Wednesday, June 30, 2021
শুভ্রা নিলাঞ্জনা'র কবিতা অবেলায়
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন জনি র লেখা কবিতা ঃ আমি শুধু আমি :
আমি শুধু আমি
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন জনি
সৈয়দ রনো'র "মৌটুসীকে নিয়ে লেখা পত্রকাব্য- ২
মৌটুসীকে নিয়ে লেখা পত্রকাব্য- ২
*******************************
সৈয়দ রনো
প্রিয় মৌটুসী,
বন্ধ্যা সময়ে চুপসে যাওয়া হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা নিও। সময়ের নিজস্ব গণ্ডি পেরুতে পারিনি বলে তোমার তিক্ত ভাষা তির্যক মন্তব্য আমাকে ব্যথিত করেছে। তবে নিরাশার বালুচরে আশার যে ফলবান বৃক্ষ তা পঁচে যাওয়া উদ্ভিদে রূপান্তরিত হোক মোটেই চাই না। মরুর বুকে ফুটুক না ভালোবাসার বসরাই গোলাপ। ক্যাকটাস গাছটি তোমার আমার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাক না দাঁড়িয়ে। একবারের জন্যে হলেও সাহিত্যের পাতা উল্টে দেখো অন্ধ হোমার এখনো জীবন্ত। আমি অন্ধ হলেও ইতিহাস বেত্তা নই বলে কথার ছলে না হয় দু’একটি কথা বলছি। তবে তোমার খুব একটা বিরক্তের কারণ হতে চাই না আর।
মৌটুসী,
তুমি বলেছো বহমান মনের নদীতে পলি মাটির উর্বর আস্তর জমে জমে গড়ে উঠা প্রতিটি মোহনায় শ্যাওলা জমেছে। তিন যুগের জমানো শ্যাওলায় গজিয়ে উঠা গুল্মলতা হয়েই তো এখনো তোমাকে আগলে রেখেছি। ভালো থেকো অনেক ভালো, মাঝে মাঝেই কলাগাছ তার খোলস পাল্টিয়ে হয় যৌবনা, ঠিক তেমনি তুমি আমৃত্যু টলমলে দেহ শৈষ্ঠব ধরে রাখবে সেই প্রত্যাশা করছি।
এক ঝাঁক তেল চিট চিটে তেলাপোকার সাথে আমার রাত্রিযাপন। ঘুম ভেঙ্গে দেখি কয়েকটি নেংটি ইঁদুর ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে আমার ডুবন্ত অহমবোধ।
আর তুমি বিদেশের শক্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে অবশ্যই ভালো আছ? নরম কাঁদা মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া জীবনের বাস্তবতা কি তুমি একেবাইে ভুলে গেছ? তুমি কি ভুলে গেছ তোমার শাড়ির আঁচলে চুমো খেত এক গাদা কাশফুল। আবার কখনো কখনো শাড়ির আঁচল এফোঁড় ওফোঁড় করত ছেনালী মুকুল। তোমার পায়ের নখের ডগায় খেলা করতো শিশির বিন্দু। আচ্ছা সকালের দূর্বা ঘাসে ভিজিয়ে রাখা পা এখন কি পুরো শুকিয়েছে। গুগলে তোমার বাহারি রঙের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
মৌটুসী,
ভাইবার অ্যাপসে পাঠানো তোমার খুদে বার্তা আমি পাঠ করেছি। শক্ত নরম লেখনি পাঠে আমি বুঝে উঠতে পারিনি তোমার বর্তমান পারিপার্শ্বিকতা। ভাষা শৈলীর উৎকর্ষতা বিশ্লেষণে মনে হলো দাম্ভিকতার সাথে দিন অতিবাহিত করছো এখন।
আমার চোখের জলের প্রবাহে গা না ভাসিয়ে তুমি অবলীলায় খেলতে পার ডুব সাতারের খেলা এটাই পত্রের মূল প্রতিপাদ্য।
প্রিয় মৌটুসী,
করোনাভাইরাস আতঙ্কের বিকট শব্দ মাথার মধ্যে ঘুরে। লকডাউনের বদলে অপেক্ষমান শাটডাউন। চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা সার্বক্ষণিক মাথার মগজে গোল্লাছুট খেলে। হয়তো মৃত্যু অপেক্ষমান। আজ আর তোমাকে বলতে দ্বিধা নেই। আমার সামান্য ভুলে তুমি আজো গাল ফুলিয়ে বসে আছ। জানো তো অভিমান লিমিটেশন অতিক্রম করলেই ঘৃণার জন্ম নেয়। যা তোমার মনের প্রশস্ত জমিনে দিন, মাস, বছর বছর ধরে চাষাবাদ করে চলছো। মেনে নিলাম আমার কোন কাজেই স্বার্থকতা নেই, তাই বলে কি আমার স্বাদ আহ্লাদ ছিকায় তুলে রাখবো। বিত্ত বৈভব পতিপত্তি সম্পদ সবার কপালে জোটে না বলেই কি তারা ভালোলাগা ভালোবাসার অনুভূতিহীন হয়ে যায়? অর্থ সম্পদের প্রয়োজনীয়তা আছে আমি মানছি কিন্তু অর্থই কি যোগ্যতার একমাত্র পরিচায়ক? কি বলতে গিয়ে কি উল্টাপাল্টা বকছি। আসলে পারিপার্শ্বিক চাপে মাথাটা ইদানিং ঠিকঠাক কাজ করে না।
মৌটুসী,
তুমি বলেছিলে অতিমাত্রায় আবেগী হলে বাস্তবতা পালিয়ে যায়। যৌবনের প্রারম্ভে এ কথাটি পুরো বিশ্বাস না করলেও এখন দেহের ঘাম শ্রম দিয়ে উপলব্ধি করছি।
ভাববাদ আর বস্তুবাদের দ্বান্দ্বিকতায় আমার অন্তর আত্মা এখন সক্রেটিস এর হেমলোকের পেয়ালা। জীবনানন্দ দাশ যেমন জীবন দিয়ে বুঝিয়েছেন আধুনিক কবিতার ভাবার্থ। আমিও অর্থ অভাবে না হয় বুঝিয়ে দেব খোলা বাজার অর্থনীতিতে জীবনের কোন মূল্য নেই। মানুষের চেয়ে পণ্যের মূল্য তোমাদের মত ভোগবাদীদের কাছে অনেক অনেক বেশি। টাকার বদলে মানুষ খুন হয়, বেরিয়ে আসে ফিনকি দিয়ে রক্ত। কাজে কাজেই টাকার মূল্য মানুষের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।
