরে রাখবে সেই প্রত্যাশা করছি।

এক ঝাঁক তেল চিট চিটে তেলাপোকার সাথে আমার রাত্রিযাপন। ঘুম ভেঙ্গে দেখি কয়েকটি নেংটি ইঁদুর ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে আমার ডুবন্ত অহমবোধ। 

আর তুমি বিদেশের শক্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে অবশ্যই ভালো আছ? নরম কাঁদা মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া জীবনের বাস্তবতা কি তুমি একেবাইে ভুলে গেছ? তুমি কি ভুলে গেছ তোমার শাড়ির আঁচলে চুমো খেত এক গাদা কাশফুল। আবার কখনো কখনো শাড়ির আঁচল এফোঁড় ওফোঁড় করত ছেনালী মুকুল। তোমার পায়ের নখের ডগায় খেলা করতো শিশির বিন্দু। আচ্ছা সকালের দূর্বা ঘাসে ভিজিয়ে রাখা পা এখন কি পুরো শুকিয়েছে। গুগলে তোমার বাহারি রঙের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছি।


মৌটুসী,

ভাইবার অ্যাপসে পাঠানো তোমার খুদে বার্তা আমি পাঠ করেছি। শক্ত নরম লেখনি পাঠে আমি বুঝে উঠতে পারিনি তোমার বর্তমান পারিপার্শ্বিকতা। ভাষা শৈলীর উৎকর্ষতা বিশ্লেষণে মনে হলো দাম্ভিকতার সাথে দিন অতিবাহিত করছো এখন।

আমার চোখের জলের প্রবাহে গা না ভাসিয়ে তুমি অবলীলায় খেলতে পার ডুব সাতারের খেলা এটাই পত্রের মূল প্রতিপাদ্য।


প্রিয় মৌটুসী,

করোনাভাইরাস আতঙ্কের বিকট শব্দ মাথার মধ্যে ঘুরে। লকডাউনের বদলে অপেক্ষমান শাটডাউন। চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা সার্বক্ষণিক মাথার মগজে গোল্লাছুট খেলে। হয়তো মৃত্যু অপেক্ষমান। আজ আর তোমাকে বলতে দ্বিধা নেই। আমার সামান্য ভুলে তুমি আজো গাল ফুলিয়ে বসে আছ। জানো তো অভিমান লিমিটেশন অতিক্রম করলেই ঘৃণার জন্ম নেয়। যা তোমার মনের প্রশস্ত জমিনে দিন, মাস, বছর বছর ধরে চাষাবাদ করে চলছো। মেনে নিলাম আমার কোন কাজেই স্বার্থকতা নেই, তাই বলে কি আমার স্বাদ আহ্লাদ ছিকায় তুলে রাখবো। বিত্ত বৈভব পতিপত্তি সম্পদ সবার কপালে জোটে না বলেই কি তারা ভালোলাগা ভালোবাসার অনুভূতিহীন হয়ে যায়? অর্থ সম্পদের প্রয়োজনীয়তা  আছে আমি মানছি কিন্তু অর্থই কি যোগ্যতার একমাত্র পরিচায়ক? কি বলতে গিয়ে কি উল্টাপাল্টা বকছি। আসলে পারিপার্শ্বিক চাপে মাথাটা ইদানিং ঠিকঠাক কাজ করে না।


মৌটুসী,

তুমি বলেছিলে অতিমাত্রায় আবেগী হলে বাস্তবতা পালিয়ে যায়। যৌবনের প্রারম্ভে এ কথাটি পুরো বিশ্বাস না করলেও এখন দেহের ঘাম শ্রম দিয়ে উপলব্ধি করছি।

ভাববাদ আর বস্তুবাদের দ্বান্দ্বিকতায় আমার অন্তর আত্মা এখন সক্রেটিস এর হেমলোকের পেয়ালা। জীবনানন্দ দাশ যেমন জীবন দিয়ে বুঝিয়েছেন আধুনিক কবিতার ভাবার্থ। আমিও অর্থ অভাবে না হয় বুঝিয়ে দেব খোলা বাজার অর্থনীতিতে জীবনের কোন মূল্য নেই। মানুষের চেয়ে পণ্যের মূল্য তোমাদের মত ভোগবাদীদের কাছে অনেক অনেক বেশি। টাকার বদলে মানুষ খুন হয়, বেরিয়ে আসে ফিনকি দিয়ে রক্ত। কাজে কাজেই টাকার মূল্য মানুষের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।


মৌটুসী,

ভুল বুঝবার যে ধারাপাত তুমি সূচনা করেছো তা তোমাকেই শুধরাতে হবে। চাঁদের হাটে নৈরাশ্যের যে আত্ম চিৎকার মাটিও কিন্তু কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। সব কিছু ভুলে যেতে চাই। ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে না হয় ক্ষত হৃদয় নিংড়িয়ে বের করে আনবো নৈবেদ্যের ফুল। সেই ফুলে রুষ্ট দেবতাকে তুষ্ট করতে না হয় পায়ে অঞ্জলি দিবো। আসমান হতে মাটিতে খসে পড়া তারা ভুলে যায় তার অস্তিত্ব ঠিক তেমনি তুমিও ভুলে যেও ইতিহাস পরিক্রমা। দুখিনী হৃদয়ের আত্ম চিৎকারে তুমি আর অতিষ্ঠ হবে না নিশ্চিত জেনে রেখো।

Tuesday, June 29, 2021

ফজলুর রহমানের লেখা কবিতা "ধান তাবিজের বৃষ্টি"

 

কবিতা

ধান তাবিজের বৃষ্টি

ফ জ লু র  র হ মা ন

তুমি বলেছিলে বুকের ভেতর বৃষ্টি বুনতে,

আমি আকাশটাকেই নামিয়ে এনেছি বুকে।

এখন বুকের ভেতর কুয়াশা নামে,

বিস্যুদবারে মিথিকান্দা স্টেশনে শেষ ট্রেন ছেড়ে যাবার পর; 

পুবের মেঘ ডাহুকের ডানার মতো কালো হলো তা তুমি দেখো নাই।

হুইশেল শুনছিলাম আমি,

চুড়ির শব্দের মতো বৃষ্টি নেমেছিল, 

ভিজিয়েছিল তোমার নকশিকাঁথার মতো গতর।

পুষ্করিণীর স্যাঁতসেঁতে ভেজা ঘাট,

শ্যাওলা ডুবানো জলের ওপর তোমার ধান তাবিজের মতো বৃষ্টি পড়ে অনর্গল। 

কদমের সুবাস ছড়াইয়া যায় তোমার ঠোঁটে,

কোমরে জলের ঘূর্ণি ওঠে। 

মাটির হাড়িতে রাখা গোখরোর মতো জিদ তোমার শাওনের জলে ময়রার বাড়ির চিনির সরুয়া হয়ে যায়।

হেরিকেনের তেল ফুরায়, আলো কমে;

তবুও সারাবেলা ঝমঝমিয়ে নামা বৃষ্টির বোল থামে না।

আমি আসমানকে বাড়ির ছাদ করেছি,

তুমি সময় করে বৃষ্টি ঝরিও।


০৬/০৬/২০২১

সৈয়দ রনোর লেখা কবিতা "আকাশের দোলনা"




 কবিতা

আকাশের দোলনা

সৈয়দ রনো


মেঘের নীল শাড়িতে স্বপ্ন রেখেছি জমা
লাবণ্যের মসৃণতায় সুনিপুণ কারুকাজ
সুখময় হৃদয়ের সবুজ খামে ভরে পাঠিয়েছি
অব্যক্ত বেদনার স্মৃতিকথা

নদীর গ্রীবায় রেখেছি জীবনের গচ্ছিত সুখ আর 
প্রেমের পদাবলী
নির্ঘুম চোখে প্রস্ফুটিত ভোর দেখি
দেখি শিশিরের সূর্যলাপ

শুধু দেখো না তুমি
দেখো না বুনো হাঁসের কষ্ট জ্বালা
তাই তো অথৈ জলে ভেসে চলে ক্লান্ত বিকেল 

স্বপ্নের শব্দাবলীর জোতসই বুনটে
লিখে রাখি তোমার নাম
মেঘের নীল পাড় শাড়ির আঁচলে

ঘর গেরস্থালির ফাঁকে
যে আঁচল জড়িয়েছিলে বুকে
তুলে রেখেছি স্মৃতি কথার খোলা আলমারিতে
নিরব প্রহরে এখনো শুঁকি
সে আঁচলের সুমিষ্ট ঘ্রাণ
মাখি হৃদয়ের তন্ত্রীতে

ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে
আর কতো কষ্ট দিতে জানো তুমি
আর কতো অতলান্ত ছুঁতে জানো
আর কত নিখাাঁদ গভীরে তোমার বসবাস

আমিও পূর্ণিমার এক মুঠো আলো হাতে নিয়েছি
নিয়েছি পাতাল কন্যার স্নিগ্ধতা
আলোর ঝলকে লাবণ্যময় তোমার সুমিষ্ট হাসি
মেঘের নীল পাড় শাড়ির আঁচলে
এখনো শুঁকি তোমার শরীরের  ঘ্রাণ
এখনো তোমায় খুঁজি আকাশের দোলনায়।

ফারহানা হৃদয়িনীর লেখা গান "শুণ্যতা"


 

 

 শুণ্যতা 

(গীতিকবিতা)

ফারহানা হৃদয়িনী


শিখলিনারে তুই শিখলিনা
কি করে কাদাবি সখী
কি করে হাসাবি সখী
শিখলিনারে তুই শিখলিনা।।
জীবনেরই শূণ্য ঘরে,  
কি দিয়ে যে পূণ্য ভরে
বুঝবিনারে তুই, সখী বুঝবিনারে তুই।।

জানলিনারে তুই জানলিনা
কি করে হারাবি সখী
কি করে জিতাবী সখী
জানলিনারে তুই জানলীনা।
জীবনেরই শূণ্য ঘরে,  
কি দিয়ে যে পূণ্য ভরে
বুঝবিনারে তুই, সখী বুঝবিনারে তুই।।

চিনলিনারে তুই চিনলিনা
কেবা আপন ছিলো সখী
কেবা দূরের ছিলো সখী
চিনলিনারে তুই চিনলিনা।
জীবনেরই শূণ্য ঘরে,  
কি দিয়ে যে পূণ্য ভরে
বুঝবিনারে তুই, সখী বুঝবিনারে তুই।।

রোখসানা ইয়াসমিন মনির লেখা কবিতা "তোমার জন্যে"


        
কবিতা

  তোমার জন্যে.......

 রোখসানা ইয়াসমিন মনি

 
                                                     তোমার জন্যে কত কথা লিখছি বসে দেখো,
তাইতো তোমার সকল কাব্যে পঙক্তিগুলো রেখো;
প্রিয় হয়ে তুমি আমার শিরোনামেই আছো, 
যেমন তুমি লোহিত হয়ে রক্তকণায় বাঁচো।
তোমার জন্য দুয়ের ঠোঁটে চুমুর ঝুন ঝুনি, 
প্রিয় বলো,ভালোবাসি,চুমোয় চুমোয় শুনি। 

তোমায় পেলে সত্যি হবো গন্তব্যহীন
জীবন হবে আড়ালের এক সূক্ষ্ম দূরবীন। 
শোনো প্রিয় সহজ কথায় একটি কথা বলি
ভালোবাসি সত্য ছাড়া জানেনা মন বোল-ই। 
তোমার জন্যে এক নিমিষেই সাবলীল এই প্রেম, 
তোমার জন্যে অন্তরজুড়ে সাত স্বর্গেরই হেম। 

তোমার জন্যে সবই আমার যেমন বাঁচা মরা! 
তোমার জন্য  অকারণেই  কথা তৈরি করা। 
তোমার জন্যে এই পৃথিবীর উত্তাপ নিই  যে বুকে, 
তোমার জন্যই খাঁ-খাঁ মাঠে মরি আবার ধুঁকে। 

তোমার জন্যেই বাড়ছে গরম জ্যেষ্ঠে পুড়ছে মাঠ, 
তোমার জন্যে খাঁ-খাঁ করছে এই হৃদয়ের বাট।


কনক চৌধুরীর লেখা ছোট গল্প: "প্রকৃত মানুষ"

 ছোট গল্প: "প্রকৃত মানুষ"

লেখক: কনক চৌধুরী 


রেল স্টেশনের প্লাটফর্মের অদুরে কাঠ গোলাপ গাছের নিচে কালাম মিয়ার চায়ের দোকান। কাঠগোলাপ গাছটা অনেক পুরনো। কালাম বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দেখছে এই গাছটা।  অনেকের অনেক রকম স্মৃতি অাছে এই  গাছকে কেন্দ্র করে। কালামও  তেমন এক স্মৃতিকে অবলম্বন করে গড়ে তুলেছে এখানে এই চায়ের দোকান।কালাম মিয়ার দীর্ঘ ২৫/৩০ বছরের ব্যবসা। এখন অবশ্য দোকানদারী করা লাগেনা। অবস্থা বেশ ভালো। তা-ও ব্যবসা ছাড়ে না। লোকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে তেমন কোন সদুত্তর দিতে পারেনা।সে কেবলই । বলে, ইচ্ছে হয় তাই  করি। মানুষের কৌতুহল, তাহতে কমে না। সুযোগ  কালাম মিয়াকে খোঁচা দিয়ে বলে, কালাম, তোমার মেয়ের বিয়ে দিবা না। মেয়ের  এত নাম ডাক। এত ভাল শিল্পী।  অার তুমি চায়ের দোকান দি বসে রইছো!  কালাম এসবের তোয়াক্কা করেনা। বলে, ওসব নিয়ে ভাবি নে। যেহানে লিখা রইছে  সেহানে ঠিকই হইবো।  ঘটনাটা যেন কেমন। কালাম  মিয়ার মেয়ে যেমন গুণবতী,  অাবার ঠিক তেমনই রূপবতী। শিল্পী হিসেবে  তার কতো সুনাম। দেশ -বিদেশে কতো  প্রোগাম।  কতো টাকা। 

অার এমন একজন গুণী শিল্পীর বাবা যদি চা  ঘুঁটে, তাহলে কেমন লাগে। তাই অনেকেই ঠাট্টা  করে বলে, কালাম,  শিল্পী  বেটি তোমার নিজের মেয়ে তো?  কালাম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। চোখ-মুখ  লাল হয়ে যায়। বলে, এমন কথা কচ্চ কে? সবাই  বলে,  তোমার  মেয়ের দিকটা দেখবা না। মেয়ের এতো নাম, অার তুমি.....,। কালাম সব বোঝে। তাই স্বর নরম করে বলে, কর্ম করে খাই, চুরি তো  অার করি নে।  মানুষ তাও ছাড়েনা। বলে, মেয়ের কথা ভাবলে তোমার ঐ হিসাব ঠিক না। কালাম  অস্বস্তিতে ভোগে।  বোঝা যায় সে অপমানবোধ করছে। অার সকলের প্রশ্ন এই এক যাইগাতেই।এতই যদি অপমান বোধ,তাহলে চায়ের দোকান কেন? অবশ্য এটাও ঠিক কালাম মিয়া সস্পর্কে অনেকেই অনেক কিছু জানেনা। কারণ সে স্থানীয় লোক না। কাজের  সূত্রে  একপর্যায়ে  এলাকার বাসিন্দা।  মানুষের ধারণা কালাম মিয়ার ব্যক্তি জীবনে কোন রহস্য অাছে।

অনেক রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকলেও অাজ কালাম  মিয়ার চায়ের  দোকানে  ভীড় অনেক কম। মেঘলা অাবহাওয়ার কারণে অনকে সকাল সকাল চলে গেছে। নাহলে প্রতিদিনের মতো  একইভাবে জমজমাট অাসর থাকতো। চায়ের  কাপে উঠতো রাজনীতির ঝড়। কালাম মিয়া  খুব সজাগ। মানুষের মতি-গতি বুঝে কথা বলে। সব খরিদ্দার তার কাছে সমান। মনে মনে একটা দল পছন্দ করলেও মুখে প্রকাশ করে না। সহজভাবে বলে, ওসব  দল-মত বুঝি নে। অাদা 'র ব্যাপারী, জাহাজের  খবর রাইখ্যা কাম  নি। তারপরও রাজনীতির তর্ক-বিতর্ক নিয়ে কালাম মিয়ার খারাপ লাগে না।বেশ মজা লাগে।  এই না হলে চায়ের  দোকান।  খরিদ্দার  লক্ষী। খরিদ্দার-ই হলো দোকানের প্রাণ। তবে খরিদ্দার না থাকলে কালাম মিয়ার মনটা একেবারেই দমে যায়। কিন্তু সেটা যে কেবল ব্যবসার কারণে, এমন না। অন্য কারণ অাছে। যতোক্ষণ  লোক সমাগম,হৈ হুল্লোড়  অাছে ,ততোক্ষণ কালাম মিয়া ভালো । ফাঁকা থাকলেই কালাম মিয়ার মন খারাপ। রাজ্যের চিন্তা  এসে ভর করে। কী এত চিন্তা ? কালাম মিয়া কাউকে কিছু বলে না। কেবল বসে বসে মন খারাপ করে।  অাজ ক'দিন ধরেই কালাম মিয়া খুব অস্থিরতায় ভুগছে। মেয়েটি  এবার সত্যিই দোকান ছেড়ে দিতে বেশ চাপ দিচ্ছে।অনেকদিন বুঝিয়ে -সুঝিয়ে  রেখেছে। কিন্তু  অার হচ্ছেনা।  দোকান রাখার তো একটা যুক্তিসঙ্গত  কারণ থাকবে? সে সদুত্তর তো কালাম মিয়ার কাছে নেই।  অার যদি থাকেও, কালাম মিয়াা তো তা প্রকাশ করছে না। অথবা পারছেনা। এর পিছনে হইতো তার কোন ব্যক্তিগত  কারণ  অাছে। কোন স্পর্শকাতর  ঘটনা অাছে। যা তাকে বাধা দিচ্ছে। সেকারণে নিজের  বোধটা নিজের মধ্যেই অাঁটকে রেখেছে। তবে কালাম মিয়া এবার অনেকটায় হতাশ। বলা যায় ধৈর্য্যহারা। দীর্ঘ সময় যে সত্যটা বুকের মধ্যে গোপন রেখেছে তা প্রকাশ করতে না পারার  বেদনা যে কতো ভয়ঙ্কর  তা সে  প্রতি মুহুর্তে বুঝতে পারছে।রাত বেড়েছে। খদ্দের পাতি সবাই বিদায় নিয়েছে। কালাম মিয়ারও অার বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। 

  অন্যদিন অারও কিছুক্ষণ সে বসে। দক্ষিণগামী শেষ ট্রেনটা চলে গেলে তারপর ওঠে। এই শেষ ট্রেনের সাথেই যে রযেছে তার নাড়ী ছেড়া  সম্পর্ক। শেষ ট্রেনের হুইসেলের কম্পনের মধ্যেই যে সে  খুঁজে পাই  ব্যথাতুর জীবনের করুণ সুর। দোকান ছেড়ে উঠার অাগে কালাম মিয়া  মনে করে এবার সত্যিই সে দোকনদারী টা ছেড়ে দেবে। জীবনের বহু পথ পাড়ি  দেয়া তো হলো।  হলো নাতো কিছুই। মনের অাশা শুণ্যই  রয়ে গেলো।   দোকান বন্ধ করার সব প্রস্তুতি  শেষ।  কালাম মিয়া এবার  দোকানের ঝাঁপ নামাবে।  হঠাৎ -ই   দোকানের অদুরে দাঁড়ায় এক বড় গাড়ী।  ভিতরে এক ভদ্রমহিলা।