মৌটুসী,
ভুল বুঝবার যে ধারাপাত তুমি সূচনা করেছো তা তোমাকেই শুধরাতে হবে। চাঁদের হাটে নৈরাশ্যের যে আত্ম চিৎকার মাটিও কিন্তু কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। সব কিছু ভুলে যেতে চাই। ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে না হয় ক্ষত হৃদয় নিংড়িয়ে বের করে আনবো নৈবেদ্যের ফুল। সেই ফুলে রুষ্ট দেবতাকে তুষ্ট করতে না হয় পায়ে অঞ্জলি দিবো। আসমান হতে মাটিতে খসে পড়া তারা ভুলে যায় তার অস্তিত্ব ঠিক তেমনি তুমিও ভুলে যেও ইতিহাস পরিক্রমা। দুখিনী হৃদয়ের আত্ম চিৎকারে তুমি আর অতিষ্ঠ হবে না নিশ্চিত জেনে রেখো।
Tuesday, June 29, 2021
ফজলুর রহমানের লেখা কবিতা "ধান তাবিজের বৃষ্টি"
ধান তাবিজের বৃষ্টি
ফ জ লু র র হ মা ন
তুমি বলেছিলে বুকের ভেতর বৃষ্টি বুনতে,
আমি আকাশটাকেই নামিয়ে এনেছি বুকে।
এখন বুকের ভেতর কুয়াশা নামে,
বিস্যুদবারে মিথিকান্দা স্টেশনে শেষ ট্রেন ছেড়ে যাবার পর;
পুবের মেঘ ডাহুকের ডানার মতো কালো হলো তা তুমি দেখো নাই।
হুইশেল শুনছিলাম আমি,
চুড়ির শব্দের মতো বৃষ্টি নেমেছিল,
ভিজিয়েছিল তোমার নকশিকাঁথার মতো গতর।
পুষ্করিণীর স্যাঁতসেঁতে ভেজা ঘাট,
শ্যাওলা ডুবানো জলের ওপর তোমার ধান তাবিজের মতো বৃষ্টি পড়ে অনর্গল।
কদমের সুবাস ছড়াইয়া যায় তোমার ঠোঁটে,
কোমরে জলের ঘূর্ণি ওঠে।
মাটির হাড়িতে রাখা গোখরোর মতো জিদ তোমার শাওনের জলে ময়রার বাড়ির চিনির সরুয়া হয়ে যায়।
হেরিকেনের তেল ফুরায়, আলো কমে;
তবুও সারাবেলা ঝমঝমিয়ে নামা বৃষ্টির বোল থামে না।
আমি আসমানকে বাড়ির ছাদ করেছি,
তুমি সময় করে বৃষ্টি ঝরিও।
০৬/০৬/২০২১
সৈয়দ রনোর লেখা কবিতা "আকাশের দোলনা"
আকাশের দোলনা
সৈয়দ রনো
ফারহানা হৃদয়িনীর লেখা গান "শুণ্যতা"
শুণ্যতা
ফারহানা হৃদয়িনী
রোখসানা ইয়াসমিন মনির লেখা কবিতা "তোমার জন্যে"
তোমার জন্যে.......
রোখসানা ইয়াসমিন মনি
কনক চৌধুরীর লেখা ছোট গল্প: "প্রকৃত মানুষ"
ছোট গল্প: "প্রকৃত মানুষ"
লেখক: কনক চৌধুরী
রেল স্টেশনের প্লাটফর্মের অদুরে কাঠ গোলাপ গাছের নিচে কালাম মিয়ার চায়ের দোকান। কাঠগোলাপ গাছটা অনেক পুরনো। কালাম বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দেখছে এই গাছটা। অনেকের অনেক রকম স্মৃতি অাছে এই গাছকে কেন্দ্র করে। কালামও তেমন এক স্মৃতিকে অবলম্বন করে গড়ে তুলেছে এখানে এই চায়ের দোকান।কালাম মিয়ার দীর্ঘ ২৫/৩০ বছরের ব্যবসা। এখন অবশ্য দোকানদারী করা লাগেনা। অবস্থা বেশ ভালো। তা-ও ব্যবসা ছাড়ে না। লোকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে তেমন কোন সদুত্তর দিতে পারেনা।সে কেবলই । বলে, ইচ্ছে হয় তাই করি। মানুষের কৌতুহল, তাহতে কমে না। সুযোগ কালাম মিয়াকে খোঁচা দিয়ে বলে, কালাম, তোমার মেয়ের বিয়ে দিবা না। মেয়ের এত নাম ডাক। এত ভাল শিল্পী। অার তুমি চায়ের দোকান দি বসে রইছো! কালাম এসবের তোয়াক্কা করেনা। বলে, ওসব নিয়ে ভাবি নে। যেহানে লিখা রইছে সেহানে ঠিকই হইবো। ঘটনাটা যেন কেমন। কালাম মিয়ার মেয়ে যেমন গুণবতী, অাবার ঠিক তেমনই রূপবতী। শিল্পী হিসেবে তার কতো সুনাম। দেশ -বিদেশে কতো প্রোগাম। কতো টাকা।
অার এমন একজন গুণী শিল্পীর বাবা যদি চা ঘুঁটে, তাহলে কেমন লাগে। তাই অনেকেই ঠাট্টা করে বলে, কালাম, শিল্পী বেটি তোমার নিজের মেয়ে তো? কালাম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়। বলে, এমন কথা কচ্চ কে? সবাই বলে, তোমার মেয়ের দিকটা দেখবা না। মেয়ের এতো নাম, অার তুমি.....,। কালাম সব বোঝে। তাই স্বর নরম করে বলে, কর্ম করে খাই, চুরি তো অার করি নে। মানুষ তাও ছাড়েনা। বলে, মেয়ের কথা ভাবলে তোমার ঐ হিসাব ঠিক না। কালাম অস্বস্তিতে ভোগে। বোঝা যায় সে অপমানবোধ করছে। অার সকলের প্রশ্ন এই এক যাইগাতেই।এতই যদি অপমান বোধ,তাহলে চায়ের দোকান কেন? অবশ্য এটাও ঠিক কালাম মিয়া সস্পর্কে অনেকেই অনেক কিছু জানেনা। কারণ সে স্থানীয় লোক না। কাজের সূত্রে একপর্যায়ে এলাকার বাসিন্দা। মানুষের ধারণা কালাম মিয়ার ব্যক্তি জীবনে কোন রহস্য অাছে।