 ভদ্র মহিলা এদিক ওদিক তাকান।তারপর কালামের দিকে। কালাম মিয়া  কিছুই  বুঝে উঠতে পারেনা। কিছু জিজ্ঞেস  করবে সে সাহসও হয় না। অত বড় বিশাল গাড়ী।  অাবার গাড়ীর মধ্যে নামী দামী একজন। ভদ্র মহিলার বেশ বয়স অাছে। চুলে পাক  ধরেছে। তবে তা কপালের সামনের দিকে। সামান্য একগোছা লম্বা হয়ে পিছনের দিকে চলে গেছে। সিনেমায় অভিজাত  বয়স্ক  মহিলাদের যেমন থাকে ঠিক তেমন।  মহিলা ঈষারায় কালাম  মিয়াকে ডাকেন।কালাম মিয়া সামনে এলে তিনি শেষ ট্রেনের কথা জিজ্ঞেস  করেন। ট্রেন অাসার এখনো বেশ কিছুসময় বাকী অাছে শুনে কালাম মিয়ার দোকানে বসতে চান। কালাম মিয়া  হতবাক।  স্টেশনে ওয়েটিং রুম থাকতে   ভাঙ্গাচোরা  এই দোকানে  মহিলার বসতে চাওয়ার কারণ কী? তার মাথায় কিছুই ডুকেনা।  কিন্তু কেউ বসতে চেলে  অাবার নাতো বলা য়ায় না। কালাম  মিয়া  অাগা- মাথা না ভেবে মহিলাকে দোকানে নিয়ে অাসে। মহিলাকে নিয়ে কালাম মিয়া কিছুক্ষণ বেশ ঘোরের মধ্যে ছিলো। অভিজাত এক মহিলা।নামী-দামী মানুষ।  কোথায় বসাবে,  কীভাবে কথা বলবে।  একটা জড়তা তার মধ্যে কাজ করছিলো। কিন্তু না,  মহিলা সেরকম না। অনেক  সহজ অার সহমর্মি। তবে দ্বিধান্বিত। এক ধরণের ম্রীয়মান ভাব।তাকে দেখে মনে হয় তার অনেক দুঃখ।  অার  তিনি কিছু বলতে চান। ট্রেনের জন্যে অপেক্ষাটা মুখ্য বিষয় নয়। কালাম  বিষয়টা বুঝে উপযাজক  হয়ে বলে, অাপনি কী কিছু বলবেন? মহিলা  হ্যা অাবার না করে উত্তর দেন,অাসলে অামার একটা বিষয় জানার ছিলো.....। মানে অনেক অাগেকার ঘটনাতো।   "অনেক অাগেকার ঘটনা"  শব্দটা শুনে কালাম মিয়া চমকে উঠে। ব্যক্তি জীবনের অনেক অাগেকার  এক ঘটনা মনে পড়ে যায়। মনের অজান্তেই  চলে যায় অতীতে। নিবিড় ভাবে অাচ্ছন্ন হয়ে  পড়ে চিন্তা রাজ্যে।  কালামের সে দিনের সব ঘটনা  চেখের সামনে ভেসে ওঠে। কালাম তখন প্রায় বেকার।  সংসার  হয় নাই। রেল স্টেশনে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের ব্যাগ- ব্যাগেজ টেনে  যা পাই তাই  বাবা মার হাতে তুলে দেয়। এই ছিলো তার নিত্য দিনের কাজ। সকাল থেকে রাত অবধি  সে বসে থাকতো  মানুষের বোঝা টানার কাজে।  এ লাইনে  কয়টা গাড়ী যায় অাসে সব ছিলো তার মুখস্ত। সে দিনও সে বসে ছিলো শেষ গাড়ীর  অপেক্ষায়। শেষ -মেষ যদি কিছু পয়সা মেলে। তখন রাত অনেক।  গাড়ীও অনেক লেট। মেঘাচ্ছন্ন অাকাশ।  তখন যদিও বৃষ্টি অাসে নাই।  তারপরও অনেক ফাঁকা ফাঁকা।   বড় প্লাটফর্মের  এক কোণায় যেখানে  কাঠগোলাপ গাছ,তারই নিচে  বসে  অাছে এক মহিলা।। সাথে ছোট্ট এক বাচ্চা। কয়েক দিনের হবে। তোয়ালে জড়ানো। চিঁ চিঁ করে অস্ফুট স্বরে কাঁদছে। ফাঁকা যাইগা, মহিলা একা , কালাম  অাগ্রহ নিয়ে সেখানে দাঁড়ায়। মহিলা  অনুনয়ের  স্বরে বলে,ভাই অামার একটা কাজ করে দেবেন?  কালাম মুখের দিকে তাকাই, মহিলা ছোট্ট একটা  ফ্লাক্স  এগিয়ে দিয়ে বলে,

, কোনো যাইগা থেকে এতে একটু গরম পানি এনে দেবেন।  হাল্কা গরম। অামার বাচ্চার জন্যে লাগবে।  কাজটা এমন কোন কঠিন না। তারপর বাচ্চার জন্য। কালাম  চিন্তায় পড়ে। এখন গরম পানি পাবে কোথায়? একমাত্র চায়ের দোকান ছাড়া। তাও তো  সবই  বন্ধ।  একটা খোলা অাছে ,  তাও অাবার অনেক  দুরে। অগত্যা কালাম সেদিকেই পা বাড়ায়।   দুঃখের বিষয়  অনেক কষ্টে কালাম যখন গরম পানি নিয়ে ফিরে ,  তখন মহিলাকে অার পাওয়া  যায় না। কিন্তু বাচ্চাটা সেখানেই রয়েছে খুব সযত্নে। কালাম মিয়া  ভাবে, অাশে -পাশেই হইতো কোন যাইগায় রয়েছে মহিলা।এখনই চলে অাসবে। কিন্তু না। বহু সময় অপেক্ষা করেও মহিলার কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। সে অার ফিরে অাসে না। তবে একটা বিষয় কালাম মিয়ার খঁটকা লাগে। সে যখন গরম পানি নিয়ে ফিরে অাসে, তখন শেষ ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে। অাবার অল্প সময়ের মধ্যেই স্টেশন ছেড়ে চলে যায়। এমন হতে পারে,  এই সময়ের  মধ্যই মহিলা বাচ্চাকে ছেড়ে ট্রেনে  উঠে পড়ে,  অাবার  বাচ্চাকে ছেড়ে চলেও যায়। কিন্তু এর কারণ কী? কোন ভরসায় সে বাচ্চাকে ছেড়ে ট্রেনে উঠে। কোনো মা কী এটা করতে পারে?  তাহলে কী খারাপ কিছু?  নিশ্চয় কোন জটিলতা  অাছে। কালাম ভাবে, যে জটিলতায় থাক। সব জটিলতার উর্দ্ধে হচ্ছে মানবিকতা  অার মানবিক দায়িত্ববোধ।  

কালামের নিমগ্নতায় ছেদ ঘটে মহিলার ডাকে। মহিলা বলে কী এতো ভাবছেন?কালাম মহিলার দিকে তাকায়। এতোক্ষণ সে ভালোভাবে খেয়াল করে নাই। এবার তার চোখ স্থির হয়ে যায়। ভাবে ভুল দেখছে না তো?  অারো নিবিড় ভাবে দেখে।  যতো অাগের ঘটনায় হোক, নিশ্চিত হয়, ইনি-ই সেই মহিলা ,যিনি পঁচিশ- ছাব্বিশ বছর অাগে একটা নির্দয় ঘটনার সূত্রপাত  করে গেছেন। যার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী  কালাম নিজে।  কালাম খেয়াল করে মহিলা খুবই ম্রিয়মান। মুখ কাচুমাচু  করে অাছেন। হইতো কথা বলতে চান। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন সূত্র পাচ্ছেন না। অাসলে এমন ঘটনা শুরু-ই বা কেমন ভাবে করবেন। খুব অসহায় লাগছে তাকে। কালামের ভিতরে ক্ষোভ  থাকলেও  মহিলার অসহায়াত্ব দেখে খুব খারাপ লাগে তার। কালাম কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। এক পর্যায়ে মহিলা অামতা অামতা করে বলে, এবার বলি, যা বলতে চাচ্ছি?  কালাম দীর্ঘ.শ্বাস ছেড়ে বলে, না বলা লাগবে না।  কালামের সব কিছুই তো জানা।  সে নুতন করে অার কী জানবে ! তবে তার খুব জানতে ইচ্ছে করে,  মহিলা এটা কীভাবে পারলেন।  একজন মা.....?  কালামের মনের কথা মহিলা অাঁচ করে ফেলে।  সলজ্জ ভাবে বলেন, অাপনি হইতো ভাবছেন সন্তানটা.... । কিন্তু তা না।   অামাদের বিয়ে হয়েছিল  ঠিকই, কিন্তু সামাজিক  স্বীকৃতি  পাই নাই। বাধ্য হয়েই সেদিন......।   কালাম নিবিড়ভাবে  কথাগুলো শোনে।  কিন্তু অনেক প্রশ্নের জট তার মাথার  মধ্যে।  তার মধ্য থেকে  শুধু  একটাকেই সামনে এনে সে  ক্ষোভের সাথে জিজ্ঞেস  করে, তাহলে  এতদিন কোথায় ছিলেন? একবারও অাপনার সন্তানের কথা মনে হয় নাই?  হয়েছে।  তবে খোঁজ পাই নাই। ঘটনাও তো অাবার লজ্জার.....। এত খোলামেলা কাউকে  বলা.....। কালাম সুযোগ বুঝে বলে, তাহলে অাজ যে ......।  অামি যে   নিশ্চিত হয়েছি । কালাম বলে,  কী নিশ্চিত হয়েছেন? অামাকে কী চিনেছেন?। চিনার অাগেই সব কিছু  নিশ্চিত হয়ে তারপর  এসেছি। কালাম মিয়া  বিশাল বিভ্রান্তিতে পরে। অতীত এই ঘটনা সে তো কাউকে কোনদিন  বলে নাই।  কারোর জানার কথাও না। তাহলে  তার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে এই মহিলা কীভাবে নিশ্চিত হয়!  অনেক কৌতুহল অার সংশয় নিয়ে কালাম জিজ্ঞেস  করে কার কাছে, অার কেমনভাবে নিম্চিত হলেন। মহিলা অম্লান বদনে বলেন, মল্লিকার মাধ্যমে। কালাম চমকে ওঠে। মল্রিকা, মানে অামার  মেয়ের কাছে? এটা কীভাবে সম্ভব! কালাম বলে, এটা অাপনি কী বলছেন? মল্লিকার এসব জানার তো  প্রশ্নই অাসেনা। হ্যা, অাপনি ঠিকই বলেছেন। মল্লিকা এসব  জানে -ও  না।  তাহলে, অাপনি যে বলছেন...........।   সে অারেক রহস্য। কালামের বিস্ময়ের শেষ নেই। বলে, কী রহস্য বলেন। মহিলা ধীর শান্ত ভাবে বলেন, অাপনি মনে হয় জানেন না, অামি  পেশায় একজন ডাক্তার।  ঢাকা থেকে সপ্তাহে একবার অাসি অাপনাদের  এখানে  চেম্বার  করতে। বলা যায়  নিজের তাগিদেই অাসি। এখানেই যে অামার.......।  অনেক রোগীই অাসে অামার এখানে।  মল্লিকা তো সবার পরিচিত।  ও অাসে একদিন অামার এখানে।মেয়েটার অনেক সমস্যা। যাকে বলে মেয়েলী  সমস্যা। কালাম বিরক্ত হয়। বলে, রোগীর সমস্যা অামাকে বলছেন কেন? মহিলা হাসেন। বলেন,  ধৈর্য্য ধরে শুনুন। কালাম মুখের দিকে তাকায়।  মহিলা বুঝতে পারে কালামের অবস্থা। বলেন,  যা  বললে অাপনি বুঝবেন সংক্ষেপে সেটুকু  বলি। একটা টেষ্ট অাছে, যার নাম   ডি.এন.এ. টেষ্ট। এই  টেষ্টে জন্মগত বিষয়  বোঝা যায়।  অনেক  টেষ্টের মধ্যে এটাও মল্লিকাকে করতে দেই। অনেকটা সন্দেহ থেকেই। অার এ থেকেই নিশ্চিত হই  ও  অামার সেই সন্তান। তবে ওকে কিছু জানাই না।  অার মল্লিকাও কিছু জানেনা।কিন্তু ওর কাছ থেকেই  জেনে নি অনেক কিছু।  সে জন্যেই অাপনাকে বলেছিলাম  সব খোঁজ জেনেই অামি এসেছি। কালামের মুখে কোন কথা নেই। সব কিছুই তো সঠিক। মহিলাকে দেখে কালাম  সঠিক ভাবেই চিনেছে, এরপর অার কোন কথা নেই। এখন যার জিনিস  তাকে ফেরত  দিতে হবে। অার এটাই তো ছিলো কালামের একান্ত বাসনা। অার এ জন্যেই তো সে বসে অাছে জীবন- যৌবনের সব কিছু  ত্যাগ করে। সে জানতো একদিন  কেউ না কেউ অাসবেই এই বাচ্ছার খোঁজ নিতে। খোঁজ নিতে  এসে যাতে কেউ  ফিরে না যায়,সে জন্যেই দিয়েছে  চায়ের স্থায়ী  দোকান। মানুষের অনেক বিরুপ কথার পরও দোকান তোলে  নাই। এমন কী মেয়ের সম্মানের কথা ভেবেও। বিয়েপর্যন্ত করে নাই, মেয়েকে মানুষ করবে বলে। অাজ সেই  কাঙ্খিত  দিনটিই তার সামনে। তাহলে তার এমন লাগছে কেন? সন্তান হারানোর নাড়ীছেঁড়া কষ্ট কেন তাকে অাস্টে- পিস্টে জড়িয়ে  ধরেছে।কেন বুক ফাটা কান্না তাকে স্থির  থাকতে দিচ্ছেনা। মহিলা কালামের  অবস্থা বুঝতে পারে। বলে,কালাম ভাই, কী এতো ভাবছেন?  কালাম অার ঠিক থাকতে পারে না।  কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। কোন রকম নিজেকে সামলে নিয়ে ভাঙ্গা পুরনো এক বাক্স থেকে ছোট পুরনো এক ফ্লাক্স বের করে বলে, অাপা, এই দেখেন সেই  ফ্লাক্স, যা দিয়ে অাপনি অামাকে গরম পানি অানতে বলেছিলেন। অাজ এতদিন হলো  অামি  ফ্লাক্সটা  হাত ছাড়া করি নাই। যত্ন করে রেখে দিয়েছি। পঁচিশ- ছাব্বিশ  বছর অাগেকার  ছোট এই ফ্লাক্সটা  যেন জীবন্ত এক দগ্ধ স্মৃতি। স্মৃতির দহনে মহিলার হৃদয়ও কেঁপে ওঠে। তিনিও হাত দিয়ে চোখ মুছেন। প্রকৃতির কী  লীলা খেলা! একজন সন্তান ফিরে পাচ্ছেন,অারেকজন সন্তান হারাচ্ছেন। অথচ  দুজনের  চোখেই অশ্রু। মেঘাচ্ছন্ন অাকাশে পূর্ণীমার অাবছা অালো যেন এক অনন্য খেলায় মেতে ওঠে তখন।  মহিলা অাঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে উঠে যেতে  চেয়ে  বলেন, কালাম ভাই ,এবার  অাসি তাহলে। কিংকর্তব্যবিমুড় কালাম বিস্ময় নিয়ে বলে,  অাপা মেয়ে.....। ..মহিলা ধীর শান্ত অথচ দৃঢ়  ভাবে বলেন, কালাম ভাই, অামি তো মেয়ে নিতে অাসি নাই। অামি এসেছিলাম  মানবিক গুণসম্পন্ন  একজন  'প্রকৃতমানুষ' কে দেখতে।( সমাপ্ত)