অনেক রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকলেও অাজ কালাম মিয়ার চায়ের দোকানে ভীড় অনেক কম। মেঘলা অাবহাওয়ার কারণে অনকে সকাল সকাল চলে গেছে। নাহলে প্রতিদিনের মতো একইভাবে জমজমাট অাসর থাকতো। চায়ের কাপে উঠতো রাজনীতির ঝড়। কালাম মিয়া খুব সজাগ। মানুষের মতি-গতি বুঝে কথা বলে। সব খরিদ্দার তার কাছে সমান। মনে মনে একটা দল পছন্দ করলেও মুখে প্রকাশ করে না। সহজভাবে বলে, ওসব দল-মত বুঝি নে। অাদা 'র ব্যাপারী, জাহাজের খবর রাইখ্যা কাম নি। তারপরও রাজনীতির তর্ক-বিতর্ক নিয়ে কালাম মিয়ার খারাপ লাগে না।বেশ মজা লাগে। এই না হলে চায়ের দোকান। খরিদ্দার লক্ষী। খরিদ্দার-ই হলো দোকানের প্রাণ। তবে খরিদ্দার না থাকলে কালাম মিয়ার মনটা একেবারেই দমে যায়। কিন্তু সেটা যে কেবল ব্যবসার কারণে, এমন না। অন্য কারণ অাছে। যতোক্ষণ লোক সমাগম,হৈ হুল্লোড় অাছে ,ততোক্ষণ কালাম মিয়া ভালো । ফাঁকা থাকলেই কালাম মিয়ার মন খারাপ। রাজ্যের চিন্তা এসে ভর করে। কী এত চিন্তা ? কালাম মিয়া কাউকে কিছু বলে না। কেবল বসে বসে মন খারাপ করে। অাজ ক'দিন ধরেই কালাম মিয়া খুব অস্থিরতায় ভুগছে। মেয়েটি এবার সত্যিই দোকান ছেড়ে দিতে বেশ চাপ দিচ্ছে।অনেকদিন বুঝিয়ে -সুঝিয়ে রেখেছে। কিন্তু অার হচ্ছেনা। দোকান রাখার তো একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকবে? সে সদুত্তর তো কালাম মিয়ার কাছে নেই। অার যদি থাকেও, কালাম মিয়াা তো তা প্রকাশ করছে না। অথবা পারছেনা। এর পিছনে হইতো তার কোন ব্যক্তিগত কারণ অাছে। কোন স্পর্শকাতর ঘটনা অাছে। যা তাকে বাধা দিচ্ছে। সেকারণে নিজের বোধটা নিজের মধ্যেই অাঁটকে রেখেছে। তবে কালাম মিয়া এবার অনেকটায় হতাশ। বলা যায় ধৈর্য্যহারা। দীর্ঘ সময় যে সত্যটা বুকের মধ্যে গোপন রেখেছে তা প্রকাশ করতে না পারার বেদনা যে কতো ভয়ঙ্কর তা সে প্রতি মুহুর্তে বুঝতে পারছে।রাত বেড়েছে। খদ্দের পাতি সবাই বিদায় নিয়েছে। কালাম মিয়ারও অার বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
অন্যদিন অারও কিছুক্ষণ সে বসে। দক্ষিণগামী শেষ ট্রেনটা চলে গেলে তারপর ওঠে। এই শেষ ট্রেনের সাথেই যে রযেছে তার নাড়ী ছেড়া সম্পর্ক। শেষ ট্রেনের হুইসেলের কম্পনের মধ্যেই যে সে খুঁজে পাই ব্যথাতুর জীবনের করুণ সুর। দোকান ছেড়ে উঠার অাগে কালাম মিয়া মনে করে এবার সত্যিই সে দোকনদারী টা ছেড়ে দেবে। জীবনের বহু পথ পাড়ি দেয়া তো হলো। হলো নাতো কিছুই। মনের অাশা শুণ্যই রয়ে গেলো। দোকান বন্ধ করার সব প্রস্তুতি শেষ। কালাম মিয়া এবার দোকানের ঝাঁপ নামাবে। হঠাৎ -ই দোকানের অদুরে দাঁড়ায় এক বড় গাড়ী। ভিতরে এক ভদ্রমহিলা।
ভদ্র মহিলা এদিক ওদিক তাকান।তারপর কালামের দিকে। কালাম মিয়া কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। কিছু জিজ্ঞেস করবে সে সাহসও হয় না। অত বড় বিশাল গাড়ী। অাবার গাড়ীর মধ্যে নামী দামী একজন। ভদ্র মহিলার বেশ বয়স অাছে। চুলে পাক ধরেছে। তবে তা কপালের সামনের দিকে। সামান্য একগোছা লম্বা হয়ে পিছনের দিকে চলে গেছে। সিনেমায় অভিজাত বয়স্ক মহিলাদের যেমন থাকে ঠিক তেমন। মহিলা ঈষারায় কালাম মিয়াকে ডাকেন।কালাম মিয়া সামনে এলে তিনি শেষ ট্রেনের কথা জিজ্ঞেস করেন। ট্রেন অাসার এখনো বেশ কিছুসময় বাকী অাছে শুনে কালাম মিয়ার দোকানে বসতে চান। কালাম মিয়া হতবাক। স্টেশনে ওয়েটিং রুম থাকতে ভাঙ্গাচোরা এই দোকানে মহিলার বসতে চাওয়ার কারণ কী? তার মাথায় কিছুই ডুকেনা। কিন্তু কেউ বসতে চেলে অাবার নাতো বলা য়ায় না। কালাম মিয়া অাগা- মাথা না ভেবে মহিলাকে দোকানে নিয়ে অাসে। মহিলাকে নিয়ে কালাম মিয়া কিছুক্ষণ বেশ ঘোরের মধ্যে ছিলো। অভিজাত এক মহিলা।নামী-দামী মানুষ। কোথায় বসাবে, কীভাবে কথা বলবে। একটা জড়তা তার মধ্যে কাজ করছিলো। কিন্তু না, মহিলা সেরকম না। অনেক সহজ অার সহমর্মি। তবে দ্বিধান্বিত। এক ধরণের ম্রীয়মান ভাব।তাকে দেখে মনে হয় তার অনেক দুঃখ। অার তিনি কিছু বলতে চান। ট্রেনের জন্যে অপেক্ষাটা মুখ্য বিষয় নয়। কালাম বিষয়টা বুঝে উপযাজক হয়ে বলে, অাপনি কী কিছু বলবেন? মহিলা হ্যা অাবার না করে উত্তর দেন,অাসলে অামার একটা বিষয় জানার ছিলো.....। মানে অনেক অাগেকার ঘটনাতো। "অনেক অাগেকার ঘটনা" শব্দটা শুনে কালাম মিয়া চমকে উঠে। ব্যক্তি জীবনের অনেক অাগেকার এক ঘটনা মনে পড়ে যায়। মনের অজান্তেই চলে যায় অতীতে। নিবিড় ভাবে অাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চিন্তা রাজ্যে। কালামের সে দিনের সব ঘটনা চেখের সামনে ভেসে ওঠে। কালাম তখন প্রায় বেকার। সংসার হয় নাই। রেল স্টেশনে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের ব্যাগ- ব্যাগেজ টেনে যা পাই তাই বাবা মার হাতে তুলে দেয়। এই ছিলো তার নিত্য দিনের কাজ। সকাল থেকে রাত অবধি সে বসে থাকতো মানুষের বোঝা টানার কাজে। এ লাইনে কয়টা গাড়ী যায় অাসে সব ছিলো তার মুখস্ত। সে দিনও সে বসে ছিলো শেষ গাড়ীর অপেক্ষায়। শেষ -মেষ যদি কিছু পয়সা মেলে। তখন রাত অনেক। গাড়ীও অনেক লেট। মেঘাচ্ছন্ন অাকাশ। তখন যদিও বৃষ্টি অাসে নাই। তারপরও অনেক ফাঁকা ফাঁকা। বড় প্লাটফর্মের এক কোণায় যেখানে কাঠগোলাপ গাছ,তারই নিচে বসে অাছে এক মহিলা।। সাথে ছোট্ট এক বাচ্চা। কয়েক দিনের হবে। তোয়ালে জড়ানো। চিঁ চিঁ করে অস্ফুট স্বরে কাঁদছে। ফাঁকা যাইগা, মহিলা একা , কালাম অাগ্রহ নিয়ে সেখানে দাঁড়ায়। মহিলা অনুনয়ের স্বরে বলে,ভাই অামার একটা কাজ করে দেবেন? কালাম মুখের দিকে তাকাই, মহিলা ছোট্ট একটা ফ্লাক্স এগিয়ে দিয়ে বলে,
, কোনো যাইগা থেকে এতে একটু গরম পানি এনে দেবেন। হাল্কা গরম। অামার বাচ্চার জন্যে লাগবে। কাজটা এমন কোন কঠিন না। তারপর বাচ্চার জন্য। কালাম চিন্তায় পড়ে। এখন গরম পানি পাবে কোথায়? একমাত্র চায়ের দোকান ছাড়া। তাও তো সবই বন্ধ। একটা খোলা অাছে , তাও অাবার অনেক দুরে। অগত্যা কালাম সেদিকেই পা বাড়ায়। দুঃখের বিষয় অনেক কষ্টে কালাম যখন গরম পানি নিয়ে ফিরে , তখন মহিলাকে অার পাওয়া যায় না। কিন্তু বাচ্চাটা সেখানেই রয়েছে খুব সযত্নে। কালাম মিয়া ভাবে, অাশে -পাশেই হইতো কোন যাইগায় রয়েছে মহিলা।এখনই চলে অাসবে। কিন্তু না। বহু সময় অপেক্ষা করেও মহিলার কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। সে অার ফিরে অাসে না। তবে একটা বিষয় কালাম মিয়ার খঁটকা লাগে। সে যখন গরম পানি নিয়ে ফিরে অাসে, তখন শেষ ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে। অাবার অল্প সময়ের মধ্যেই স্টেশন ছেড়ে চলে যায়। এমন হতে পারে, এই সময়ের মধ্যই মহিলা বাচ্চাকে ছেড়ে ট্রেনে উঠে পড়ে, অাবার বাচ্চাকে ছেড়ে চলেও যায়। কিন্তু এর কারণ কী? কোন ভরসায় সে বাচ্চাকে ছেড়ে ট্রেনে উঠে। কোনো মা কী এটা করতে পারে? তাহলে কী খারাপ কিছু? নিশ্চয় কোন জটিলতা অাছে। কালাম ভাবে, যে জটিলতায় থাক। সব জটিলতার উর্দ্ধে হচ্ছে মানবিকতা অার মানবিক দায়িত্ববোধ।
কালামের নিমগ্নতায় ছেদ ঘটে মহিলার ডাকে। মহিলা বলে কী এতো ভাবছেন?কালাম মহিলার দিকে তাকায়। এতোক্ষণ সে ভালোভাবে খেয়াল করে নাই। এবার তার চোখ স্থির হয়ে যায়। ভাবে ভুল দেখছে না তো? অারো নিবিড় ভাবে দেখে। যতো অাগের ঘটনায় হোক, নিশ্চিত হয়, ইনি-ই সেই মহিলা ,যিনি পঁচিশ- ছাব্বিশ বছর অাগে একটা নির্দয় ঘটনার সূত্রপাত করে গেছেন। যার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী কালাম নিজে। কালাম খেয়াল করে মহিলা খুবই ম্রিয়মান। মুখ কাচুমাচু করে অাছেন। হইতো কথা বলতে চান। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন সূত্র পাচ্ছেন না। অাসলে এমন ঘটনা শুরু-ই বা কেমন ভাবে করবেন। খুব অসহায় লাগছে তাকে। কালামের ভিতরে ক্ষোভ থাকলেও মহিলার অসহায়াত্ব দেখে খুব খারাপ লাগে তার। কালাম কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। এক পর্যায়ে মহিলা অামতা অামতা করে বলে, এবার বলি, যা বলতে চাচ্ছি? কালাম দীর্ঘ.শ্বাস ছেড়ে বলে, না বলা লাগবে না। কালামের সব কিছুই তো জানা। সে নুতন করে অার কী জানবে ! তবে তার খুব জানতে ইচ্ছে করে, মহিলা এটা কীভাবে পারলেন। একজন মা.....? কালামের মনের কথা মহিলা অাঁচ করে ফেলে। সলজ্জ ভাবে বলেন, অাপনি হইতো ভাবছেন সন্তানটা.... । কিন্তু তা না। অামাদের বিয়ে হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতি পাই নাই। বাধ্য হয়েই সেদিন......। কালাম নিবিড়ভাবে কথাগুলো শোনে। কিন্তু অনেক প্রশ্নের জট তার মাথার মধ্যে। তার মধ্য থেকে শুধু একটাকেই সামনে এনে সে ক্ষোভের সাথে জিজ্ঞেস করে, তাহলে এতদিন কোথায় ছিলেন? একবারও