Monday, June 28, 2021

নুরুন্নাহার লাভলী'র লেখা কবিতা "তুমি আসবে বলে"



 কবিতা 
 

তুমি আসবে বলে!

 নুরুন্নাহার লাভলী

চৈএ মাসের  খররৌদ্রে আমি দাড়িয়ে আছি,
তুমি আসবে বলে!
বৈশাখ মাসের কাল বৈশাখী ঝড় মাথায় করে ধরে আছি, 
তুমি আসবে বলে! 
জৈষ্ঠ্য মাসের প্রখররৌদ্র হেসে বলছে তুমি এতো ভালোবাসো!
আষাঢ় মাসের ঝর ঝর বৃষ্টি কানে দোলা দিয়ে বলছে, তুমি অপেক্ষা মান থাকো তাহলে পাবে। 
আমি প্রশ্ন করলাম কাকে?  
শ্রবণ হেসে বলে পাগলি তুমি এতো মনোমুগ্ধকর তার জন্য, 
ভাদ্র বলে আমি তোমাকেই ভালোবেসে ফেলেছি। 
আশ্বিন বলে ভালোবাস যেন সে ভালোবাসা হারিয়ে না যায়। 
কার্তিক বলে তুমি খুব রাগী মেয়ে! 
অগ্রহায়ণ বলে না, 
তুমি এতো ভালো যে তার কোন তুলোনা হয় না। 
পৌষ বলে শীতল হীম হীম কাঁপুনি তোমাকে মনে করিয়ে দেয় সেই দুষ্ট ছেলেটাকে। 
মাঘ বলে মেয়েটি খুব শীতে কষ্ট পাচ্ছে তুমি যাও, 
তার শরীরের শীতের কাঁথা হয়ে। 
ফাল্গুন বলে, মেয়েটির মনে এখন অনেক আনন্দ তুমি যাও । 
তাহলে তাকে কাছে পাবে। 
তা না হলে চিরজীবনের জন্য হারিয়ে যাবে। 
তোমাকে কখনো বলবেনা যে, এসেছে বৈশাখ  মেলায় যাব!





হাসনাত নাগাসাকির লেখা কবিতা "বাজিকর এসেগেছে"




 
 কবিতা 

বাজিকর এসেগেছে 

হাসনাত নাগাসাকি


জাদুকর এসেগেছে তোমাদের বাজির শহরে।
কামরুকামাখ্যা থেকে এসে এই ঘুমন্ত নগরীর
পাতলুন ধরে বুঝি এই দিলো টান! 

বাজিকর এসেগেছে। 
ফুটপাতে, চার রাস্তার মোড়ে,
ক্লান্ত সব জনসমাগমে - এখন নাচিয়ে যাবে বাজির তুরুপ।

হে মানুষ, এদিকে ফেরো। 
এখনই ফেরাও মুখ দেহ, মন সর্বান্তকরণে -
এখানে, আমার দিকে। 
ফেরো বলছি জন্মান্ধের দল! 
শিগগির এদিকে ফেরো - আর শোনো আমার আদেশ। 
নতুবা হেচকা টানে খুলে যাবে মুখোশ তোমার, 
আর তোমরা পরস্পর দেখে ফেলবে - 
ভেতরের 
ভূত ও শয়তানের যৌথ নৃত্য।
আর তোমরা চমকে উঠবে - পরস্পর -
পরিহিত কাপড়ের নিচে 
হা করে থাকা চিচিং ফাঁক উলঙ্গ দেখে।

বাজিকর এসেগেছে তোমাদের জাদুর শহরে।
কামরুকামাখ্যা থেকে এসে এই ঘুমন্ত নগরীর
পাতলুন ধরে বুঝি এই দিলো টান! 

- হাসনাত নাগাসাকি




 

সুলতান নীল এর লেখা কবিতা "সুপ্রভাত, প্রিয় সকাল"
















সুপ্রভাত, প্রিয় সকাল

সুলতান নীল


প্রিয় সকাল, এই বকুল কদমের দিনেও নির্লজ্জের মত আমরা অবহেলা খেয়ে বেঁচে থাকি, 
তোমরা শান বাঁধানো উঠোনে রেইনকোট পরে বৃষ্টিতে ভেজো। 
সকল সুখের ন্যায় পৃথিবীর সকল দায় শুধু আমাদের,
তোমাদের শুধু কষ্ট...

এয়ারকন্ডিশন্ড রাত গুলে খেয়ে পৃথিবীর সকল কষ্ট তোমাদেরই হয়, 
অথচ মরিচ ডলা ভাত হাফ পেট খেয়ে আমরা সুখী, হ্যা আমাদের সুখেই থাকতে হয়, 
কারণ কষ্ট একটি বিলাসদ্রব্য আর হাভাতেদের সে বিলাসীতায় অধিকার নেই। 

প্রিয় সকাল, এই বকুল কদমের দিনে দুঃখবিলাসী তোমরা রবিঠাকুরে ঝুলে ঝুলে দুঃখের ক্ষীর খেতে থাকো,
আমরা রেইনকোট পরে নির্লজ্জের মত অবহেলায় ভিজি। 
আমাদের সকল দায়ের ন্যায় পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ শুধু তোমাদের,
আমাদের শুধু সুখ সুখ আর সুখ... 





রেজাউদ্দিন স্টালিনের লেখা কবিতা "কেউ বলে দেয়নি"

 

 
  কবিতা 

কেউ বলে দেয়নি

 রেজাউদ্দিন স্টালিন

 
বৃক্ষকে কেউ বলে দেয়নি
পত্র পল্লবে বিকশিত হও
নদীকে হাত ধরে কেউ
 হাঁটতে শেখায় না
পাখির কোনো পাঠশালা নেই
যে তাকে উড়তে প্রশিক্ষণ দেবে
ডালিমকে কেউ কানে কানে বলেনি
তুমি সুন্দরের উপমা হও

যে অশ্রু আত্মাকে পবিত্র করে
এবং বৃষ্টি মাটিকে
অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে তোলে প্রজ্ঞা
সবই কি সহজাত
হৃদয়ের ভাষা বুঝতে সারাজীবন লেগে যায়
আর ভালোবাসা এক অন্তহীন শিক্ষা
যা কোনো বইতে নেই।

Uninstructed!

 RezaUddin Stalin

 No one instructed the yellow trees
to evolve with green large leaves.
The river perceives how to flow 
avoiding sea’s instructions.
There are no individual faculties 
for the lonely birds 
that will instil them to fly.
Nobody whispered to Pomegranate 
uttering ‘you are the instance of Beauty.
The Tears of nature bless my soul 
and implicate the rain at the floor 
that increases power of the panic soil.
It takes a complete life 
to cognize a divine soul.
And Love is an endless humanizing
 that really no longer in any book. 
 
Translated by: Tonusree Manji.