অাপনার সন্তানের কথা মনে হয় নাই? হয়েছে। তবে খোঁজ পাই নাই। ঘটনাও তো অাবার লজ্জার.....। এত খোলামেলা কাউকে বলা.....। কালাম সুযোগ বুঝে বলে, তাহলে অাজ যে ......। অামি যে নিশ্চিত হয়েছি । কালাম বলে, কী নিশ্চিত হয়েছেন? অামাকে কী চিনেছেন?। চিনার অাগেই সব কিছু নিশ্চিত হয়ে তারপর এসেছি। কালাম মিয়া বিশাল বিভ্রান্তিতে পরে। অতীত এই ঘটনা সে তো কাউকে কোনদিন বলে নাই। কারোর জানার কথাও না। তাহলে তার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে এই মহিলা কীভাবে নিশ্চিত হয়! অনেক কৌতুহল অার সংশয় নিয়ে কালাম জিজ্ঞেস করে কার কাছে, অার কেমনভাবে নিম্চিত হলেন। মহিলা অম্লান বদনে বলেন, মল্লিকার মাধ্যমে। কালাম চমকে ওঠে। মল্রিকা, মানে অামার মেয়ের কাছে? এটা কীভাবে সম্ভব! কালাম বলে, এটা অাপনি কী বলছেন? মল্লিকার এসব জানার তো প্রশ্নই অাসেনা। হ্যা, অাপনি ঠিকই বলেছেন। মল্লিকা এসব জানে -ও না। তাহলে, অাপনি যে বলছেন...........। সে অারেক রহস্য। কালামের বিস্ময়ের শেষ নেই। বলে, কী রহস্য বলেন। মহিলা ধীর শান্ত ভাবে বলেন, অাপনি মনে হয় জানেন না, অামি পেশায় একজন ডাক্তার। ঢাকা থেকে সপ্তাহে একবার অাসি অাপনাদের এখানে চেম্বার করতে। বলা যায় নিজের তাগিদেই অাসি। এখানেই যে অামার.......। অনেক রোগীই অাসে অামার এখানে। মল্লিকা তো সবার পরিচিত। ও অাসে একদিন অামার এখানে।মেয়েটার অনেক সমস্যা। যাকে বলে মেয়েলী সমস্যা। কালাম বিরক্ত হয়। বলে, রোগীর সমস্যা অামাকে বলছেন কেন? মহিলা হাসেন। বলেন, ধৈর্য্য ধরে শুনুন। কালাম মুখের দিকে তাকায়। মহিলা বুঝতে পারে কালামের অবস্থা। বলেন, যা বললে অাপনি বুঝবেন সংক্ষেপে সেটুকু বলি। একটা টেষ্ট অাছে, যার নাম ডি.এন.এ. টেষ্ট। এই টেষ্টে জন্মগত বিষয় বোঝা যায়। অনেক টেষ্টের মধ্যে এটাও মল্লিকাকে করতে দেই। অনেকটা সন্দেহ থেকেই। অার এ থেকেই নিশ্চিত হই ও অামার সেই সন্তান। তবে ওকে কিছু জানাই না। অার মল্লিকাও কিছু জানেনা।কিন্তু ওর কাছ থেকেই জেনে নি অনেক কিছু। সে জন্যেই অাপনাকে বলেছিলাম সব খোঁজ জেনেই অামি এসেছি। কালামের মুখে কোন কথা নেই। সব কিছুই তো সঠিক। মহিলাকে দেখে কালাম সঠিক ভাবেই চিনেছে, এরপর অার কোন কথা নেই। এখন যার জিনিস তাকে ফেরত দিতে হবে। অার এটাই তো ছিলো কালামের একান্ত বাসনা। অার এ জন্যেই তো সে বসে অাছে জীবন- যৌবনের সব কিছু ত্যাগ করে। সে জানতো একদিন কেউ না কেউ অাসবেই এই বাচ্ছার খোঁজ নিতে। খোঁজ নিতে এসে যাতে কেউ ফিরে না যায়,সে জন্যেই দিয়েছে চায়ের স্থায়ী দোকান। মানুষের অনেক বিরুপ কথার পরও দোকান তোলে নাই। এমন কী মেয়ের সম্মানের কথা ভেবেও। বিয়েপর্যন্ত করে নাই, মেয়েকে মানুষ করবে বলে। অাজ সেই কাঙ্খিত দিনটিই তার সামনে। তাহলে তার এমন লাগছে কেন? সন্তান হারানোর নাড়ীছেঁড়া কষ্ট কেন তাকে অাস্টে- পিস্টে জড়িয়ে ধরেছে।কেন বুক ফাটা কান্না তাকে স্থির থাকতে দিচ্ছেনা। মহিলা কালামের অবস্থা বুঝতে পারে। বলে,কালাম ভাই, কী এতো ভাবছেন? কালাম অার ঠিক থাকতে পারে না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। কোন রকম নিজেকে সামলে নিয়ে ভাঙ্গা পুরনো এক বাক্স থেকে ছোট পুরনো এক ফ্লাক্স বের করে বলে, অাপা, এই দেখেন সেই ফ্লাক্স, যা দিয়ে অাপনি অামাকে গরম পানি অানতে বলেছিলেন। অাজ এতদিন হলো অামি ফ্লাক্সটা হাত ছাড়া করি নাই। যত্ন করে রেখে দিয়েছি। পঁচিশ- ছাব্বিশ বছর অাগেকার ছোট এই ফ্লাক্সটা যেন জীবন্ত এক দগ্ধ স্মৃতি। স্মৃতির দহনে মহিলার হৃদয়ও কেঁপে ওঠে। তিনিও হাত দিয়ে চোখ মুছেন। প্রকৃতির কী লীলা খেলা! একজন সন্তান ফিরে পাচ্ছেন,অারেকজন সন্তান হারাচ্ছেন। অথচ দুজনের চোখেই অশ্রু। মেঘাচ্ছন্ন অাকাশে পূর্ণীমার অাবছা অালো যেন এক অনন্য খেলায় মেতে ওঠে তখন। মহিলা অাঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে উঠে যেতে চেয়ে বলেন, কালাম ভাই ,এবার অাসি তাহলে। কিংকর্তব্যবিমুড় কালাম বিস্ময় নিয়ে বলে, অাপা মেয়ে.....। ..মহিলা ধীর শান্ত অথচ দৃঢ় ভাবে বলেন, কালাম ভাই, অামি তো মেয়ে নিতে অাসি নাই। অামি এসেছিলাম মানবিক গুণসম্পন্ন একজন 'প্রকৃতমানুষ' কে দেখতে।( সমাপ্ত)
Monday, June 28, 2021
নুরুন্নাহার লাভলী'র লেখা কবিতা "তুমি আসবে বলে"
তুমি আসবে বলে!