 

Sunday, June 27, 2021

প্রেসার কুকারে ইলিশ মাছ রান্না


#azamullah_tipu
ভাপা ইলিশ স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। এই পদ্ধতিতে এটা টাইটভাবে ঢাকনা দিয়ে অল্প আঁচে দীর্ঘ সময় নিয়ে রান্না করতে হয়। তাই প্রেসার কুকার ব্যবহার করা হলো। 
রেসিপিঃ
উপকরনঃ
১)ইলিশ মাছ ১০ পিস
২)পিঁয়াজ বাটা ৪ টেবিল চামচ,
৩)রসুন বাটা১ টেবিল চামচ,
৪)আদা বাটা ১ টেবিল চামচ,
৫)সরিষাবাটা ৩ টেবিল চামচ,
৬)কাঁচামরিচ বাটা ৪/৫টি,
৭)মরিচ গুড়া ২ চা চামচ,
৮)হলুদ গুড়া ১ চা চামচ,
৯)জিরা গুড়া ২ চা চামচ,
১০) সরিষার তেল ৫ টেবিল চামচ,
১১) লবন পরিমান মত,
১২)টমাটু কুচি বড় ১ টা,
১৩)পানি ২ কাপ,
১৩) প্রেসার কুকার
প্রস্তুত প্রনালিঃ
মাছ ধুয়ে প্রেসার কুকারে নিন। সমস্ত উপকরন দিয়ে ভাল করে মেখে প্রেসার কুকারের ঢাকনা আটকিয়ে ফুল আঁচে চুলায় দিন। দুইটা সিটি দেয়ার পর চুলার আঁচ একদম মিটিমিটি সেট করে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটস রাখুন। এর পর চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন। ১০ মিনিটস রেখে ঢাকনা খুলুন। ব্যাস হয়ে গেল প্রত্যাশিত স্পেশাল আইটেম।
গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

বিঃদ্রঃ
ভাত একটু বাড়িয়ে রান্না করতে ভুলবেননা। শর্ট পড়ার সমুহ সম্ভাবনা আছে।

 

সড়ক পরিবহন আইন -২০১৭



* ফুটপাত দিয়ে মোটর সাইকেল চালালে ৩ মাস কারাদণ্ড এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা।
* সংরক্ষিত নারী আসনে বসতে না দিয়ে কেউ ওই আসনে বসলে তাকে ১ মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
* গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে।
* সাধারণ চালকের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।
* লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।
* হেলপার বা শ্রমিক গাড়ি চালাতে পারবেন না।
* প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালালে, সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা না হলেও চালকের ২ বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। গতিসীমা লঙ্ঘন করলেও একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
* দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটলে দণ্ডবিধির আওতায় বিচার হবে।
* সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই আইনে আমলযোগ্য অপরাধে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় দায়ীকে আটক করতে পারবে।
* হেলপারেরও লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
* চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা।
* নেশা জাতীয় দ্রব্য বা মদ পান করে কেউ গাড়ি চালালে ৩ মাসের কারাদণ্ড এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা। ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালালে ৩ মাস কারাদণ্ড এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা।
* গাড়ী চালানোর সময় মোবাইল ফোন বা এরূপ কোনো ডিভাইজ ব্যবহার করলে ১ মাসের জেল বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন চালক।
* ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেপ্তার করতে পারবে।
* রাস্তায় মোট ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। বিভিন্ন অপরাধের জন্য চালকের পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।

 

সাজেক ভ্যালিতে বেড়ানোর আনন্দ

তুলোর মত শুভ্র মেঘে হারিয়ে যেতে কার না ইচ্ছে করে। সাজেক ভূপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার ৮০০ ফুট উপরে মেঘের রাজ্য সাজেকে।
সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। এর আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও যাতায়াতের সুবিধার কারণে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি জেলা দিয়েই সাজেকে আসা যাওয়া করেন। খাগড়াছড়ি সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার।
ঢাকা থেকে ঢাকা খাগড়াছড়ির বাসে করে খাগড়াছড়ি এসে সেখান থেকে বাস কিংবা মোটরসাইকেলে করে পৌঁছাতে হবে ২৩ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালায়। অথবা ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহনের বাসে চেপে সরাসরি পৌঁছানো যায় দীঘিনালা।
দীঘিনালা থেকে জিপ (স্থানীয়ভাবে চান্দের গাড়ি নামে পরিচিত) ভাড়া করে সরাসরি চলে যাওয়া যায় সাজেকে। এছাড়া মানুষ কম হলে সি.এন.জি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায় সাজেক।
দীঘিনালায় একটি সেনানিবাস রয়েছে যেখান থেকে বাকি রাস্তাটুকু যেতে হবে সামরিক বাহিনীর এসকোর্টে। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হয় সকাল ১০ টা থেকে ১১টার মধ্যে। তাই ঐ সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। সকালের এসকোর্ট মিস করলে অপেক্ষা করতে হবে বিকাল অবধি।
রাতে থাকতে চাইলে সাজেকে রয়েছে বেশ কিছু রিসোর্ট যেখানে পেতে পারেন সাধারণ ও এসি সব ধরনের রুম। তবে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চাইলে সাধারণ মানের নন এসি রুমে থাকাই ভালো। আগে থেকে রুম বুকিং দিয়ে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা এক হাজার ৮০০ ফুট। এরা লুসাই আদিবাসী। লুসাই ছাড়াও এখানে ত্রিপুরা ও পাঙখোয়াদেরও কিছু বসতি চোখে পড়ে।
সাজেকে রুইলুই পাড়ায় মূল রাস্তার দুপাশেই রয়েছে বেশকিছু খাবারের হোটেল, যেখানে খেতে পারবেন অনায়াসে। তবে লোক বেশি হলে আগে থেকে খাবারের অর্ডার করে রাখতে হয়।
সাজেক এর রুইলুই পাড়া থেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন লুসাই ঝর্ণা। স্থানীয় গাইড লুসাই ঝর্ণা বললেও এটি কমলক ঝর্ণা নামেই বেশি পরিচিত। তবে স্থানীয়দের অনেকের কাছেই এটি পিদাম তৈসা বা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিত।
সাজেক এর শেষ গ্রাম কংলক পাড়া। কংলক পাড়া সাজেকের সবচেয়ে উঁচু পাড়া । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত। কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় যেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি।
সাজেক এমন একটি জায়গা যেখানে একই দিনে প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ দেখা সম্ভব। কখনো রোদ ঝলমলে আকাশ তো কখনো বৃষ্টি, আবার কখনো হারিয়ে যাবেন মেঘের ভেতর কুয়াশার চাদরে।
 

 

 

স্ট্রোক হচ্ছে যদি এমন দেখেন

চীনের অধ্যাপকরা বলছেন যে কারো স্ট্রোক হচ্ছে যদি এমন দেখেন তাহলে আপনাকে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
যখন কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তার মস্তিষ্ক কোষ ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়।মানুষের ফার্স্ট এইড এবং বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।
যদি দেখেন স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সরানো যাবে না কারন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বিস্ফোরিত হতে পারে, এটা ভাল হবে যদি আপনার বাড়ীতে পিচকারি সুই থাকে, অথবা সেলাই সুই থাকলেও চলবে , আপনি
কয়েক সেকেন্ডের জন্য আগুনের শিখার উপরে সুচটিকে গরম করে নেবেন যাতে করে জীবাণুমুক্ত হয় এবং তারপর রোগীর হাতের 10আঙ্গুলের ডগার নরম অংশে ছোট ক্ষত করতে এটি ব্যবহার করুন।এমনভাবে করুন যাতে প্রতিটি আঙুল থেকে রক্তপাত হয়, কোন অভিজ্ঞতা বা পূর্ববর্তী জ্ঞানের প্রয়োজন হবে না ।
কেবলমাত্র নিশ্চিন্ত করুন যে আঙ্গুল থেকে যথেষ্ট পরিমাণে রক্তপাত হচ্ছে কি না।
এবার 10 আঙ্গুলের রক্তপাত চলাকালীন, কয়েক মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন দেখবেন ধীরে ধীরে রোগী সুস্থ হয়ে উঠছে।
যদি আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ বিকৃত হয় তাহলে তার কানে ম্যাসেজ করুন। এমনভাবে তার কান ম্যাসেজ করুন যাতে ম্যাসেজের ফলে তার কান লাল হয়ে যায় এবং এর অর্থ হচ্ছে কানে রক্ত পৌঁছেছে।
তারপর প্রতিটি কান থেকে দুইফোঁটা রক্ত পড়ার জন্য প্রতিটি কানের নরম অংশে সুচ ফুটান।কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন দেখবেন মুখ আর বিকৃত হবে না।আরও অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়। যতক্ষণ না রোগী মোটামুটি স্বাভাবিক হচ্ছে অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেই যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করান।
জীবন বাঁচাতে রক্তক্ষয় পদ্ধতি চীনে প্রথাগত ভাবে চিকিৎসার অংশ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এবং এই পদ্ধতির ব্যবহারিক প্রয়োগ,100% কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।
এই পোস্টটিকে লাইক করার চেয়ে শেয়ার করলে ব্যাপারটা সবাই জানতে পারবে।
দয়া করে এটিকে বেশি বেশি করে শেয়ার করুন।
যদি কেউ মনে করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর সাথে আলোচনা করতে পারেন।
মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য।
 

 

 

ঘরের পিঁপড়া তাড়ানোর কার্যকরী কৌশল


যত সুস্বাদু খাবার ততই পিঁপড়ার অংশীদারিত্ব। বিশেষ করে মিষ্টি খাবার হলে তো কথায় নেই। শখ করে অতিথিকে খাওয়াতে রেখেছেন একটি খাবার। কিন্তু পিঁপড়ার উৎপাতে তা আর সম্ভব হয় না। ঘরদোর পরিস্কার করে রাখলেও পিঁপড়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে রান্নাঘর থেকে নাছোড় পিঁপড়া যেতেই চায় না।বাজারে পিঁপড়া মারার নানারকম ওষুধ কিনতে পাওয়া যায়। তবে এগুলোর বেশিরভাগেই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। পিঁপড়ার পাশাপাশি মানুষের শরীরে ক্ষতি করে। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরের পিঁপড়া তাড়ানোর কার্যকরী কৌশল।
 

পিঁপড়া আসার রাস্তা বন্ধ

ঘর-বাড়ি পিঁপড়া এবং অন্যান্য কীট-পতঙ্গ থেকে মুক্ত রাখতে প্রতিদিন ঘর ঝাড়মোছ করতে হবে। ঘরের সব কোনা ঠিকমতো পরিষ্কার রাখতে হবে। যে রাস্তা দিয়ে পিঁপড়া ঘরে আসে সেই রাস্তা ভালো করে বন্ধ করে দিন। তাহলে পিঁপড়া আর আসবে না।
 

ঘর মোছা

পানিতে কীটনাশক লিক্যুইড মিশিয়ে প্রতিদিন দু-বার করে ঘর মুছতে পারেন। খাবারের অবশিষ্ট অবশ্যই ডাস্টবিনে ফেলুন। খাবার টেবিলে খাবার বেশিক্ষণ না রেখে ফিজে তুলে রাখুন। খাওয়ার পর বাসনপত্র সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে ফেলুন।
সাদা ভিনেগার
সাদা ভিনেগার পিঁপড়া মারার জন্য খুব উপকারী। পানি এবং সাদা ভিনেগার সম পরিমাণে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। তারপর ঘরের বিভিন্ন কোনায় ভালো করে ছড়িয়ে দিন। পিঁপড়া দূর হবে।
 

লেবুর রস

ভিনেগারের মতো লেবুর রসও কার্যকর। স্প্রে বতলে ভরে পিঁপড়া আসার রাস্তায় স্প্রে করে দিলে পিঁপড়া আসা বন্ধ হবে।
মেন্থল তেল
মেন্থল তেল দিয়ে পিঁপড়া তাড়ানো সব চেয়ে সহজ উপায়। প্রথমে আপনার ঘর ভালোভাবে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করুন। এবার একটা কাপড়ে কয়েক ফোঁটা মেন্থল তেল নিন। মেঝেটা কাপড় দিয়ে একবার মুছে আনুন। এই মেন্থলের গন্ধ পিঁপড়ার একদমই সহ্য হয় না। তাছাড়া পরিবেশবান্ধব মেন্থলে আপনার ঘরের আলাদা আবহাওয়া দেবে।

চকের গুড়া

চকের গুঁড়া পানিতে গুলে বাড়ির দেয়াল বা ঘরের বিভিন্ন কোণে ছড়িয়ে দিন। একই কাজ আপনি বেবি পাউডার দিয়েও করতে পারেন। দেখবেন ঘরের আশেপাশ পিঁপড়া আসবে না।
ডিস ওয়াস ও বেকিং সোডা
সম পরিমাণে ডিস ওয়াস এবং বেকিং সোডা সামান্য পানিতে গুলে নিতে হবে। এবার যে দিক দিয়ে পিঁপড়া ঘরে প্রবেশ করে সেদিকে স্প্রে করে দিন। এটি পিঁপড়া তাড়ানোর উত্তম উপায় হতে পারে।
 

দারুচিনি গুঁড়া

ঘরের যে সব জায়গায় বেশি পিঁপড়ার উৎপাত, সেব জায়গায় ভালো করে দারুচিনি গুঁড়া ছড়িয়ে দিন। এর গন্ধ পিঁপড়া সহ্য করতে পারে না। ফলে দ্রুত জায়গা ছাড়ে।

লবন

লবন গরম পানিতে গুলে নিন। এই মিশ্রণ ঠাণ্ডা করে নিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে পিঁপড়ার সম্ভাব্য সব জায়গায় স্প্রে করুন। পিঁপড়া কাছেই আসবে না।

 

 

"শিউলি ফুলের চা"

 
আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি - "শিউলি চা"। হ্যাঁ ঠিক দেখেছেন। শিউলি চায়ের গুণাবলী আমি নিচে দিলাম। এরপর থেকে আপনারাও শুরু করে দিন এই মজার চা দিয়ে দিনটা।
শরৎ ও হেমন্তের ফুল শিউলি। এই সময়ে শিশির ভেজা সকালে গাছের তলায় ঝরে থাকা শিউলি মন ভালো করে দেয় নিমিষেই। ছোটো আকারের কমলা সাদার মিশ্রণে এই ফুলের মিষ্টি গন্ধে চারিদিক ম ম হয়ে ওঠে। আনন্দে নেচে ওঠে মন।
কেবল মিষ্টি গন্ধ আর মন ভালো করে দেওয়া রঙের জন্যই শিউলি সবার প্রিয়; তা কিন্তু নয়। এর পেছনে আরও কারণ আছে। কারণ বহু ঔষধি গুণে ভরপুর শিউলি ফুল। চলুন জেনে নেই শিউলি ফুলের উপকারিতা—
—ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে শিউলি গাছের দু-তিনটি পাতা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। মুখে দিয়ে ভালো করে চিবিয়ে যতটুকু রস পাওয়া যায় তা খেয়ে নিন। রস খেয়ে বাকি অংশ ফেলে দিন। আপনার কাশিতে যদি কফ বের হয় তবে এর চেয়ে ভালো ওষুধ বাজারে খুব বেশি নেই। এর রস যদিও অত্যন্ত তেতো প্রকৃতির, কিন্তু তা নিয়মিত খেলে কাশির তীব্রতা তো কমবেই, গায়েব হবে কফের চিহ্নও।
—সাইটিকার ব্যথা কমাতে শিউলির পাতা কার্যকর। কয়েকটি শিউলি পাতা ও আরও কয়েকটি তুলসী পাতা একসাথে পানিতে ফুটিয়ে নিন। এরপর তা ছেঁকে প্রতিদিন ১ চামচ করে সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত খান। আপনার সায়াটিকা ব্যথা থাকলে তা কমতে শুরু করবে। নিয়মিত কয়েক সপ্তাহ খেলে এই ব্যথা দূর হবে।
—প্রতিদিন সকালে চায়ের মতো এক কাপ পানিতে দু'টি শিউলি পাতা ও দু'টি তুলসী পাতা ফুটিয়ে, ছেঁকে নিয়ে তা পান করুন। এতে আপনার আর্থারাইটিসের ব্যথা কমবে।
—শিউলির চা পান করলে জ্বর কমে। শুনে অবাক হচ্ছেন? দীর্ঘস্থায়ী জ্বর কমাতে শিউলির চা পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ম্যালেরিয়ার সময় শিউলি পাতা বেটে খেলে রোগের উপসর্গগুলো কমতে শুরু করে। ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইটগুলো নষ্ট হয়, রক্তে প্লেটিলেটের সংখ্যা বাড়ে।
—শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত শিউলি ফুল ও পাতার নির্যাস খান। কারণ এতে শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ হয়।
—ব্রণ দূর করতে দারুণ কাজ করে শিউলি। কারণ শিউলিতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটারি গুণ। যা আমাদের ত্বকের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী।
—মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে? চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনার জন্য আছে শিউলি ফুল। শিউলির তেল মাথায় ব্যবহার করলে মাথায় নতুন চুল গজায়।
—আপনার যদি কারণে-অকারণে গলার আওয়াজ বসে যায় তবে আপনি শিউলি পাতার রস ২ চামচ পরিমিত মাত্রায় গরম করে দিনে দুই বার কয়েকদিন খেয়ে নিন। উপকার পাবেন।
—আপনার কি ক্রিমির সমস্যা আছে? উত্তর যদি হয় হ্যাঁ, তবে দেরী না করে শিউলি পাতার রস অল্প গরম করে নিয়মিত কয়েক দিন খান। সমস্যার সমাধান পাবেন।
—যাদের শরীরে মেদ জমে গেছে, ব্যায়াম করেও ভালো ফল পাচ্ছেন না, তাদের জন্য দারুণ খবর হলো— শিউলি গাছের ছালের চূর্ণ সকালে ও বিকালে গরম পানিতে খেলে মেদ কমে।

 

 

ছোট গল্প: ★শ্রাবণ-সন্ধ্যা★


  ছোট গল্প

শ্রাবণ-সন্ধ্যা

ফারহানা হৃদয়িনী


মনের মাঝে অনেক ব্যাথার উথাল পাথাল, সন্ধ্যা বসে বসে ভাবছে আর অনেক ব্যাথায় কেঁপে কেঁপে উঠছে। হাজারো ছেলের মধ্য শুধুমাত্র শ্রাবণকেই সে ভালো বেসেছিলো, ক্ষতি কি ছিলো যদি শ্রাবণ একটু ভালো হতো, একটু যদি হতো তার মনের মত। ছলনায় নয় সত্যিকারের প্রেমে বেঁধে রাখতো তার হৃদয় কে। সন্ধ্যার মনটাকে ভেঙে গুড়িয়ে না দিয়ে যদি অনেক অনেক ভালোবাসতো তাকে, সত্যিকারের ভালোবাসা। তবে ক্ষতি কি ছিলো বলো?
আজ সন্ধ্যার প্রথম বিবাহবার্ষিকী, শ্রাবণের সাথে বিয়ের একবছর পূর্ণ হলো আজ। মনের মাঝে অনেক স্বপ্ন ছিলো আজকের দিনটিকে ঘিরে, কত কিছু করবে কত ভালোবাসার রঙীন ফুল অকালেই ঝরে গেলো। শুধু মাত্র শ্রাবণের বিশ্বাস ঘাতকতায়।
বি বি এ পড়তে যেয়ে শ্রাবণের সাথে সন্ধ্যার প্রথম পরিচয়। সেদিন ছিলো প্রচন্ড বৃষ্টির দিন, সেই ঝুম বৃষ্টির মাঝে ক্লাস শেষ করে দুজন ফিরছিলো একসাথে, এর আগেও দুজনের কথা হয়েছে অল্প স্বল্প কিন্তু তেমন গভীর ভাবে নয়। গভীরতা ছিলো দুটি চোখের তারায় লজ্জারাঙা চাহনীর মাঝে। শ্রাবণ ছিলো ক্লাসের দূরন্ত, চটপটে, সুদর্শন আকর্ষনীয় একটি ছেলে, তার কবিতা আবৃত্তি শুনে সব মেয়েরাই তারপ্রেমে হাবুডুবু খেতো। আর সন্ধ্যা ক্লাসের শান্ত শিষ্ট লাজুক মেয়ে, হয়তো তার লাজুকতায় শ্রাবণকে সন্ধ্যার দিকে আকর্ষিত করতো। শ্রাবণ সন্ধ্যাকে নিয়ে কত চমৎকার কবিতা লিখতো আর সেগুলি আবৃত্তি করে শোনাত ক্লাসে। সব কবিতার মাঝেই থাকতো তার গভীর প্রেমের আকুলতা। এভাবেই ধীরে ধীরে সন্ধ্যার মনে শ্রাবনের ভালোবাসার গভীর বর্ষন চলতে থাকে।
সেই বৃষ্টি দিনে একসাথে পথ চলতে চলতে শ্রাবণ হঠাৎ সন্ধ্যার হাতটি চেপে ধরলো, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে একটি রিক্সা নিয়ে দুজনে গেলো নদীর ধারে। নদীর তীরটি বড় মনোরম প্রচুর গাছপালা সেখানে, ওরা দুজন একটি নৌকা ভাড়া করে উঠেবসেছিলো তাতে। সেই বৃষ্টিভেজা ক্ষণে শ্রাবণ সন্ধ্যার প্রথম ভালোবাসার স্বর্গ রচিত হলো।
মোবাইলের রিংটোনের ক্রমাগত বাজনায় সন্ধ্যার ঘুমটা ভেঙে গেলো।
ওপার থেকে শ্রাবণ বলছে এই কুঁড়ে এখনো ঘুমাচ্ছো, আজ ক্লাসে যেতে হবেনা?
সন্ধ্যা: তোমার অফিস শেষ?
(শ্রাবাণ পড়ালেখার পাশাপাশি একটি কম্পানিতে পার্টটাইম জব করে)
তাহলে আমার হোষ্টেলের সামনে থেকে আমাকে তোমার মোটর সাইকেলে উঠিয়ে নাও।
শ্রাবণ : বললেই হলো, আমাকে কি বেতন ভুক্ত কর্মচারী পেয়েছো যে বললেই আমি চলে আসবো?
সন্ধ্যা: ঠিক আছে যাও তোমার আসা লাগবেনা, আমি নিজেই যেতে পারবো। অভিমানে মন খারাপ করে সন্ধ্যা ক্লাসের উদ্দেশ্য বের হলো।
বেরিয়ে দেখে শ্রাবণ ঠিক সামনে মোটর সাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
শ্রাবণ: তুমি ডাকলে আমি আসবোনা এমন কি কখনো হতে পারে?
সন্ধ্যা: তোমাকে ডাকতে আমার বয়েই গেছে। আর তোমাকে ডাকবোনা।
শ্রাবণ: ইসরে আমার অভিমানীনি, রাগ করলে তোমাকে খুব সুন্দর দেখায়।
সন্ধ্য: হি হি হি
শ্রাবণ খুব জেদী ও একরোখা নিজে যা ভালোবোঝে সেটাই করে, সন্ধ্যার মন বুঝতে চায়না। সন্ধ্যাও ভালোবাসার খাতিরে সব মেনে নেয়। সন্ধ্যা মাত্র কিছুদিনের পরিচয়ে শ্রাবণকে আত্মার গভীরতায় ঠাঁই দিয়েছে। রাত দিন সকাল দুপুর শ্রাবণ ছাড়া সে আর কিছুই ভাবতে পারেনা। শ্রাবণ যা বলে ও তাই বিশ্বাস করে।
শ্রাবণ : এই সন্ধ্যা চলো আজ তোমাকে বিয়ে করে ফেলি।
সন্ধ্যা: এত হুট করে কাওকে না জানিয়ে বিয়ে করাটা কি ঠিক হবে?
শ্রাবণ: যদি আমাকে মন থেকে সত্যি ভালোবাসো, তবে আজ এই মুহুর্তেই বিয়ে করতে হবে।
সন্ধ্যা: এত ভালোবাসি তোমাকে তুমি বললে জীবন দিতে পারি আর বিয়ে সেটা কোন বিষয়ইনা, তবে বাবার অমতে বিয়ে করলে বাবা খুব মনে কষ্ট পাবে।
শ্রাবণ: অসব বুঝিনা, আজ এক্ষনই বিয়ে করতে হবে।
সন্ধ্যা আর কি করবে? অগত্যা রাজী হয়ে গেলো। খুব কাছেই একজন কাজীর অফিস ছিলো সেখানে যেয়েই দুজন বিয়ে করলো। শ্রাবণ বললো পরে তোমার বাবার অনুমতি নিয়ে কাবিন করে ও ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবো।
হঠাৎই সন্ধ্যা ও শ্রাবণের বিয়ে হয়ে গেলো। তারপর দুজন বহুসময় মোটর সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়ালো ঢাকা শহরের অলিগলি। শ্রাবণ গান ধরলো এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলোতো? তবুও পথ শেষে দুজন আবার হোষ্টেলে ফিরে গেলো। বাসর রাতে দুজনের কত স্বপ্নের কথা হলো। অনাগত জীবনের নান স্বপ্ন চোখে নিয়ে সন্ধ্যা ঘুমিয়ে গেলো।
এভাবেই চলছিলো দুজনের কত রঙের কল্পনা আর বাস্তবের স্বপ্নবোনা। শ্রাবণ সারাদিন সন্ধ্যাকে ফোন করতো খোঁজ খবর নিতো, নয়তো ম্যাসেজ পাঠাতো সন্ধ্যাও তেমনি শ্রাবণের প্রেমে মাতাল হয়ে থাকতো। সন্ধ্যার কাছে শ্রাবণ ছিলো দেবতার মত। সারাদিন স্বামী দেবতার আরাধনা করা আর নতুন সংসারের স্বপ্ন সাজাতেই সন্ধ্যা বিভোর হয়ে যেতো। এমনই আনন্দের পাখনা মেলে দুজনের গভীর প্রেমের ছয়টি মাস কেটে গেলো।