নুরুন্নাহার লাভলী
হাসনাত নাগাসাকির লেখা কবিতা "বাজিকর এসেগেছে"
বাজিকর এসেগেছে
হাসনাত নাগাসাকি
সুলতান নীল এর লেখা কবিতা "সুপ্রভাত, প্রিয় সকাল"
সুপ্রভাত, প্রিয় সকাল
সুলতান নীল
রেজাউদ্দিন স্টালিনের লেখা কবিতা "কেউ বলে দেয়নি"
Uninstructed!
RezaUddin Stalin
Sunday, June 27, 2021
প্রেসার কুকারে ইলিশ মাছ রান্না
সড়ক পরিবহন আইন -২০১৭
সাজেক ভ্যালিতে বেড়ানোর আনন্দ
স্ট্রোক হচ্ছে যদি এমন দেখেন
ঘরের পিঁপড়া তাড়ানোর কার্যকরী কৌশল
পিঁপড়া আসার রাস্তা বন্ধ
ঘর মোছা
লেবুর রস
চকের গুড়া
দারুচিনি গুঁড়া
লবন
"শিউলি ফুলের চা"
ছোট গল্প: ★শ্রাবণ-সন্ধ্যা★
ছোট গল্প
শ্রাবণ-সন্ধ্যা
ফারহানা হৃদয়িনী
খুব তাড়াতাড়ি ঈদের ছুটি হয়ে যাবে তাই দুজনকেই নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে ফিরতে হবে, ওরা দুজন ঠিক করেছে বাড়িতে যেয়ে বাবাকে জানাবে, যেন দু পক্ষের গার্জিয়ানরা মিলে ওদের বিয়ের কবিনটা করে দেয়।
সন্ধ্যা অনেক ঘুরে ঘুরে সস্তার একটি ফ্ল্যাট খুঁজে ভাড়া নিলো। আপাতত শ্রাবণই সেখানে উঠবে। আর ঈদের পরে গার্জিয়ানদের দোয়া নিয়ে দুজনে একসাথে সেখানে থাকা শুরু করবে।
শ্রাবণ চাকরীতে চলে যায়, আর সন্ধ্যা সারাদিন বাজারে ঘুরে ঘুরে সংসার সাজানোর টুকি টাকি জিনিস কিনে ঘর সাজিয়ে চলে। তার স্বপ্ন সাধনার সংসার সে মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়ে চলে।
সন্ধ্যা পড়ালেখার পাশাপাশি তিনটি টিউশনি করে। সেটার টাকা দিয়েই সে সংসারের নানা জিনিস কিনে চলে।
সন্ধ্যা: এই শ্রাবণ সামনের ঈদে আমাকে কিন্তু একটি শাড়ি কিনে দিতে হবে।
শ্রাবণ: ভালো একটি চাকরী পেলেই তোমাকে দশটি শাড়ি কিনে দিবো।
সন্ধ্যা: সাধারনই একটা কিনে দাও। হুট করে বিয়ে হলো তাই বিয়ের কোন শাড়ি হলোনা। একটা সাধারন শাড়িই কিনে দাও।
শ্রাবণ: আচ্ছা দিবো
দিবো বলেও শ্রাবণ ঠিকই শাড়ি কেনার কথা ভুলে গেলো।
সন্ধ্যার মনে একটু একটু অভিমান জমেছে, সব প্রেমিকরাই তাদের প্রেমিকাকে কত কিছু গিফট করে আর ওতো এখন শ্রাবণের স্ত্রী, সবাই না জানলেও তো ওরা দুজন জানে। তাই শ্রাবণের উপর একটু দাবী তো সে রাখতেই পারে। তাই জোর করেই শ্রাবণের কাছ থেকে ঈদে একটা শাড়ি কিনলো।
ইদানিং শ্রাবণ কেমন যেন একটু একটু বদলে যাচ্ছে, আগের মত আর সন্ধ্যার কাছে ফোন করেনা, সন্ধ্যার খবর নেয়না, শুধু নানা কাজের অজুহাত দেখিয়ে সন্ধ্যাকে এড়িয়ে চলে। তবু সন্ধ্যা বিশ্বাস করে হয়তো শ্রাবণের কাজের চাপ বেড়েছে। নতুন বাসাটি সন্ধ্যার হোষ্টেল থেকে দূরে হওয়াতে দেখা সাক্ষাতটাও বেশ কমে গেছে।
আজ একটা টিউশনিতে যেতে হবেনা, ছাত্ররা বেড়াতে গেছে তাই সন্ধ্যা ভাবলো শ্রাণের সাথে দেখা করা যায়। সেই জন্য সে শ্রাবণ কে ফোন করলো। শ্রাবণ বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে। বিজি বিজি বিজি
সন্ধ্যা: বার বার ফোন করছে আর বিজি পাচ্ছে, সন্ধ্যার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, কি এমন জরুরী কথা হচ্ছে। প্রচন্ড রাগ নিয়েই সে শ্রাবণের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
যেয়ে দেখে বাসা বন্ধ তাই সে শ্রাবণের ফ্ল্যাটের অদূরে জারুল গাছের তলায় বসে শ্রাবণের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। একটু পরেই শ্রাবণ এলো মোটর সাইকেল চালিয়ে। পেছনে বসে আছে ওর বান্ধবী অর্পা।
অর্পার সাথে শ্রাবণের বহুদিনের বন্ধুত্ব। খুবই মডার্ণ মেয়ে সে। তার জীবনে ছেলে বন্ধুর কোন অভাব নেই। কিন্তু শ্রাবণের মোটর সাইকেলে চেপে তার ফ্ল্যাটের সামনে এসে নামার রহস্য ঠিক সন্ধ্যার মনোপুত হলোনা।
শ্রাবণ হঠাৎ সন্ধ্যাকে দেখে হকচকিয়ে গেলো। সন্ধ্যা কিছু না বলেই বড় অভিমানে আর প্রচন্ডক্ষোভে সেখান থেকে চলে আসলো।
তারপর দুদিন আর ফোন করেনি শ্রাবণকে, আর শ্রাবণও ফোন দেয়নি সন্ধ্যাকে। ইদানিং সন্ধ্যায় বেশী ফোন করে শ্রাবণকে, শ্রাবণ খুব একটা ফোন করেনা ওকে। সন্ধ্যা দুদিনের বেশী রাগ করেও থাকতে পারেনা।
শ্রাবণের কথা বার বার মনে হচ্ছিল তাই, ওকে ফোন দিলো। অনেকক্ষণ পর শ্রাবণ ফোন ধরলো। শ্রাবণ ওপাশ হতে বললো
শ্রাবণ: এই কুত্তা খবরদার আর কোনদিন আমাকে ফোন করবিনা।
সন্ধ্যা: তুমি আমাকে গালি দিচ্ছো!!