খুব তাড়াতাড়ি ঈদের ছুটি হয়ে যাবে তাই দুজনকেই নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে ফিরতে হবে, ওরা দুজন ঠিক করেছে বাড়িতে যেয়ে বাবাকে জানাবে, যেন দু পক্ষের গার্জিয়ানরা মিলে ওদের বিয়ের কবিনটা করে দেয়।

    সন্ধ্যা অনেক ঘুরে ঘুরে সস্তার একটি ফ্ল্যাট খুঁজে ভাড়া নিলো।  আপাতত শ্রাবণই সেখানে উঠবে। আর ঈদের পরে গার্জিয়ানদের দোয়া নিয়ে দুজনে একসাথে সেখানে থাকা শুরু করবে।

    শ্রাবণ চাকরীতে চলে যায়, আর সন্ধ্যা সারাদিন বাজারে ঘুরে ঘুরে সংসার সাজানোর টুকি টাকি জিনিস কিনে ঘর সাজিয়ে চলে। তার স্বপ্ন সাধনার সংসার সে মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়ে চলে।

সন্ধ্যা পড়ালেখার পাশাপাশি তিনটি টিউশনি করে।  সেটার টাকা দিয়েই সে সংসারের নানা জিনিস কিনে চলে।

     সন্ধ্যা: এই শ্রাবণ সামনের ঈদে আমাকে কিন্তু একটি শাড়ি কিনে দিতে হবে।

শ্রাবণ: ভালো একটি চাকরী পেলেই তোমাকে দশটি শাড়ি কিনে দিবো।

সন্ধ্যা: সাধারনই একটা কিনে দাও। হুট করে বিয়ে হলো তাই বিয়ের কোন শাড়ি হলোনা। একটা সাধারন শাড়িই কিনে দাও।

শ্রাবণ: আচ্ছা দিবো

   দিবো বলেও শ্রাবণ ঠিকই শাড়ি কেনার কথা ভুলে গেলো।

    সন্ধ্যার মনে একটু একটু অভিমান জমেছে,  সব প্রেমিকরাই তাদের প্রেমিকাকে কত কিছু গিফট করে আর ওতো এখন শ্রাবণের স্ত্রী,  সবাই না জানলেও তো ওরা দুজন জানে।  তাই শ্রাবণের উপর একটু দাবী তো সে রাখতেই পারে। তাই জোর করেই শ্রাবণের কাছ থেকে ঈদে একটা শাড়ি কিনলো।

      ইদানিং শ্রাবণ কেমন যেন একটু একটু বদলে যাচ্ছে, আগের মত আর সন্ধ্যার কাছে ফোন করেনা, সন্ধ্যার খবর নেয়না,  শুধু নানা কাজের অজুহাত দেখিয়ে সন্ধ্যাকে এড়িয়ে চলে। তবু সন্ধ্যা বিশ্বাস করে হয়তো শ্রাবণের কাজের চাপ বেড়েছে। নতুন বাসাটি সন্ধ্যার হোষ্টেল থেকে দূরে হওয়াতে দেখা সাক্ষাতটাও বেশ কমে গেছে।

       আজ একটা টিউশনিতে যেতে হবেনা, ছাত্ররা বেড়াতে গেছে তাই সন্ধ্যা ভাবলো শ্রাণের সাথে দেখা করা যায়। সেই জন্য সে শ্রাবণ কে ফোন করলো। শ্রাবণ বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে। বিজি বিজি বিজি

    সন্ধ্যা: বার বার ফোন করছে আর বিজি পাচ্ছে, সন্ধ্যার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, কি এমন জরুরী কথা হচ্ছে।  প্রচন্ড রাগ নিয়েই সে শ্রাবণের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।

 যেয়ে দেখে বাসা বন্ধ তাই সে শ্রাবণের ফ্ল্যাটের অদূরে জারুল গাছের তলায় বসে শ্রাবণের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। একটু পরেই শ্রাবণ এলো মোটর সাইকেল চালিয়ে। পেছনে বসে আছে ওর বান্ধবী অর্পা।

    অর্পার সাথে শ্রাবণের বহুদিনের বন্ধুত্ব। খুবই মডার্ণ মেয়ে সে।  তার জীবনে ছেলে বন্ধুর কোন অভাব নেই।  কিন্তু শ্রাবণের মোটর সাইকেলে চেপে তার ফ্ল্যাটের সামনে এসে নামার রহস্য ঠিক সন্ধ্যার মনোপুত হলোনা।

     শ্রাবণ হঠাৎ সন্ধ্যাকে দেখে হকচকিয়ে গেলো। সন্ধ্যা কিছু না বলেই বড় অভিমানে আর প্রচন্ডক্ষোভে সেখান থেকে চলে আসলো।

তারপর দুদিন আর ফোন করেনি শ্রাবণকে,  আর শ্রাবণও ফোন দেয়নি সন্ধ্যাকে। ইদানিং সন্ধ্যায় বেশী ফোন করে শ্রাবণকে, শ্রাবণ খুব একটা ফোন করেনা ওকে। সন্ধ্যা দুদিনের বেশী রাগ করেও থাকতে পারেনা।

     শ্রাবণের কথা বার বার মনে হচ্ছিল তাই,  ওকে ফোন দিলো। অনেকক্ষণ পর শ্রাবণ ফোন ধরলো। শ্রাবণ ওপাশ হতে বললো

শ্রাবণ: এই কুত্তা খবরদার আর কোনদিন আমাকে ফোন করবিনা। 

সন্ধ্যা: তুমি আমাকে গালি দিচ্ছো!!

      তুমি আমাকে এমন বিশ্রীভাবে গালি দিতে পারলে?

সন্ধ্যার পায়ের নীচের জমিন যেনো ভূমিকম্পে ধ্বসে গেলো।

যে মানুষটিকে যে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছে আজ তার একি ব্যাবহার। যাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসা যায় তার একটু খানি খারাপ ব্যাবহারে অন্তর ভেঙে গুড়িয়ে যায়। কি করবে সন্ধ্যা কানতে কানতে ফোন রেখে দিলো। ভাঙা মন নিয়েই দুদিন পরে ঈদ করতে বাড়ি চলে গেলো।

বাড়িতে যেয়ে অনেক মাফ চেয়ে চেয়ে ম্যাসেজ লিখে লিখে শ্রাবণকে পাঠালো তাও শ্রাবণের কোন রিপ্লাই পেলোনা। এভাবেই প্রচন্ড মন খারাপের সময় পার হয়ে গেলো, ঈদ শেষে আবার ঢাকায় ফিরে এলো।

   অনেকক্ষণ রিং বাজছে,  তাকিয়ে দেখে অর্পার ফোন, সেদিনের পর থেকে অর্পাকে সন্ধ্যার বিষের মত লাগে,  একদমই সহ্য করতে পারেনা সে। তবু ফোন ধরলো।

অর্পা: হ্যালো শ্রাবণ কেমন আছিস?

সন্ধ্যা: কেমন আর থাকতে পারি?

অর্পা: হা তোর বিষয়টা বুঝি

সন্ধ্যা: সত্যিই যদি বুঝতি তাহলে বান্ধবীর স্বামীর সাথে ঘুরে বেড়াতিনা।

অর্পা: কথা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়লো।

সন্ধ্যা: হাসছিস কেনো?

অর্পা: তোর মত বেকুব বৌ শ্রাবণের আর দু চারটি হলোনা তাই হাসছি।

সন্ধ্যা: আমার কিন্তু ভীষন রাগ হচ্ছে।

অর্পা: এত রাগের কি আছে? তুই কি শ্রাবণের কাবিন করা বৌ নাকি?

সন্ধ্যা: মানে কি?

অর্পা : শ্রাবণের সত্যিকারের বৌকে নিয়ে এসেছে দেশের বাড়ি থেকে।

সন্ধ্যা: কি বলিস এসব?

অর্পা: সত্য কথাই বলছি,  ওর ফ্ল্যাটে যেয়ে দেখ।

   প্রচন্ড ব্যাথায় কুঁকড়ে যেয়ে সন্ধ্যা ফোন কেটে দিলো। তারপর আবার শ্রাবণের অন্যান্য বন্ধুদের ফোন দিলো, জানলো ঠিক কথাই শ্রাবণ গ্রামের বাড়ি হতে বিয়ে করে ফিরেছে।  সন্ধ্যার স্বপ্ন সাধের গোছানো ফ্ল্যাটে সেই নতুন বৌকে নিয়ে উঠেছে। প্রচন্ড দুখ কষ্টে সন্ধ্যা জ্ঞান হারালো।

কেমন করে শ্রাবণ এতটা পর হয়ে গেলো ভেবেই পায়না সন্ধ্যা, এতটা নিষ্ঠুর এতটা পাষাণ মানুষ কেমন করে হয়। সন্ধ্যার পবিত্র ভালোবাসাকে শ্রাবণ কেমন করে দুপায়ে মাড়িয়ে দিতে পারলো? একটি বারও সন্ধ্যার কথা কি তার মনে পড়েনা? ওই ফ্ল্যাট যেখানে সন্ধ্যার সকল স্বপ্নের আলপনা ছড়ানো,  সেখানেই সে দিব্যি নতুন বৌকে নিয়ে বাস করছে, একবার ভুলেও সে সন্ধ্যার খবর নিলো না।

      আজ বিবাহবার্ষিকীর দিন সন্ধ্যা শ্রাবণের দেওয়া শাড়িটি পরে,  ওর ফ্ল্যাটের কাছের গাছগুলির নীচে এসে বসে আছে। আর দূর থেকে তাকিয়ে আছে তার সেই ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের মন্দিরের দিকে। যেখানে তার প্রেমের তার ভালোবাসার দেবতা বাস করে।  হয়তো সন্ধ্যার সাথে বিয়েটা শ্রাবণের কাছে পুতুল খেলার মতই ছিলো কিন্তু সন্ধ্যা তাকে হৃদয়ের গভীরে স্থান দিয়েছিলো। আজ সন্ধ্যা গোধুলী লগ্নে গাছের নীচে বসে কাঁদছে আর শ্রাবণের কথা ভাবছে, তার অনুভবের পরতে পরতে যে মানুষটি মিশে আছে তাকে সে কেমনে ভুলে যাবে? কোনদিন যেমন তার দেওয়া ভালোবাসা গুলো ভোলা সম্ভব না তেমনি তার বিশ্বাসঘাতকতাও ভোলা সম্ভব না। দুচোখ দিয়ে শুধুই ঝরে অবিরল অশ্রুর শ্রাবণ। এক জীবনের প্রেমের এই পরম পাওয়া।

   সবার জীবনের গল্পের শেষ লাইন গুলি সুন্দর হয় না, কিছু প্রশ্ন জমে থাকে জীবনের বাঁকে। আজ শ্রাবণের অশ্রুসিক্ত মনে নানা কথার আনাগোনা আর প্রচন্ড কষ্ট বুকের ভীতর দলা পাকিয়ে জমাট হয়ে আছে,  শুধু অশ্রু গুলিই গলে পড়ছে বার বার। মাথার উপরের আকাশ ঢেকে আছে লাল কৃষ্ণচূড়া আর নীল জারুলে, শ্রাবণের অশ্রুভরা চোখে লাল-নীল সব রঙ ঝাপসা লাগছে। আচ্ছা চোখের জলের কি কোন রঙ থাকতে নেই?

পদ্মা _ রুপ ও অরুপের সন্ধান লিখেছেন শাহরিয়ার জোহা পাভেল

 

পদ্মা _ রুপ ও অরুপের সন্ধান


#Shariar pavel

গঙ্গা থেকে পদ্মা হয়ে কলকাতার 'ইংরেজ সাহেব শেলী' হাজির হলে - জনপদের নাম জুটল শেলীদহ। পদ্মানসীন পদ্মা নদী একদিন বেপরোয়া হয়ে ভেঙে দিল 'শেলীর নীল কুঠির' - শেলীদহ হলো শিলাইদহ।


শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহের জমিদারি এস্টেট দেখতেন বজরায় চড়ে। 'পদ্মা' জমিদারের 'বেপর্দা বোটে' চেপে কখনো 'গড়াই' কখনো বা 'কুমার নদ' নামে নাম নিত। এই বহুরুপী পদ্মা কখনো হোত 'কালীগঙ্গা' ' কখনো বা ডাকাত ভাইয়াদের 'ডাকুয়া খাল'। তৎকালীন সময়ে এসব নদীতে পেত্নীর আনাগোনা শোনা যায় জমিদার রবি বাবুকে ঘিরে। পদ্মায় বজরার চলাচল চলতে থাকে 'কুষ্টিয়ার কুঠিবাড়ি আর কোলকাতার জমিদারবাড়ি' কখনো বা শান্তিনিকেতন - একে একে জন্ম নেয় 'স্ত্রীর পত্রের 'বিন্দু' কিংবা শেষের কবিতার 'লাবণ্য' - নষ্টনীড়ে’র চারুলতা, ‘ঘরে-বাইরে’র বিমলা, ‘চোখের বালি’র বিনোদিনী, নিরুপমা, হৈমন্তী, মৃণাল, কল্যাণী, অনিলা...


কাদম্বরী বৌদি বিযোগে একাকীত্বের অশ্রুজলে রবীন্দ্রনাথের 'শ্রী' যায় মুছে। শ্রী হীন রবীন্দ্রনাথ আজও একলা থাকেন অশ্রু নদীর সুদূর পানে…


এই অদ্ভুত ভুতুরে কালিগঙ্গায় ভেসে আসেন গুটিবসন্ত রোগী লালন সাঁই। তার মা ছিলেন তার বয়সে ছোট - পাশাপাশি শায়িত আজও। লালন দর্শনে একদিন আমেরিকান কবি এলেন গিন্সবার্গ আফটার লালন (After Lalon) নামে একটি কবিতাও রচনা করেন। ১১৬ বছর বয়সে  ১৭ অক্টোবর সেই কালী নদীর ধারে ভোর ৫টা পর্যন্ত গান-বাজনা শেষ করে  তাঁর শিষ্যদের বলেন, “আমি চলিলাম”...


সাঁইজির জন্ম ও মৃত্যু দুদিনই বড় রহস্যময় (১৭ অক্টোবর, ১৭৭৪ - ১৭ অক্টোবর, ১৮৯০) - দোল পুর্নিমা আলোয় আলোকিত.. 


এই পদ্মার পাড়ে ইংরেজি শিক্ষিত বাবু হরিনাথ মজুমদার প্রেসের ব্যবসা আর মহিলা স্কুলে মাস্টারি ছেড়ে নাম নেন 'কাঙ্গাল হরিনাথ' - গড়ে তুলেন 'চাঁদের দল নামে গানের দল - পরবর্তীতে 'সাহেব' হয়ে উঠেন  ফকির চাঁদ বাউল।


গঙ্গাশ্রী 'শ্রী হারিয়ে গঙ্গা' পরবর্তীতে পদ্মায় পড়েছে ; এবছর তাই মাছ মারা; গোসল স্নান ও পানি পান বারন.. 

শতশত বছরের উত্তাল পদ্মা আজ শান্ত; করনায় আক্রান্ত.. 


পদ্মা 'অ্যা প্যারাডাইস লস্ট টুওয়ার্ডস প্যারাডাইস'

১৫ জুন ২০২১



হাসিনা রহমানের কবিতা ঃ অনুভবে তুমি


কবিতা 

অনুভবে তুমি

হাসিনা রহমান 

অনুভবে যত চেয়েছি তোমায় মম তৃষিত মনে

আলাপন তত পেয়েছি তোমার মোর হৃদয়ের সনে।

মিশে আছো তুমি নিত্য আমার সকল কাজের মাঝে

ছায়ার কায়াতে দেখি যে তোমায় সকাল-বিকাল-সাঁঝে।

কোন ক্ষণে যে এসেছো হেথায় এত কাছে নির্জনে

বসন্ত মোরে দানিয়াছো বিরহী কোকিলের কুজনে।

চাঁদ-তারা ভরা স্নিগ্ধ আকাশ ইশারায় কাছে ডাকে

চলেছি সেথায় নিবিড় আবেগে হাতে হাত দুটি রেখে।

বনফুলের সুবাস ঝিরি ঝিরি বাতাস মিষ্টি মধুর আবেশ

নেশা জাগিয়ে উড়িয়েছে মোর রাঙা আঁচলের বেশ।

কর্ণ-কুহরে নিঃশ্বাসে তব উদ্দাম প্রেমের আহবান

বিহবল করে তোমার তনুর চিরচেনা সুবাসিত বাণ।

ইচ্ছে করে আজি এ বেলায় ছুঁয়ে দেখি তোমায়

পাছে যদি সব ফাঁকি হয়, মনে জাগে শুধু ভয়।

তার চেয়ে এই ভালো, এই বুঝি বেশ ভালো

অনুভবে তুমি থাকো চিরকাল হয়ে গোধূলীর আলো।


০১/০৫/১৮






ফারহানা হৃদয়িনীর লেখা কবিতা ঃশিহরিত বরষায়


কবিতা

শিহরিত বরষায়

 ফারহানা হৃদয়িনী

 
বর্ষার মোহনীয় রিমঝিম দিনে
বাহিরে অঝোর বারিধারা ঝরে,
ক্ষণে ক্ষণে হৃদয়ের বরিষনে,
অন্তরালে তোমাকেই মনে করে।
আমি আজ বসে হিজলের বনে
ক্লান্ত, বিষণ্ণ বিকেলে বড়ই একা,
অাক্ষেপ হাহাকার হৃদয়ের কোণে
জানিনা পাবো কি তোমার দেখা?
এই বিশাল নীল আকাশ পানে
একমুঠো স্বপ্ন চেয়ে আছি বসে,
চাতক পাখির ন্যায় দৃষ্টি হেনে
ভালোবাসার শেষ সীমানা ঘেষে।
রিমঝিম রিমঝিম সুখের শিহরণে
বৃষ্টির ফোটা যখন পড়লো হাতে,
মনে হলো এতো বৃষ্টি নয়; তনু-মনে
ছুঁয়েছ তোমারই স্পর্শের মায়াতে।
পূর্ণতা তোমার নিবিড় আলিঙ্গনে
আজকে যেন এই হৃদয়ের মাঝে,
ডুবে আছি সুখময় মধুর আলাপনে
দূরবাসী দুজনেই খুব কাছে কাছে।
তাই স্মৃতি তোমায় ডাকে মনে মনে,
তুমি চলে এসো আমার দক্ষিন দ্বারে।
এসো ভিজি তুমি-আমি শুধু দুজনে,
বর্ষা প্রেমের আকুলতায় বারে বারে।
এসো প্রিয়, এসো এই প্রিয় ক্ষণে,
অপেক্ষারত আমি দেখবো তোমায়।
জড়াবো তোমাকে হৃদয়ের বন্ধনে,
তুমি চলো এসো এই শিহরিত বর্ষায়।