তুমি আমাকে এমন বিশ্রীভাবে গালি দিতে পারলে?
সন্ধ্যার পায়ের নীচের জমিন যেনো ভূমিকম্পে ধ্বসে গেলো।
যে মানুষটিকে যে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছে আজ তার একি ব্যাবহার। যাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসা যায় তার একটু খানি খারাপ ব্যাবহারে অন্তর ভেঙে গুড়িয়ে যায়। কি করবে সন্ধ্যা কানতে কানতে ফোন রেখে দিলো। ভাঙা মন নিয়েই দুদিন পরে ঈদ করতে বাড়ি চলে গেলো।
বাড়িতে যেয়ে অনেক মাফ চেয়ে চেয়ে ম্যাসেজ লিখে লিখে শ্রাবণকে পাঠালো তাও শ্রাবণের কোন রিপ্লাই পেলোনা। এভাবেই প্রচন্ড মন খারাপের সময় পার হয়ে গেলো, ঈদ শেষে আবার ঢাকায় ফিরে এলো।
অনেকক্ষণ রিং বাজছে, তাকিয়ে দেখে অর্পার ফোন, সেদিনের পর থেকে অর্পাকে সন্ধ্যার বিষের মত লাগে, একদমই সহ্য করতে পারেনা সে। তবু ফোন ধরলো।
অর্পা: হ্যালো শ্রাবণ কেমন আছিস?
সন্ধ্যা: কেমন আর থাকতে পারি?
অর্পা: হা তোর বিষয়টা বুঝি
সন্ধ্যা: সত্যিই যদি বুঝতি তাহলে বান্ধবীর স্বামীর সাথে ঘুরে বেড়াতিনা।
অর্পা: কথা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়লো।
সন্ধ্যা: হাসছিস কেনো?
অর্পা: তোর মত বেকুব বৌ শ্রাবণের আর দু চারটি হলোনা তাই হাসছি।
সন্ধ্যা: আমার কিন্তু ভীষন রাগ হচ্ছে।
অর্পা: এত রাগের কি আছে? তুই কি শ্রাবণের কাবিন করা বৌ নাকি?
সন্ধ্যা: মানে কি?
অর্পা : শ্রাবণের সত্যিকারের বৌকে নিয়ে এসেছে দেশের বাড়ি থেকে।
সন্ধ্যা: কি বলিস এসব?
অর্পা: সত্য কথাই বলছি, ওর ফ্ল্যাটে যেয়ে দেখ।
প্রচন্ড ব্যাথায় কুঁকড়ে যেয়ে সন্ধ্যা ফোন কেটে দিলো। তারপর আবার শ্রাবণের অন্যান্য বন্ধুদের ফোন দিলো, জানলো ঠিক কথাই শ্রাবণ গ্রামের বাড়ি হতে বিয়ে করে ফিরেছে। সন্ধ্যার স্বপ্ন সাধের গোছানো ফ্ল্যাটে সেই নতুন বৌকে নিয়ে উঠেছে। প্রচন্ড দুখ কষ্টে সন্ধ্যা জ্ঞান হারালো।
কেমন করে শ্রাবণ এতটা পর হয়ে গেলো ভেবেই পায়না সন্ধ্যা, এতটা নিষ্ঠুর এতটা পাষাণ মানুষ কেমন করে হয়। সন্ধ্যার পবিত্র ভালোবাসাকে শ্রাবণ কেমন করে দুপায়ে মাড়িয়ে দিতে পারলো? একটি বারও সন্ধ্যার কথা কি তার মনে পড়েনা? ওই ফ্ল্যাট যেখানে সন্ধ্যার সকল স্বপ্নের আলপনা ছড়ানো, সেখানেই সে দিব্যি নতুন বৌকে নিয়ে বাস করছে, একবার ভুলেও সে সন্ধ্যার খবর নিলো না।
আজ বিবাহবার্ষিকীর দিন সন্ধ্যা শ্রাবণের দেওয়া শাড়িটি পরে, ওর ফ্ল্যাটের কাছের গাছগুলির নীচে এসে বসে আছে। আর দূর থেকে তাকিয়ে আছে তার সেই ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের মন্দিরের দিকে। যেখানে তার প্রেমের তার ভালোবাসার দেবতা বাস করে। হয়তো সন্ধ্যার সাথে বিয়েটা শ্রাবণের কাছে পুতুল খেলার মতই ছিলো কিন্তু সন্ধ্যা তাকে হৃদয়ের গভীরে স্থান দিয়েছিলো। আজ সন্ধ্যা গোধুলী লগ্নে গাছের নীচে বসে কাঁদছে আর শ্রাবণের কথা ভাবছে, তার অনুভবের পরতে পরতে যে মানুষটি মিশে আছে তাকে সে কেমনে ভুলে যাবে? কোনদিন যেমন তার দেওয়া ভালোবাসা গুলো ভোলা সম্ভব না তেমনি তার বিশ্বাসঘাতকতাও ভোলা সম্ভব না। দুচোখ দিয়ে শুধুই ঝরে অবিরল অশ্রুর শ্রাবণ। এক জীবনের প্রেমের এই পরম পাওয়া।
সবার জীবনের গল্পের শেষ লাইন গুলি সুন্দর হয় না, কিছু প্রশ্ন জমে থাকে জীবনের বাঁকে। আজ শ্রাবণের অশ্রুসিক্ত মনে নানা কথার আনাগোনা আর প্রচন্ড কষ্ট বুকের ভীতর দলা পাকিয়ে জমাট হয়ে আছে, শুধু অশ্রু গুলিই গলে পড়ছে বার বার। মাথার উপরের আকাশ ঢেকে আছে লাল কৃষ্ণচূড়া আর নীল জারুলে, শ্রাবণের অশ্রুভরা চোখে লাল-নীল সব রঙ ঝাপসা লাগছে। আচ্ছা চোখের জলের কি কোন রঙ থাকতে নেই?
পদ্মা _ রুপ ও অরুপের সন্ধান লিখেছেন শাহরিয়ার জোহা পাভেল
পদ্মা _ রুপ ও অরুপের সন্ধান
#Shariar pavel
গঙ্গা থেকে পদ্মা হয়ে কলকাতার 'ইংরেজ সাহেব শেলী' হাজির হলে - জনপদের নাম জুটল শেলীদহ। পদ্মানসীন পদ্মা নদী একদিন বেপরোয়া হয়ে ভেঙে দিল 'শেলীর নীল কুঠির' - শেলীদহ হলো শিলাইদহ।
শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহের জমিদারি এস্টেট দেখতেন বজরায় চড়ে। 'পদ্মা' জমিদারের 'বেপর্দা বোটে' চেপে কখনো 'গড়াই' কখনো বা 'কুমার নদ' নামে নাম নিত। এই বহুরুপী পদ্মা কখনো হোত 'কালীগঙ্গা' ' কখনো বা ডাকাত ভাইয়াদের 'ডাকুয়া খাল'। তৎকালীন সময়ে এসব নদীতে পেত্নীর আনাগোনা শোনা যায় জমিদার রবি বাবুকে ঘিরে। পদ্মায় বজরার চলাচল চলতে থাকে 'কুষ্টিয়ার কুঠিবাড়ি আর কোলকাতার জমিদারবাড়ি' কখনো বা শান্তিনিকেতন - একে একে জন্ম নেয় 'স্ত্রীর পত্রের 'বিন্দু' কিংবা শেষের কবিতার 'লাবণ্য' - নষ্টনীড়ে’র চারুলতা, ‘ঘরে-বাইরে’র বিমলা, ‘চোখের বালি’র বিনোদিনী, নিরুপমা, হৈমন্তী, মৃণাল, কল্যাণী, অনিলা...
কাদম্বরী বৌদি বিযোগে একাকীত্বের অশ্রুজলে রবীন্দ্রনাথের 'শ্রী' যায় মুছে। শ্রী হীন রবীন্দ্রনাথ আজও একলা থাকেন অশ্রু নদীর সুদূর পানে…
এই অদ্ভুত ভুতুরে কালিগঙ্গায় ভেসে আসেন গুটিবসন্ত রোগী লালন সাঁই। তার মা ছিলেন তার বয়সে ছোট - পাশাপাশি শায়িত আজও। লালন দর্শনে একদিন আমেরিকান কবি এলেন গিন্সবার্গ আফটার লালন (After Lalon) নামে একটি কবিতাও রচনা করেন। ১১৬ বছর বয়সে ১৭ অক্টোবর সেই কালী নদীর ধারে ভোর ৫টা পর্যন্ত গান-বাজনা শেষ করে তাঁর শিষ্যদের বলেন, “আমি চলিলাম”...
সাঁইজির জন্ম ও মৃত্যু দুদিনই বড় রহস্যময় (১৭ অক্টোবর, ১৭৭৪ - ১৭ অক্টোবর, ১৮৯০) - দোল পুর্নিমা আলোয় আলোকিত..
এই পদ্মার পাড়ে ইংরেজি শিক্ষিত বাবু হরিনাথ মজুমদার প্রেসের ব্যবসা আর মহিলা স্কুলে মাস্টারি ছেড়ে নাম নেন 'কাঙ্গাল হরিনাথ' - গড়ে তুলেন 'চাঁদের দল নামে গানের দল - পরবর্তীতে 'সাহেব' হয়ে উঠেন ফকির চাঁদ বাউল।
গঙ্গাশ্রী 'শ্রী হারিয়ে গঙ্গা' পরবর্তীতে পদ্মায় পড়েছে ; এবছর তাই মাছ মারা; গোসল স্নান ও পানি পান বারন..
শতশত বছরের উত্তাল পদ্মা আজ শান্ত; করনায় আক্রান্ত..
পদ্মা 'অ্যা প্যারাডাইস লস্ট টুওয়ার্ডস প্যারাডাইস'
১৫ জুন ২০২১
হাসিনা রহমানের কবিতা ঃ অনুভবে তুমি
কবিতা
অনুভবে তুমি
হাসিনা রহমান
অনুভবে যত চেয়েছি তোমায় মম তৃষিত মনে
আলাপন তত পেয়েছি তোমার মোর হৃদয়ের সনে।
মিশে আছো তুমি নিত্য আমার সকল কাজের মাঝে
ছায়ার কায়াতে দেখি যে তোমায় সকাল-বিকাল-সাঁঝে।
কোন ক্ষণে যে এসেছো হেথায় এত কাছে নির্জনে
বসন্ত মোরে দানিয়াছো বিরহী কোকিলের কুজনে।
চাঁদ-তারা ভরা স্নিগ্ধ আকাশ ইশারায় কাছে ডাকে
চলেছি সেথায় নিবিড় আবেগে হাতে হাত দুটি রেখে।
বনফুলের সুবাস ঝিরি ঝিরি বাতাস মিষ্টি মধুর আবেশ
নেশা জাগিয়ে উড়িয়েছে মোর রাঙা আঁচলের বেশ।
কর্ণ-কুহরে নিঃশ্বাসে তব উদ্দাম প্রেমের আহবান
বিহবল করে তোমার তনুর চিরচেনা সুবাসিত বাণ।
ইচ্ছে করে আজি এ বেলায় ছুঁয়ে দেখি তোমায়
পাছে যদি সব ফাঁকি হয়, মনে জাগে শুধু ভয়।
তার চেয়ে এই ভালো, এই বুঝি বেশ ভালো
অনুভবে তুমি থাকো চিরকাল হয়ে গোধূলীর আলো।
০১/০৫/১৮